॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, কিছু কিছু এনজিও মাইক্রোক্রেডিটের নামে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের অর্থ ঋণ প্রদান করে নিরাশা ও হতাশার ধুম্রজাল তৈরি করে মানুষদের সর্বসান্ত করছে। তিনি বলেন, বিদেশী সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণতঃ মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু এনজিও প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষতি সাধন করে চলেছে একটি শ্রেণি। তিনি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থেকে মানুষের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টদের।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর গুলশানে হোটেল সিক্স সিজনে আয়োজিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপি যৌথ উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা-পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণে পার্টনারশিপ ফর রেজিল্যান্ট লাইভলিহুডস ইন সিএইচটি রিজিওন (পিআরএলসি) প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমন মন্তব্য করেন।
এনজিও কর্মীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়ে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং আরও বলেন, চার বছরের প্রকল্পের চাকরির কথা মাথায় রেখে কাজ করলে চলবে না। আপনাদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট এনজিও সংস্থা প্রধানদের লক্ষ্য করে বলেন, প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ শুধুমাত্র বরাদ্দের অধিকাংশ কর্মীদের বেতনভাতার পিছনে খরচ দেখিয়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করলে চলবে না। একটি প্রকল্পের উন্নয়নের যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন তা সঠিকভাবে নিরূপণ করে করতে হবে। নচেৎ উন্নয়ন কাজ এগুবে না। যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বেতন ভাতা নিচ্ছেন প্রকল্পের চাকরি শেষ হয়ে গেলে তাদের জীবন যাত্রার মান আরও দুর্বিসহ হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন পার্বত্য মন্ত্রী। তিনি দারিদ্র্যবিমোচনের কাজের পাশাপাশি ঐসব কর্মীদের কথাও ভাবার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। এছাড়া স্থানীয় বেকার যুবক যুবতীদের এনজিও কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করারও পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, এতে করে আপনাদের কাজের গুণগত মান আরও ভালো হবে।
পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশী দাতা সংস্থা বা এনজিও প্রতিষ্ঠান কোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রকল্পের বিষয়ে সমন্বয় করে নিতে হবে। তিনি বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের কাজের সার্বিক দিক সম্পর্কে অবহিত ও সম্পৃক্ত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের উন্নয়নের জন্য এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দাতা সংস্থার কাজে সহায়তা করবে বলে মন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউএনডিপি দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের সাথে শুরু থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে। আশা করছি তাদের নতুন গৃহীত উদ্যোগটি সফল হবে এবং এ প্রকল্পে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে নতুন এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দাতা সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের চলমান সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানের সভা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্য নিরূপা দেওয়ান। অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব মিশন মিস্টার চার্লস হোয়াইটলি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা, ইউএনডিপি’র ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি মিজ ভ্যান নুয়েন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। উপকারভোগীদের মধ্যে অনুভূতি শেয়ার করেন বান্দরবানের মাওসাং মারমা, রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের মনিকা চাকমা ও রাঙামাটির রাজস্থলীর আকলিমা খানম।