আইনের তোয়াক্কা না করে রাঙামাটিতে চলছে তামাক প্রচরণার মহোৎসব

472

p.1

আলমগীর মানিক, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : র্বনাশা তামাকের রাহুগ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত করতে সরকার যখন কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, তখন পাহাড়ে চলছে মানুষকে ধুমপানে উদ্বুদ্ধ করার অভিনব কর্মসূচি। রাঙামাটি জেলায় সাধারণ মানুষকে ধুমপানে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন বিনামূলে বিড়ি-সিগারেট বিতরণসহ লোভনীয় অফার ও  পুরস্কারের লোভ দেয়া হচ্ছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে সকল হাট বাজারে  প্রতিদিন বিনামূল্যে বিড়ি-সিগারেট হাতে তুলে দিয়ে পাইকারি হারে বিজ্ঞাপনী স্টিকার লাগানোর মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণ করে দরিদ্র শ্রেণির লোকদের প্রলুব্ধ করছে বিভিন্ন কোম্পানীর এজেন্টরা। এ বিষয় সরকারের উদ্যোগ থাকলেও স্থানীয় প্রসাশন তামাক আইনের  প্রয়োগ করছেন না।

রাঙামাটি শহরের বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক অভিযোগ করেছেন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তামাক, বিড়ি- সিগারেট বিক্রেতারা নানা কৌশল অবলম্বন করে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়িদের দোকান ঘরে বিভিন্ন ধরনের সিগারেটের গ্যাস লাইট, চাবির রিং, সিগারেটের খালী প্যাকেট সাজিয়ে রাখার জন্য কোম্পানীগুলো উদ্বুদ্ধ করছে। শহরগঞ্জ, বাস-ষ্টান্ড, ষ্টেশনসহ জেলার ১০ উপজেলার গুরুত্বপুর্ন স্থানসমুহে ছোট ছোট বক্স তৈরী করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে বিড়ি-সিগারেট ও পানের জর্দ্দা বিক্রী করাচ্ছে। তাদেরকে আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরনের উপটৌকন দিয়ে আকর্ষণ করা হচ্ছে।

জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতারা কোম্পানী প্রদত্ত বিভিন্ন সামগ্রী বিজ্ঞাপন হিসাবে ঝুলিয়ে রেখে প্রদর্শন করছে। তাদের ছোট বাক্সগুলো সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রচারকারীদের ব্যবহৃত আকর্ষণীয় বড় আকারের ছাতাটিতেও বিভিন্ন কোম্পানীর সিগারেটের প্যাকেটের নকশা প্রদর্শন করা হচ্ছে।

সিগারেট কোম্পানীর লোকজনের দেওয়া বিনামূল্যের বিড়ি-সিগারেট জনবহুল স্থানে মানুষ খোলা মেলা ভাবেই ধুমপানের মাধ্যমে উপভোগ করছে। সেখানে থাকছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছোট বাচ্চরাও; তারাও সিগারেট ক্রয়ে উদ্বদ্ধ হয়ে নেশা গ্রস্থ হয়ে পড়ছে। আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সারা জেলায় তামাকজাতদ্রব্য যথেচ্ছাভাবে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুরোর তেমন কোন তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। এই সুবাদে প্রতিদিনই বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।

সিগারেট কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এরই সত্যতা প্রমাণ করে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙমাটি জেলায় তৃণমুল পর্যায়ে সহজলভ্য বিড়ি-সিগারেটের মধ্যে প্রতিমাসে আবুল খায়ের কোম্পানীর অন্তত ৭০ লাখ শলাকার মতো বিড়ি-সিগারেট বিক্রি হয়। অপরদিকে একই ভাবে জেলা সদরসহ ১০ উপজেলায় আকিজ কোম্পানীর প্রতিমাসে বাজারজাত করা হয় অন্তত অর্ধকোটি শলাকা।
বিভিন্ন সূত্র  জানিয়েছে, বিক্রি বাড়ানোর স্বার্থে কোম্পানী কর্তৃক নতুন নিয়োগকৃতদের টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে সাপ্তাহিক হাটের দিনে নিজেদের কোম্পানীর ব্রান্ডের বিড়ি-সিগারেট ফ্রি খাইয়ে নতুন নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীতে এরাই ফ্রি খাওয়ানো কোম্পানীটির নির্দিষ্ট গ্রাহকে পরিণত হন।

আকিজ কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার নূরনবী বাদল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, তার কোম্পানী সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমোদন নিয়েছেন বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য। একটি নিদৃষ্ট আকারে তৈরিকৃত এসব বিজ্ঞাপনী ষ্টিকার জনসাধারনের নজরে লাগে এমন স্থানে লাগানোর নির্দেশনা কোম্পানীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মালিকের পক্ষ থেকে প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা-ই আমাদের কাজ।

আবুল খায়ের গ্রুপের মালিকানাধীর আবুল বিড়ি ও ম্যারিস সিগারেটের এরিয়া ম্যানেজার জামাল সুলতান জানিয়েছেন, তার কোম্পানীর পক্ষ থেকে কোনো বিড়ি-সিগারেট বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে না। দোকান কেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন লাগানোর নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে তামাক কোম্পানীগুলোর এসব কর্মকান্ডে পাহাড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। আর এতে করে উঠতি বয়সী তরুনদের পাশাপাশি ধূমপানে আগ্রহী হয়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীরা। তরুণদের তামাকজাত দ্রব্য সেবনে উদ্বুদ্ধকরণে পরিকল্পিতভাবে আইনকে অমান্য করে কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আবুল খায়ের টোব্যাকো, আকিজ কোম্পানীর পাশাপাশি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকোসহ নতুন নতুন গজিয়ে উঠা ব্রান্ডের সিগারেট কোম্পানীগুলোর অবৈধ প্রচার-প্রচারণা লক্ষনীয়।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান