স্টাফ রিপোর্টার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি) : পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ৮ গণসংগঠন- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড এর কনভেনিং কমিটির ডাকে খাগড়াছড়ি জেলায় আজ মঙ্গলবার ১ ডিসেম্বর আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ও ’৭১ সালে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার (২৯ নভেম্বর) খাগড়াছড়িতে ৮ গণসংগঠনের আয়োজিত ছাত্র-যুব-নারী সংহতি সমাবেশ সেনা-পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ও আটক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
অবরোধের কারণে জেলা সদর ও উপজেলাসমূহ হতে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। অভ্যন্তরীণ সড়কেও তেমন যান চলাচল করেনি।
অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী ব্যাপক তৎপরতা চালায়। বিভিন্ন স্থানে হুমকিমূলক সেনাটহল বাড়ানো হয়। অবরোধ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে ভোররাত ৩টায় মাটিরাংগা উপজেলার আলুটিলার রিছাং ঝর্ণা এলাকার হৃদয় মেম্বার পাড়া থেকে সেনাবাহিনী দীপঙ্কর ত্রিপুরা, প্রদীপ ত্রিপুরা, বট্ট ত্রিপুরা, সুরেশ চাকমা ও নয়ন চাকমা নামে ৫জন ছাত্রকে আটক করে নিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া-স্বনির্ভর-খবংপুয্যা এবং পানছড়ি, দীঘিনালাসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী হুমকিমূলক অবস্থান নিয়ে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করে। অবরোধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দীঘিনালার গার্লস স্কুলের পাশের এলাকা থেকে রুপেন চাকমা নামে দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজের এক ছাত্রকে আটক করা হয়। এছাড়া পানছড়িতে অন্তর চাকমা নামে অপর একজনকে আটক করা হয়েছে।
অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক সোনালী চাকমা ও সদস্য সচিব অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে জেলা সদর ও উপজেলাসমূহের সকল যান মালিক সমিতি, চালক-শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা ফিলিস্তিন সংহতি দিবসের সমাবেশে হামলার ঘটনাকে বর্বর উল্লেখ করে বলেন, সেনাবাহিনীর কায়েমী স্বার্থবাদী অংশটির ইন্ধনে অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ বর্বর নিপীড়ন চালানো হয়েছে তা যে আজো চলমান রয়েছে তা গত রবিবার খাগড়াছড়ি সদরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপর বেধড়ক লাঠিপেটা, বেয়নেট চার্জ করে গুরুতর জখম ও আহত করার ঘটনাই প্রমাণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন বলতে এখন আর কিছুই নেই। সবকিছু এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে। সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক দমনমূলক ১১ নির্দেশনা জারির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনকে বৈধতা দিয়েছে, যার মাধ্যমে সেনাবাহিনী এভাবে বর্বর নির্যাতন, অন্যায় ধরপাকড় চালাচ্ছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আটক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি, সমাবেশে হামলার সাথে জড়িত সেনা-পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা বাতিলপূর্বক অন্যায় ধরপাকড়, নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করা এবং সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিঙে সেনা হস্তক্ষেপ বন্ধ করে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
বার্তা প্রেরক- থুইক্যচিং মারমা
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান