॥ নূর হোসেন মামুন ॥
কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনার কয়লার ডিপু থেকে তনচংগ্যা পাড়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জায়গার উপর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যখাত উন্নয়নে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আড়াই (২.৫) কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নির্মিত হবে ৪টি বাঁধ। ডিসেম্বরে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
রাঙামাটি জেলা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. তাসাউর রহমান জানান, ৬ কিলোমিটার খালের ছড়ায় ৪টি বাঁধ দিয়ে ছড়ার পাশে ধারক দেওয়াল নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে ড্রেইনের পানিকে ধরে রাখা হবে, ফলে এলাকার জনগণ কৃষি কাজে পানি ব্যবহার করতে এবং গৃহস্থালি কাজে এই পানি ব্যবহার করতে পারবে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, রবি ও বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে অধিক ফলন সম্ভব হতো না, তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই দুই মৌসুমে অধিক ফলন ফলাতে পারবে কৃষকরা। প্রকল্পের সমাজ বিজ্ঞানী কামাল হোসেন জানান, এটি বাস্তায়িত হলে টেকসই কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এলাকার জনগণ যেমন কৃষি কাজের জন্য পানি পাবে, তেমনি বাঁধে মৎস্য চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী জানান, এটি একটি মডেল প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তা অত্রাঞ্চলের জনগণের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। এখানে কর্মসংস্থান বাড়বে, জনগণ নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
এলাকাবাসী হোসনে আরা বেগম, জান্নাতুল মাওয়া, বিলকিস বেগম জানান, তারা পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারে না, তাই ছড়াতে পর্যাপ্ত পানি থাকলে তারা জমিতে সবজিচাষসহ নানা কৃষি উপকরণ ফলাতে পারবে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমবায় কমিটির আহবায়ক সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা, কাপ্তাই উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুধীর তালুকদার, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা দয়ারাম তনচংগ্যা জানান, আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন হউক চাই, তবে এলাকার জনগণের কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় এবং সেই সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমবায় কমিটিতে তনচংগ্যা পাড়ার অধিবাসীদের আরোও বেশি করে সম্পৃক্ত করে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাঙ্গামাটি এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. তাসাউর জানান, প্রকল্পটির কারণে কোনভাবেই এলাকার কৃষি জমি, ক্ষেত্র নষ্ট হবে না। আমরা ছড়ার অংশটাকে খনন করে তার ওপরে ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবো।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করা হয়ে থাকে, কাজেই এই ক্ষেত্রে এলাকার জনগণকে সস্পৃত্ত করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ঐ এলাকায় বসবাসরত জনগণের মাঝে।
এদিকে রবিবার (২৯ নভেম্বর) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাঙ্গামাটির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. তাসাউর। এসময় উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবীসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ।