কাপ্তাইয়ের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে প্রার্থীরা

524

| অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই |

নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে কাপ্তাইয়ের রাইখালী, কাপ্তাই ও ওয়াগ্গা ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ততই জমে উঠছে। আগামী ১১ নভেম্বর এই ৩ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে চেয়ারম্যান এবং সদস্য প্রার্থীরা বর্তমানে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। যদিও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চিৎমরম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নেথোয়াই মারমা সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় এবং কাপ্তাই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হওয়ায় অনেক প্রার্থী ভয় আর শঙ্কা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে বলে একাধিক প্রার্থীরা জানায়।

বৃহস্পতিবার খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলার ২নং রাইখালী ইউনিয়নে হেভিওয়েট ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিরামহীন ভাবে তাদের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। দূর্গম এলাকা হিসাবে চিহ্নিত এই ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক থোয়াই সা প্রু চৌধুরী (রুবেল)।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পাহাড়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় জনগণ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিবে। এদিকে এই ইউনিয়নে আনারস প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মংক্য মারমা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, বিগত সময়ে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন।

সেই ধারাবাহিকতায় তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এই ইউনিয়নের অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী এনামুল হক চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এনামুল হক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় গত মঙ্গলবার কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে বহিস্কার করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই ইউনিয়নে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং সদস্যের দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে তিনি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। তার সেই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে জনগণ তাকে ভোট দিবে। রাইখালী ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ২৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৩ হাজার ১শ’ ৩ জন। কাপ্তাইয়ের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নে বেশ সরগরম ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত দুইবারের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ। এই ইউনিয়নে তার একমাত্র প্রতিপক্ষ কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দলের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল। ইতিমধ্যে ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের আসামী হয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছেন তিনি। দৃশ্যত বাদলের কোন নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়ছে না।

এদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রকৌশলী লতিফ বলেন, বিগত সময়ে এই সরকারের আমলে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য কোন সরকারের আমলে হয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় জনগণ নৌকা মার্কাকে আবারও জয়ী করবে। এই ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১১ হাজার ৬শ’ ৪ জন।

অপরদিকে ওয়াগ্গা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান চিরনজীত তঞ্চঙ্গ্যা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিরতিহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে তিনি জানান। তার একমাত্র প্রতিপক্ষ আনারস প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী আপাই মারমা অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা তার নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। তিনি শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বড়ইছড়ি বাজার সংলগ্ন সাবেক ইউপি ভবন, ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাক্রাছড়ি জুনিয়র হাই স্কুল কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং ওইসব কেন্দ্র গুলোতে কঠোর নজরদারি বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান। এই ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ২০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার ৭ হাজার ২ শ’ ৭৪ জন।

কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দীন ও চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। যেহেতু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে, তাই তারা অনেক প্রার্থীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, যাতে এসব প্রার্থী নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারে। তাছাড়া যেকোনো প্রার্থী নিরাপত্তা চাইলে তারা সাথে সাথে তাদের নিরাপত্তা বিধান করবেন। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, কাপ্তাইয়ে অতীতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, আশা করছি এই নির্বাচনও অবাধ সুষ্ঠু হবে।