কাপ্তাই হ্রদে বিএফডিসির অভিযানেও মাছ ধরা বন্ধ করছে না চোরাই চক্র

363

॥ আলমগীর মানিক ॥
পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দাদের আমিষের চাহিদা মেটানোর অন্যতম উৎসস্থল রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে বন্ধকালীন সময়েও মাছ ধরে পাচার করছে সিন্ডিকেট চক্র। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি বছরের গত পহেলা মে থেকে সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ আহরণ ও বিপণন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অবাধে মাছ শিকার চলছে।

হ্রদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) সংস্থাটির স্বল্প জনবলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে অবাধে মাছ ধরে সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রিসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে এক শ্রেণীর অসাধু মাফিয়া ব্যবসায়ি চক্র। এতে বিপুল পরিমাণ ডিমওয়ালা মা মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে সরকার হ্রদে মাছ ধরার উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করছে তা ভেস্তে যেতে বসেছে।

এদিকে নিজেদের সামর্থনুসারে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ মাছ শিকার ও পাচারকারির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।

সংস্থাটির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, গত দেড় মাসে জব্দ করা হয় বিপুল মাছ ও মাছ ধরার সরঞ্জাম। শনিবারও জেলার নানিয়ারচর উপজেলাধীন রউফ চত্ত্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ইঞ্জিন চালিত বোট,অবৈধ কারেন্ট জাল,সুতার জালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটক করেছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ।
রাঙামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে এসব আটক করা গেলেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, এরআগে বৃহস্পতিবার কাপ্তাই হ্রদ হতে আহরিত চোরাই মাছ অটোরিকশাযোগে পাচারের সময় যুব উন্নয়ন এলাকা থেকে ১২৩ কেজি মাছ ও একটি ফ্রিজসহ শহীদুল ইসলাম নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা গেলেও অভিযানের উপস্থিতি টের পেয়ে তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। পরে আটক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মৎস্য আইনে ৩ হাজার টাকা নগদ অর্থদ- দেন রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরা। জব্দকৃত মাছগুলো নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে। অবৈধ শিকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিনই কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম।

রাঙামাটির প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত বিশাল এই কাপ্তাই হ্রদ এলাকা পাহারা দেয়ার মতো লোকবল বিএফডিসির না থাকার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানান বিএফডিসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গত ১ মে থেকে কাপ্তাই হ্রদের মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বাড়াতে চলতি বর্ষা মৌসুমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য হ্রদে সবধরণের মাছ শিকার ও আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। একই সাথে হ্রদের অভয়াশ্রমগুলোতে অবমুক্ত করা হয় প্রায় ৪৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা। এছাড়া মাছের উৎপাদন বাড়াতে বছরের পুরো সময়টাতেই কাপ্তাই হ্রদে ৯ ইঞ্চি সাইজ পর্যন্ত কার্প জাতীয় পোনামাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে।