জলবায়ু পরিবর্তন মোকবেলায় কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী এশিয়া আঞ্চলিক কৃষক সমাবেশ। ২৩ আগষ্ট বুধবার শহরের অভিজাত এক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ ফার্মারস ফোরাম কৃষক সমাবেশ আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ, ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা এবং ভারতের প্রায় ৩০ জন কৃষক নেতা অংশ নেন। আগামী ২৫ আগষ্ট এশিয়া আঞ্চলিক কৃষক সমাবেশের সমাপনী।
কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মো. মজিবুল হক মনিরের সঞ্চালনায় সমাবেশের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি অন্যমত ঝুঁকিপুর্ণ একটি খাত, তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অধিকতর কার্যকর বিনিয়োগ প্রয়োজন। বীজের উপর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ স্থায়িত্বশীল খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন।
সমাবেশে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিতে ভর্তুকি, রপ্তানি প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলে তা দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়ার কৃষি প্রধান দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আত্মঘাতি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই অঞ্চলের কৃষক নেতৃবৃন্দ।
এতে উপস্থিত ছিলেন- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব কাজী সাখাওয়াত হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জাকিয়া বেগম, এশিয়ান ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস্থ্ার পেনুনিয়া, লা ভিয়া ক্যাম্পেসিনার প্রতিনিধি জয়নাল আরেফিন ফোয়াত।
সমাবেশে উল্লেখ করা হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন লোক অতি দরিদ্র, যা পুরো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ ভাগ! বিশ্বের মোট আয়ের মাত্র ২% এই এলাকায় হলেও বিশ্বের মোট দরিদ্রের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং পুষ্টিহীন ৩৫ শতাংশ মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে। দারিদ্র এবং পুষ্টিহীনতা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষকে মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এই অঞ্চলের প্রায় ৬৫% মানুষ বাস করে পল্লী অঞ্চলে এবং প্রায় ৬০ % মানুষ তার জীবিকার জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে।
দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চত করতে দারিদ্র বিমোচন করতে কৃষকদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচি। দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়ার দেশগুলোতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক দেশের ভাল উদ্যোগগুলো থেকে অন্য দেশ শিখতে পারে, নিজের দেশে সেই ভাল উদ্যোগুলো বাস্তবায়ন করে সুফল পেতে পারে। অন্যদিকে এই অঞ্চলের এক দেশের একটি সমস্যা মোকাবেলার কৌশল হয়ত অন্য একটি দেশের কৃষকের জানা আছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো এই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বিনিময় করা গেলে কৃষকদের সক্ষমতা বাড়তে পারে এবং তা প্রকারান্তরে দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চত করা ও দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি ও কৃষকের জন্য সার্কের মাধ্যমে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো সফল হতে পারিনি। সার্ক ফুড ব্যাংক এবং সার্ক সিড ব্যাংকের কথা এক্ষেত্রে উদাহরণ। আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর মধ্যে সার্বজনিন কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব বলেও মনে হয় না। তাই এই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে শক্তিশালী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
এসব দিক বিবেচনা করেই কোস্ট ট্রাস্ট এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিথযশা কৃষক নেতাদের অংশগ্রহণে এই বিশেষ আঞ্চলিক সভার আয়োজন করছে। কোস্ট ট্রাস্টের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে এশিয়ান ফারমার্স এসোসিয়েশন, ইফাদ, লা ভিয়া ক্যাম্পেসিনা, সুইস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন।
সমাবেশের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- বাংলাদেশের কৃষকদের কিছু উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ পরিদর্শন, বিভিন্ন দেশের প্রশংসিত এবং কৃষকের উন্নয়নে নেওয়া কার্যকর উদ্যোগের উপর আলোচনা এবং কৃষকদের উন্নয়নে একটি ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ।