প্রকৃতির রাণী রাঙামাটির কোলে ছবি আঁকছেন দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীরা

499

॥ আনোয়ার আল হক ॥

প্রকৃতি যেখানে অপরূপ, সবুজ যেখানে নানা বর্ণে মোহনীয়, লীলাময়ী প্রকৃতি যাকে আপন হাতে সাজিয়েছেন অনবদ্য ব্যঞ্জনায়, সেখানে প্রকৃতিপ্রেমিরা তো আসবেই। আসবে তার রূপসুধা পান করতে; আসবে এর অজানা সৌন্দর্যের রহস্য উদঘাটনেও।

ভ্রমণ পিয়াসুদের- রাঙামাটির সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু চারুশিল্পীরা এর পেছনের সৌন্দর্য্য বের করে আনে আপন মহিমায় প্রত্যুৎমতিতা ও পারদর্শিতায়। বর্ষার রাঙামাটি সত্যিই আরো মোহনীয়। সবুজেরও যে রকমফের আছে, তা বোঝে শিল্পী আর বোদ্ধারা। একে ক্যমেরাবন্ধী করে ফটোগ্রাফাররা। কিন্তু চারু শিল্পীরা এটে ফুটিয়ে তোলে মনের ক্যানভাস থেকে বের করে এনে। শিল্পীর তুলি আর রঙের ছোঁয়ায় শ্যামল রাঙামাটি যেন আরো মূর্ত; আরো অনন্য হয়ে ওঠে।

এই অনন্যতার প্রকাশ ঘটাতেই রাঙামাটিতে এসেছেন দেশের প্রথিতযশা ২৫জন চিত্র শিল্পী। ‘প্রকৃতির ক্যানভাসে জীবনের রঙ’ শিরোনামে তারা জুটিবদ্ধ হয়েছেন সপ্তাহের জন্য। এই সাতদিন শুধু দেখা আর আঁকা।

শুধু মানসপটে আঁকা, প্লট থেকে কপি করা নয়, বরং ‘প্রকৃতির কোলে বসে প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলার’ এই অভিযান শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। আর এই মোহনীয় শৈল্পিক অভিযানে শিল্পীরা যাতে অবলোকন আর আঁকার বাইরে অন্য কোনো দুঃশ্চিন্তায় পেরেশান না হয়, সেজন্য তাদের সর্বত যোগান দিতে সব কিছু নিয়ে পাশে থাকছে ‘ল্যাব এইড ফাউন্ডেশন’।

বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ল্যাব এইড ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাঙামাটি পর্যটন মোটেল হল রুমে শনিবার অপরাহ্নে দেশাত্ববোক গান ও পাহাড়ি নৃত্যের মাধ্যমে দেশবরেণ্য চিত্র শিল্পীদের নিয়ে এই আর্ট ক্যাম্পএন শুভারম্ভ হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি কবি ও শিল্প সমালোচক রবিউল হোসাইন। আলোচনায় অংশ নেন বরেণ্য চিত্র শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, মনিরুল ইসাম, আবুল বারক আলভী, হামিদুজ্জামান খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ল্যাবএইড গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (গণ যোগাযোগ) ও ক্যাম্পের সমন্বয়ক সাইফুর রহমান লেনিন।

সূচনানুষ্ঠানশেষে অংশ গ্রহণকারী বিপাশা হায়াতসহ অন্যান্য নবীন চিত্র শিল্পীদের হাতে ছবি আঁকার সরঞ্জামাদি ও অ্যাপ্রোন তুলে দেন প্রবীন দেশবরেণ্য চিত্র শিল্পীরা। আগামী ২০ জুলাই পর্ষন্ত এই আর্ট ক্যাম্প চলবে।

আর্ট ক্যাম্পে অংশ গ্রহন করছেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, আবুল বারক আলভী, মনসুর উল করিম, আলোকেশ ঘোষ, আইভি জামান, তরুণ ঘোষ, রনজিত দাশ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, রেজাউন নবী, দিলারা বেগম জলি, সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার, কাজী সালাউদ্দিন, রাশেদুল হুদা ও বিপাশা হায়াতসহ ২৫ চিত্রশিল্পী।
ল্যাব এইডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও ক্যাম্পের সমন্বয়কারী সাইফুর রহমান লেলিন জানান, এই আর্ট ক্যাম্প মূলত তরুন ও প্রবীন চিত্র শিল্পীদের সমন্বয় ঘটে। তরুন শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্ম নিয়ে প্রবীনদের সাথে ভাবনা বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পান।

প্রবীণদের সংস্পর্শে থেকে তাদের ছবি আকার কৌশল দেখার পাশাপাশি প্রবীণদের দ্বারা তরুনদেন  চিত্রকর্ম বিচার-বিশ্øেষনের এক অনবদ্য সৃষ্টি হয়ে থাকে।  তিনি জানান, চিত্রশিল্পীরা রাঙ্গামাটির হ্রদ পাহাড় ঝর্ণা, আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও এলাকার নানান নৈর্সগিক সৌর্ন্দয্য উপভোগের পর তুলির আচঁরে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলবেন। তথ্যে প্রকাশ, ২০০৯ সাল থেকে দেশবরেণ্য চিত্র শিল্পীদের নিয়ে ল্যাব এইড দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫টি  আর্ট ক্যাম্প আয়োজন করেছে।

চিত্রশিল্পীরা জানান, প্রথমদিনে তারা দিনের  বিভিন্ন সময় নদী, পাহাড়, ঝরণা ও বিভিন্ন এলাকার নানা নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন। দিন শেষে সেই সৌন্দর্য্য অভিজ্ঞতাগুলো তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন।

এই আর্টক্যাম্পে মূলত তরুণ ও প্রবীণ চিত্রশিল্পীদের সমন্বয় ঘটেছে। প্রতি বছর শীতে আর্টক্যাম্প আয়োজন করা হলেও এবার প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে বদলা দিনের মৌসুমে বেছে নেয়া হয়েছে পাহাড়, ঝরনা, হ্রদের নৈসর্গিক আবেশ রাঙামাটিকে।

তারা বলেন, তরুণ শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্ম নিয়ে প্রবীণদের সঙ্গে ভাবনা বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দিকনির্দেশনা পান। প্রবীণদের সংস্পর্শে থেকে তাদের ছবি আঁকার কৌশল দেখার পাশাপাশি প্রবীণদের দ্বারা তরুণদের চিত্রকর্ম বিচার-বিশ্লেষণের এক অনবদ্য সুযোগ সৃষ্টি হয়।

আর্টক্যাম্পের সমন্বয়ক সাইফুর রহমান লেলিন জানান, আর্টক্যাম্পে অংশ নেয়া শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে ঢাকার কোনো খ্যাতনামা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে চিত্রকর্মগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রদর্শনীর বিক্রির টাকা গরিব, দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ব্যয় করা হবে। অবিক্রিত চিত্রকর্মগুলো পরবর্তীতে ল্যাবএইড হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করা হবে।