ইউপিডিএফ নেতাকর্মী-সমর্থকদের মুক্তিসহ ৮ দাবিতে জতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

20

ঢাকা ব্যুরো অফিস : ২৭.৮.২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলে আটক ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দেওয়াসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কথিত আয়না ঘর থেকে সদ্য কারামুক্ত ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে এসব দাবি জানান ।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১) অবিলম্বে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত সব শহীদের নাম প্রকাশ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করা। ২) অবিলম্বে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলে আটক ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দেওয়া; আদালত থেকে জামিন লাভের পর জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার বন্ধ করা; এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করা। ৩) ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ বাহিনী ও মগ পার্টি ভেঙে দেওয়া এবং তাদের মধ্যে যারা খুন, গুম, অপহরণ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। ৪) স্বনির্ভর গণহত্যা ও পানছড়িতে চার যুব নেতা হত্যাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা এবং তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে যুক্ত করা। ৫) অবিলম্বে নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করা। ৬) অবিলম্বে বান্দরবানে চলমান কেএনএফ-বিরোধী অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীকে নিশানা করে জাতি-নিধন অভিযান বন্ধ করা এবং শিশু ও নারীসহ আটককৃত বমদের মুক্তি দেওয়া। ৭) খাগড়াছড়ির রামগড়ে গৃহবধূকে ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার ও রাঙামাটি এবং বান্দরবানে ধর্ষণ প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া। ৮) পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অপারেশন উত্তরণ বাতিল করে সেনা শাসন প্রত্যাহার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাইকেল চাকমা বলেন, শুধু সমতলে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামেও হাসিনার সরকার দমনপীড়নের স্টিম রোলার চালায়, যার শিকার হয় প্রধানত ইউপিডিএফ। তার ১৫ বছরের শাসনামলে ইউপিডিএফকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। পার্টির সব অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা, গুম ও আরও অনেককে গ্রেপ্তার-নির্যাতন করা হয়েছে। আদালত থেকে জামিন পেলেও জেলগেট থেকে একই বন্দিকে বার বার আটক করে জেলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে একটি ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গঠন করে দেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এ বাহিনী হাসিনা সরকারের ছত্রছায়ায় ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট স্বনির্ভর গণহত্যা ও ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পানছড়িতে চার যুবনেতা হত্যাসহ অসংখ্য হত্যা, অপহরণ ও গুমের সঙ্গে জড়িত।

ইউপিডিএফ এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে ২৯ জন সদস্য বর্তমানে কারাগারে রয়েছে বলে জানান মাইকেল চাকমা। জামিনে মুক্তির পর জেল গেটে ইউপিডিএফ এর কতজন কর্মী ও সমর্থককে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে একজনকে তিনবার, একজনকে দুইবার এবং একজনকে চারবার পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আয়না ঘর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আয়না ঘরে অমানবিকভাবে আটকে রাখা হতো। হিটলার যেভাবে তার কনসানটেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে রাখতো, আয়নাঘর ধরে নিতে পারেন ঠিক তেমন একটি জায়গা। যেখানে মানুষকে তার সব মানবাধিকার লঙ্ঘন করে রাখা হতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সুনয়ন চাকমা, ইউপিডিএফ সদস্য থুইখোচিং মারমা।

শামিমুল আহসান- ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি