কাপ্তাইয়ে অবস্থিত ফুকির মুরং ঝর্ণা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

452

॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥
বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝর্ণার পর এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কাপ্তাইয়ে অবস্থিত ‘ফুকির মুরং’ঝর্ণাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতেই রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ঝিরি-ঝর্ণা। শুষ্ক মৌসুমে এসব ঝর্ণার পানি শুকিয়ে প্রাণ হারিয়ে যায়। তবে প্রতি বছরই বর্ষায় আবার ভরা যৌবন ফিরে পায়। এবছরও ভরা বর্ষায় যৌবন ফিরেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঝিরি-ঝর্ণাগুলোয়।

সাধারণত বর্ষার শুরু থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঝিরি-ঝর্ণায় ছুটে চলেন প্রকৃতিপ্রেমীরা এবছরও তার ব্যতিক্রম দেখা মেলেনি। রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী সুবলং ঝর্ণা, বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝর্ণার পর এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কাপ্তাইয়ের ‘ফুকির মুরং’ঝর্ণাটি। কিছুটা দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় এখনো ঝর্ণাটির সঙ্গে বেশ পরিচিতি হয়ে

উঠেনি ভ্রমণপিপাসুরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়রা ছুটে চলছেন এ ঝর্ণায়। পার্বত্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড পাগলি উপরপাড়ায় এ ঝর্ণাটি রয়েছে। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘ফুকির মুরং’ বা ‘ফকির কুয়া’। কথিত আছে,শত বছর আগে এ পাহাড়ে একজন সাধক বা ফকির ধ্যান করতেন। ফকির ধ্যান করতেন বলে অনেকে এখানে পূজা কিংবা মানত করতেন। এজন্যই এর নামকরণ হয়েছে ‘ফুকির মুরং’ বা ‘ফকির কুয়া’।

‘ফুকির মুরং’ ঝর্ণায় যেতে রাঙামাটির কাউখালীর উপজেলার ঘাগড়া বাজার থেকে ঘাগড়া-বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে চার কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পার হতে হবে। এ পথেই যেতে দেখা মিলবে পাগলিমুখ পাড়া,পাগলি মধ্যমপাড়া,সবশেষে পাগলি উপরপাড়ায় এ ঝর্ণার দেখা মিলবে। ওই এলাকায় যেতে যেতে ভ্রমণপ্রেমীরা উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ি ঝিরিতে বয়ে চলা পানির বহমান ধারা। আশপাশে পাহাড়ি গ্রামের দৃশ্যপট,বনের মাঝে পাখির কিচির-মিচির শব্দ।

সম্প্রতি ফুকির মুরং ঝর্ণায় ভ্রমণ দল নিয়ে ঘুরে এসেছেন স্থানীয় উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা। তিনি বলেন,আমরা রাঙামাটির অধিবাসী হয়েও এতদিন এ ঝর্ণাটির খোঁজ পাইনি। সম্প্রতি বিভিন্নভাবে জানতে পেরে ঝর্ণাটিতে ঘুরে এলাম। ঝর্ণাটি অসামান্য সুন্দর যা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঝর্ণাটির পাহাড়ের মাটির ভাঁজ এমন হয়েছে,দূর থেকে দেখতে একদম মানুষের মুখোমন্ডলের মতো দেখায়। তবে এলাকাটি বেশ দুর্গম হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই কষ্টের। তবে যখন প্রকৃতিকে উপভোগ করি,তখন সব কষ্টই ভুলে থাকা যায়।

আক্ষেপ করে নুকু বলেন,মুরং ঝর্ণায় অনেকে ঘুরতে এসে আশপাশে নোংরা,খাবাবের খোসা ও পলিথিন ফেলে পরিবেশ নষ্ট করেন। তাই প্রকৃতিকে উপভোগ করতে গেলে পরিবেশের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।

কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরণজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমার ইউপিতে এ ঝর্ণাটি অনেক পুরনো। তবে এতদিন এখানে মানুষের আনাগোনা ছিল না। তবে এ বছর রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ঘুরতে আসছেন। ঝর্ণাটি প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক কষ্টকর। আরো উন্নয়ন করা হলে এ সময়টাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসবেন।