জনবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ

496

স্টাফরিপোর্ট- ২৮ নভেম্বর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি):

বাংলাদেশে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা জনবান্ধব করার লক্ষ্যে আইনী সংস্কার ও করের বোঝা না বাড়িয়ে করের পরিধি সম্প্রসারণ ও করদাতাদের প্রনোদনা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আহরণ হচ্ছে উন্নয়নের অক্সিজেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো হচ্ছে। সবাই মিলে কর প্রদানকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশকে আরো বেশী স্বনির্ভর করা সম্ভব। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশে আয়কর আদায়ে পরিধি কাঙ্খিত লক্ষে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর কর মেলার মাধ্যমে জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করা হলেও কর ব্যবস্থাপনা এখনো পুরোপুরি জনবান্ধব বলে মনে করা হয় না। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আজ ২৮ নভেম্বর বুধবার রাজধানীর এফডিসিতে কর ব্যবস্থাপনাকে জনবান্ধব করতে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ছায়া সংসদের আদলে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মেম্বার জিয়া উদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি অংশগ্রহণ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এবারের কর মেলায় সফল হয়েছে। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মেলায় শতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে প্রমান করেছে কর ব্যবস্থাপনা দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের ছোট্ট একটা দেশে অনেক লোককে ম্যানেজ করে কর আহরণসহ সর্বক্ষেত্রে কর্ম পরিকল্পনা করতে হয়। তাই মাঝে মাঝে কর আহরণে সাময়িক অসুবিধা হলেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব বোর্ড সক্ষম। কর প্রশাসন কর ফাকিবাজদের চিহিৃত করার জন্য তরুণদের খন্ডকালীন চাকুরীতে নিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। তিনি আরো বলেন কর প্রদান ছাড়া সম্পদের বৈধতা অর্জন সম্ভব নয়। তাই কর প্রদানের মাধ্যমে সততার সাথে মাথা উচু করে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া উচিত। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও রাজস্ব আহরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণের আওতা বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মানুষের মধ্যে যে করভীতি রয়েছে সে ভীতি দূর করার জন্য কিভাবে কর ব্যবস্থাপনাকে আরো সহজ করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর নিরূপন ও কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে কর গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষকে কর প্রদানকারির সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করতে হবে। তাহলেই কর আদায়ের পরিধি বাড়ানো সহজ হবে। অসৎ কর কর্মকর্তাদের দ্বারা যাতে কোন সম্মানিত করদাতা হয়রানির স্বীকার না হয় সেদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মানীত মেম্বার মহোদয় বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন বলে অনুরোধ করেন জনাব কিরণ। একইসাথে তিনি আরো বলেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আদালতে ঝুলে থাকা কর ফাঁকিবাজদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচারের ব্যবস্থা করে মামলা সমূহ দ্রততার সাথে নিষ্পত্তি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কোন কর ফাকিবাজ যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন আমাদের দেশে এক কোটির বেশি মানুষ কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখলেও মাত্র ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষ কর প্রদান করছে। আমাদের জাতীয় আয়ের ৩০ শতাশং রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা কিন্তু সেখানে মাত্র আমরা ৯% আদায় করতে পারছি। বিশেষ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নানা রকম কারসাজিতে আমাদের কর ব্যবস্থা অন অভিজ্ঞতার কারণে ব্যাপক হারে কর ফাকি দিচ্ছে। কর কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে লাল, হলুদ ও সবুজ এ তিন শ্রেনীতে চিহ্ণিত করা উচিত বলে মনে করেন জনাব কিরণ। এ ছাড়া আয়করের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে কর আদায়ে নজরদারি আরো বাড়ানোর কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক শামিমা দোলা, সাংবাদিক রিয়াদ হোসেন, সৈয়দ এ মোমেন ও মেহেদী হাসান তামিম।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।