কাপ্তাইয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের আজ ৫ বছর: এখনো ঝুঁকিতে শত শত পরিবারের বসবাস

258

কাপ্তাই প্রতিনিধি

আজ ১৩ই জুন কাপ্তাই তথা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জন্য একটি বিভীষিকাময় দিন। গত ২০১৭ সালের ১৩ই জুন ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে ১৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। এখনো দিনটির কথা মনে পড়লে শিহরিত হয়ে উঠেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো। ঘটনার কয়েকদিন আগ থেকে টানা বর্ষন হচ্ছিলো পাহাড়ে। কাপ্তাইয়েও টানা বর্ষনের ফলে তখন ঘরবন্দি জীবনযাপন করছিলো মানুষ। অতিবৃষ্টিতে সেইদিন কাপ্তাইয়ের সকল সড়কপথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অজানা আশঙ্কা ভর করেছিল জনমনে। হয়তো কেউ ভাবেনি তখন এমন একটা দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে।

২০১৭ সালের ১৩ জুন সকালে প্রথম কাপ্তাইবাসী শুনলো ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের কথা। এর পর থেকে একই দিন বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসতে লাগলো মৃত্যুর কথা। সেইদিন সকালে প্রথম দুঃসংবাদ আসে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি হতে। ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে সেইদিন ঐ এলাকার বসবাসরত নুরনবী সহ তার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশু পুত্র ঘটনাস্থলে পাহাড়ধ্বসে মারা যায়। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস সহ ঐ এলাকায় ছুটে যান তদান্তিন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম এবং ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী।

এরপর একে একে ওয়াগ্গার মুরালীপাড়া, রাইখালির কারিগর পাড়া এবং চিৎমরম হতে পাহাড়ধ্বস ও মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। সেইদিনের পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে প্রাণ হারায় সর্বমোট ১৮ জন। পাহাড়ী ঢ়লে তলিয়ে যায় শত শত একর সবজি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ী। দিনটি ছিলো একটি দুঃসপ্নের দিন কাপ্তাইয়ে বসবাসরত মানুষের। কিন্তু কাপ্তাইয়ের আজ পাহাড় ধ্বসের ৫ বছর পার হলেও এখনো কাপ্তাইয়ের অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার।

এইছাড়া ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়ি সহ দূর্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে অনেক পরিবার। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদেরকে প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসা হলেও এই সব পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা যায়নি। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক করে আসছে। অতিবৃষ্টি হলে আমরা এদেরকে নিকটস্থ স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে প্রানহানী না ঘটে।

তিনি জানান, আমরা সবসময় কাপ্তাই, রাইখালী এবং ওয়াগ্গা ইউনিয়নে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছি যাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। এবিষয়ে ৪নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলে আমরা অজানা আতংকে থাকি, বিশেষ করে তাঁর ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। তিনি জানান, অতিবৃষ্টি হলে আমরা তাদেরকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে এনে আশ্রয় দিই এবং তাদের খাবার পরিবেশন করে থাকি।

কিন্ত এটা কোন স্থায়ী সমাধান না, তাই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে কোন নিরাপদ জায়গায় পূর্নবাসন করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। এদিকে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে যদি কাপ্তাইয়ের পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করা মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা না হয়, তবে আবারো এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।