মঈন উদ্দীন বাপ্পী- ২৮ নভেম্বর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:
উৎসব মুখর পরিবেশে নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসসদ নির্বাচনে ২৯৯ নং পার্বত্য রাঙামাটি সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থীতার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ১২জন প্রার্থী। বুধবার বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত ১২টি মনোনয়ন পত্র জমা পড়ে। বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষদিনে রাঙামাটিতে জমা পড়ে মোট ৯টি মনোনয়ন। এরআগে মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদারসহ আরো তিনজন প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জমা পড়া ১২টির মধ্যে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দীপংকর তালুকদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আ’লীগের সদস্য এবং সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি দীপংকরের ছায়াপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, আশীষ দাশগুপ্ত (স্বতন্ত্র)।
বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দু’জন প্রার্থী। এরা হলেন- অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান এবং তার বিকল্প প্রার্থী মণিস্বপন দেওয়ান। দীপেন দেওয়ান দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। মণিস্বপন দেওয়ান বিএনপি’র সাবেক এমপি ও পার্বত্য উপমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে তিন দল থেকে বহিস্কৃত হন। সম্প্রতি তার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে বিএনপি থেকে রাঙামাটি আসনে যুপৎভাবে দুই প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আঞ্চলিক দল (অনিবন্ধিত )পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ও সংগঠনটির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার। এ ছাড়া তার ছায়া প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, জেলা কমিটির নেতা শরৎ জ্যোতি চাকমা।
অপর আঞ্চলিক সংগঠন (অনিবন্ধিত) ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সমর্থনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শান্তিদেব চাকমার পক্ষে মনিন্দ্র তালুকদার ও সচিব চাকমার পক্ষে বাবুল চাকমা।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, মো. জসিম উদ্দিন (বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন) ও জুঁই চাকমা (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি)। সর্বশেষ মনোনয়নপত্র জমা দেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী অমর কুমার দে।
বুধবার শেষদিন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে পৃথক ভাবে জেলা প্রশাসক ও রিটানিং অফিসারে কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন, বিএনপির দীপেন দেওয়ান এবং মণিস্বপন দেওয়ান। এ সময় দীপেন দেওয়ানের সঙ্গে ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রবীন্দ্র লাল চাকমা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জহির আহমদ সওদাগর, রফিকুল ইসলাম, সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো, মো. আলমগীর, কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেনসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
মণি স্বপন দেওয়ানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদার দীপু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনিরসহ অন্যরা। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর দীপেন দেওয়ান বলেন- দলের মূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। কোনো কারণে যদি আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় ব্যর্থ হই, তাহলে আমার পরে যিনি, তিনি দলীয় প্রার্থী থাকবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য দলের চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা। এ জন্য ধানের শীষে জয় নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। রাঙামাটি আসনে আমার জয় নিশ্চিত। মণিস্বপন দেওয়ান বলেন, দলের হয়ে মনোনয়নপত্র দিয়েছি। দল যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে থাকব।
বিকালের দিকে বিপুল নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর। এ সময় তিনি বলেন,-জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের সঙ্গে পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছে। পাহাড়ের আর্থ-সামাজিক ও স¤প্রীতির উন্নয়নে তিনি আন্তরিক। তাই এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে জনগণ প্রস্তুত। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সর্বাধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে আমার বিশ্বাস। এ আসনে আওয়ামী লীগের জয় শতভাগ নিশ্চিত।
এ ছাড়া বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেন জাতীয় পার্টির পারভেজ তালুকদার, ইউপিডিএফের শান্তিদেব চাকমা, সচিব চাকমা ও বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন। অন্য প্রার্থীরা এর আগে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ ১২জন মনোনয়ন পত্র জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা মেনে সকলে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান ডিসি। আগামী ২ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাচাই, ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার এবং ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হবে জানান ডিসি মামুন। আর এ প্রতীক বরাদ্ধের আগে কোন প্রার্থী মিছিল, সমাবেশ এবং শোডাউন করতে পারবে না। যদি কেউ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ডিসি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।