॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
উন্নয়ন বোর্ডের হোম সোলার সিস্টেম পাওয়ার জন্য স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের টাকা দিয়ে এখন বিপাকে খাগড়াছড়ি মানিকছড়ির বাটানতলী ইউনিয়নে প্রায় হাজার পরিবার। ওই ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত ৯৫৪ পরিবারের অনুকূলে বিতরণের জন্য সোলার সিস্টেম নিয়ে কয়েকমাস মওজুদ রাখার পর, অনিয়মের অভিযোগে উন্নয়ন বোর্ড সেগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছে সোলারের স্বপ্ন দেখা এই ৯৫৪ পরিবার।
গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে বাটনাতলী ইউনিয়নের ছুদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে রক্ষিত সকল সোলার সিস্টেম ফেরত নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের দৃঢ়তায় দুর্নীতিবাজদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসব সোলার প্যানেল বিতরণ স্থগিত করা হয়েছিল।
তালিকা অনুযায়ী ৯৫৪টি সোলার প্যানেল বিতরণের জন্য গত ২১ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী ছুদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গেলেও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সোলার বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রেখে ফিরে আসেন। স্থানীয়রা জানায়, বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য এসব সোলার প্যনেলের জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন, মানিক ত্রিপুরা ও মহরম আলীসহ একটি চক্র অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই সংবাদ জেনে উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান প্যানেল বিতরণ স্থগিত রেখে উপকারভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু এর পরে দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কারো টাকা তো ফেরত দেওয়া হয়ইনি, উল্টা সোলারগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ধার দেনা করে দুর্নীতিবাজদের টাকা দেওয়া গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা বোধ করছে। তাদের দাবি দুনীতিবাজদের লোভের আগুনে এখন তাদের আমছালা দুইই যেতে বসেছে। তারা এর একটি বিহিত দাবি করেছেন উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, বাটনাতলী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৬৪ জন, ২নং ওয়ার্ড থেকে ১৩৯জন, ৩নং ওয়ার্ড থেকে ১৬৯জন ও ৭নং ওয়ার্ড থেকে ২৮৩জন, ৮নং ওয়ার্ড থেকে ২৪৫জন এবং ৯নং ওয়ার্ড থেকে ৫৪জনসহ সর্বমোট ৯৫৪ জনের অনুকূলে এই প্যানেলগুলো বরাদ্দ প্রদান করে সেখানে পাঠানো হয়েছি। চেয়ারম্যানের নির্দেশের পরও দুর্নীতিবাজরা সংশোধন না করে পুণরায় তালিকা নয়ছয় শুরু করায় অবশেষে প্যালেনগুলো ফেরত নেওয়া হয়েছে।
যদিও কর্তৃপক্স বলছে, বেশিদিন সেখানে পড়ে থাকলে ব্যাটারি নির্জীব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্যানেলগুলো অন্যত্র বিতরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী জানান, আমি নিজেও বিনামূল্যের সোলার পেতে ৩ হাজার টাকা দিয়েছি। এতদিন আশা ছিল সোলার পাব, কিন্তু আজ দেখছি কর্তৃপক্ষ সোলারগুলো নিয়ে যাচ্ছে। ‘টাকাও গেল, সোলারও গেল কিনা সেটাই বুঝতে পারছি না’! এমন একটা সময় দেখতে পাব বলে তো স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি।
উপকারভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকা তুলাবিল এলাকার আকতার হোসেন, গোরখানা এলাকার মো.গিয়াস উদ্দিন ও ছুদুরখীল এলাকার মোহাম্মদ আলী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বহুদিন ধরে অত্র এলাকার মানুষ সৌর বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মুখে ছাই ঢেলে দেওয়া চেয়ারম্যান মেম্বাররা এখন আমাদের কিছুই বলছে না।
২নং বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম জানান, সোলারের ব্যাটারিগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কর্তৃপক্ষ সে গুলো নিয়ে গেছে। যা পরবর্তিতে তাদের সুবিধামত সময়ে বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের কনসালটেন্ট হাসান শাহ রিয়ার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোলারের ব্যাটারিগুলো পড়ে থাকলে সে গুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সোলারগুলো নিয়ে যাচ্ছি। লংগদুসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় আমাদের বিনামূল্যের সোলার বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেখানে এগুলো কাজে লাগানো হবে। তবে বাটনাতলী ইউনিয়নে সোলার বিতরণ করা হবে কিনা এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।