উন্নয়নের নামে করা কাপ্তাই বাঁধ জুম্ম জনগোষ্ঠিকে ভূমিহীন করেছেঃ সন্তু লারমা

414

॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, তৎকালীন ঔপনেবেশিক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের নামে কাপ্তাই বাঁধ দিয়েছিলো। কিন্তু সেই বাঁধ জুম্ম জনগোষ্ঠির সম্পদ নষ্ট করেছে; জুম্ম জনগোষ্ঠিকে ভূমিহীন করেছে। তিনি বলেন, জুম্ম জনগোষ্ঠি হিং¯্র প্রাণীর সাথে লড়াই করে শত বছর ধরে পার্বত্যঞ্চলে আবাস ভূমি গড়ে তুলেছে। অথচ পার্বত্যঞ্চলকে বসবাসের উপযোগী করা সেই মানুষরা আজ অবহেলিত। ভিনদেশীরা এসে আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে।
সোমবার (০৮মার্চ) সকালে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির যৌথ আয়োজনে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

নারী দিবস ঘিরে বক্তব্য দিতে গিয়ে সন্তু লারমা বলেন, আমার অভিজ্ঞতায় শিক্ষিত জুম্ম নারীরা আত্মকেন্দ্রীক; তারা নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। জাতির স্বার্থে কাজ করতে চায় না। যেসব শিক্ষিত জুম্ম নারী ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছেন, উচ্চ পদস্থ পদে চাকুরী করছেন, ব্যবসায়ী হয়েছেন, সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন, তারা ভাবছেন অনেক কিছু পেয়ে গেছেন। সেই নারীদের উদ্দেশ্য করে সন্তু লারমা বলেন, ‘আপনারা ভেবে দেখুন, আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নেই’।

তিনি আফসোস করে বলেন, চুক্তির ২৩বছর পার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০বছর সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। অথচ আমরা এখনো চুক্তির পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পাইনি। তিনি আরো বলেন, পার্বত্যঞ্চলে চলছে এক ধরণের শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থার কবলে পড়ে জুম্ম সমাজ শোষিত, বঞ্চিত ও লঞ্চিত হচ্ছে। তারা নিপীড়িত হচ্ছে। তারা অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। কিন্তু জুম্ম সমাজ বসে নেই। জাতীয় জীবনে অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে হবে। আমরা আমাদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট আছি। জুম্ম জাতি স্বত্তা ও তাদের অধিকার আদায়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সন্তু লারমা জুম্ম নারীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনারা এগিয়ে আসুন। নারী নয়, নিজেকে মানুষ ভাবুন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বন্দি না রেখে নিজের পরিচয় তুলে ধরুন। জাতির অধিকার সংরক্ষণ, ভূমির অধিকার আদায় ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রামে সামিল হন। আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রামে আমরা যেন পরাজিত না হয়। বংশপরায়ণ ভাবে টিকে থাকতে পারি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যত দু:শাসন চলুক, আমাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি রাঙামাটি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, ট্রান্সফারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এ্যাডভোকেট সুুষ্মিতা চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, জনসংহতি সমিতির স্টাফ কর্মকর্তা আশিকা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মলিা সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি শাখার সভাপতি ¤্রানু মারমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠননিক সম্পাদক নিপুন চাকমা।