পার্বত্য শান্তিচুক্তি সংবিধানবিরোধী:বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম

706

স্টাফরিপোর্ট- ১ ডিসেম্বর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:

‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী। ‘পার্বত্য নাগরিক পরিষদের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২১ বছরে জাতির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ, পার্বত্য নিউজের সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. শেখ আহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবদুল হামিদ রানা প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের প্রচার সম্পাদক প্রভাষক আরিফ বিল্ল¬াহ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের তথ্য সম্পাদক মো: ইলিয়াছ হোসাইন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের বান্দর বান জেলা সভাপতি মোঃ আতিকুর রহমান, পিবিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার উল্লাহ সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে সই হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের যে ভূমির অধিকার ও তাদের বসবাসের অধিকারে ডিস্টার্ব করার অধিকার কারও নেই উলে¬খ করে তিনি বলেন, চুক্তি হওয়ার পরবর্তীতে দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। একজনের পৈত্রিক জমি আর কাউকে দেয়া যাবে না, যাদের জমি তারই থাকবে। এ ধরনের অনেক বাস্তব সমস্যা দেখা দিল। এর বিরুদ্ধে দুটি রিট পিটিশন হলো। এ মামলায় দেশের নামকরা সব আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল এটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে হাইকোট এমন রায় দিলেন যাতে এ চুক্তির অস্তিত্ব^ এখন আর নেই।

তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি সংবিধান পরিপন্থী। তবে এটি আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে। পেন্ডিং থাকা অবস্থায় কাজ চলছে। কিন্তু সাংবিধানিক ভাবে চুক্তির অস্তিত্ত^ নেই। সংবিধান পরিপন্থী যেটা সেটা তো আমরা মানব না। আপিল বিভাগে যেহেতু পেন্ডিং আছে, সেহেতু এটা তারাই বিচর করবে। কিন্তু যে চুক্তিটা সংবিধান পরিপন্থী তা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকের ওপর বহাল না। আমরা এটা মানতে রাজি না।

আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ৮ দফা ঘোষনাপত্র পাঠ করা হয়- ১। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত তথাকথিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতী ও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টিকারী ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সমূহ বাতিল করে বাসÍবতার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জনগনের মাঝে শাসনতান্ত্রিকভাবে গ্রহনযোগ্য সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ২। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতি প্রাপ্তির অযৌক্তিক দাবী ও আদিবাসী ইস্যুতে কিছু মিডিয়া, এনজিও, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সং¯্থ’া এবং তথাকথিত সুশীল ব্যাক্তির/ব্যাক্তিদের অপপ্রচার বন্ধে দ্র“ত কার্যকর ব্যব¯’া নিতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিন সুদানের মত আলাদা খ্রীষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সকল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বন্ধ করার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দ্র“ত আইনানুগ ব্যাব¯্থ’া নিতে হবে। ৩। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ অসাংবিধানিক হওয়ায় সেটিকে অবৈধ ঘোষণা পূর্বক পরবর্তীতে প্রস্তাবিত সকল সংশোধনীসহ আইনটি বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় প্রচলিত ভূমি আইনের মাধ্যমে সকল ভুমি সমস্যার সমাধান করতে হবে। ৪। শিক্ষা, শিক্ষাবৃত্তি ও চাকুরী ক্ষেত্রে উপজাতি কোটা বাতিল করে জনসংখ্যানুপাতে পার্বত্য কোটা চালু করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় শুধুমাত্র উপজাতি ছাত্রাবাসের পরিবর্তে উপজাতি ও বাঙ্গালী সকল স¤প্রদায়ের ছাত্রদের জন্যে যথেষ্ট আসনসংখ্যা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্যে করমুক্ত ব্যবসা সুবিধার পরিবর্তে সকল স¤প্রদায়ের ব্যবসায়ীদেরকে একই সুবিধার আওতায় আনতে হবে। ৫। বর্তমান জেলা পরিষদ, পার্বত্য শরণার্থী পুনর্বাসন টাস্কফোর্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও অঞ্চলিক পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। চেয়ারম্যান পদ সকল স¤প্রদায়ের জন্য উন্মোক্তকরণপূর্বক সকল পর্যায়ে বাঙ্গালী প্রতিনিধির পদ সংখ্যা জনসংখ্যানুপাতে বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। সকল সরকারি নিয়োগ ও বদলি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হতে হবে। ৬। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী নিরীহ, নিরস্ত্র, গরীব ও অসহায় বাঙ্গালীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং নির্বচারে সীমাহীন চাঁদাবাজি রোধে কোনভাবেই অ¯’ায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা যাবে না। নিরাপত্তা ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহে সেনাক্যাম্প ¯’াপন করতে হবে। ¯্থানীয় পুলিশ বিভাগ কোনভাবেই উপজাতি নেতৃত্বাধীন জেলাপরিষদের হতে ন্যাস্ত করা যাবে না। ৭। ৩০ হাজার বাঙ্গালীর খুনি, দেশদ্রোহী সন্তু‘ লারমা ও তার দোসরদের আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ করে বাঙ্গালী হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জেএসএস, ইউপিডিএফ, সংস্কারপন্তি’ এবং তাদের সমর্থিত অঙ্গ সংগঠনসমূহকে উগ্রপন্তি’ ঘোষণা করে নিষিদ্ধকরণ পূর্বক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজী, অপহরণ বানিজ্য, হত্যা, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ৮। ২৮২২০ পরিবার গু”ছগ্রামবাসী বাঙ্গালীদের ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থীদের ন্যায় সুবিধাদি দিয়ে ভূমিসহ পূর্ণবাসন করতে হবে এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বৃটিশ হিলট্রাক্টস্ ম্যানুয়াল এ্যাক্ট-১৯০০ বাতিল করতে হবে।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।