শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খগেন্দ্রলাল চাকমা’র আত্মত্যাগ ও তার পরিবারের জীবনসংগ্রাম (প্রথম পর্ব)

518
। মো. ইকবাল হোসেন ।
পৃথিবীর মানিচিত্রে বাংলাদেশ নামক দেশের আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর আগে। ১৯৭১ সাল’র ২৬শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর প্রায় ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও প্রায় ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম’র বিনিময়ে আজ আমরা গর্বের সাথে বলতে পারছি যে, আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমরা আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সম্ভাব্য সকল সুযোগ আমরা গ্রহন করছি। কিন্তু আমরা বাংলা মায়ের যে সকল সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
যারা দেশের মানুষকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দেয়ার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে একবিন্দু দ্বিধাবোধ করেননি, নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানদের কথাও চিন্তা না করে হাসি মুখে নিজেদের জীবন দেশের তরে উৎসর্গ করে পাকিস্তানি দখলদারদের থেকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। যেসকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার
৩০ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলার যেসকল সূর্য সন্তানরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। লক্ষ লক্ষ শহীদের মধ্যে শহীদ খগেন্দ্রলাল চাকমা’র আত্মত্যাগ ও তার পরিবার’র জীবন সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে।
শহীদ খগেন্দ্রলাল চাকমা ১৯১৮ সাল’র ২ই ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সর্গীয় ঘৃতমনি চাকমা ও তার মাতার নাম সর্গীয় প্রকৃতি চাকমা। তার বাবা কৃষি কাজের সাথ সম্পৃক্ত ছিলেন। এন্ট্রান্স পাশ করার পর ১৯৩৬ সালে তিনি বৃটিশ সেনাবাহিনী তে যোগদান করেন এবং বৃটিশ সেনাবাহিনী থেকে ২য় বিশ্ব যুদ্ধে মিত্রবাহিনী’র পক্ষে জাপান’র বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি ১৯৪৬ সালে প্রকৃতি চাকমা কে বিয়ে করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাঁচ পুত্র সন্তান ও তিন কন্যা সন্তান কে রেখে যান।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস এ অফিসার পদে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি কুমিল্লায় পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস এর সার্কেল ইনিসপেক্টর পদে মুরাদনগরে সার্কেল এ কর্মরত ছিলেন। তিনি সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবে (মুরাদপুর, দেবিদ্বার, বাঞ্চারামপুর ও হোমনা) উক্ত ৪ টি থানার নজরদারি করার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নিম্নে উল্লেখিত তথ্য সমূহ শহীদ খগেন্দ্রলাল চাকমা’র পুত্র রতন চাকমা’র কাছ থেকে সংগৃহীতঃ-
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে :
শহীদ খগেন্দ্রলাল চাকমা’র পুত্র রতন চাকমা কুমিল্লার মুরাদনগরে তার পিতার সাথে অবস্থান করছিলেন। যদিও শহীদ খগেন্দ্রলাল চাকমা’র পরিবার চট্টগ্রাম’র চকবাজার’র নিজেস্ব বাড়িতে অবস্থান করছিলো। রতন চাকমা বলেন, তিনি ১৯৭১ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এ ভর্তি পরিক্ষা দেন এবং লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমার  বাবার স্বপ্ন ছিলো আমাকে  ক্যাডেট কলেজে পড়াবেন। মুরাদনগর থানার পাশে বাবা’র পরিচিত খুবঈ দক্ষ একজন শিক্ষক ছিলেন, তাই লিখিত পরিক্ষার আগেও বাবা আমাকে কুমিল্লায় নিয়ে গিয়েছিলেন আমি মাস খানেক স্যার’র কাছে প্রাইভেট পড়েছিলাম। এজন্যই হয়ত বাবা ভাইবা পরিক্ষার আগে আমাকে স্যার’র কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য নিয়ে যান।
বাকি অংশ দেখুন পরবর্তী পর্বে…