॥ আল মামুন, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়িতে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ৯ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলম মোবাইল মার্কা নিয়ে পেয়েছেন ৮ হাজার ৭শত ৪৯। আর বিএনপির প্রার্থী ইব্রাহীম খলিল ধানের শীষ মার্কা পেয়েছেন ৪ হাজার ৩শত ৮ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ লাঙ্গল মার্কা পেয়েছেন ১৮৪ ভোট। রাত পৌনে ৮টায় রিটার্নিং অফিসার রাজু আহমেদ এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এছাড়া ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা অতীশ চাকমা (দ্বিতীয়বার) আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা মানিক পাটোয়ারী, ৩নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা শাহ আলম (দ্বিতীয়বার), ৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চুমনি চাকমা, ৫নং ওয়ার্ডে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)’ জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুল মজিদ (দ্বিতীয়বার), ৬নং ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা মংরে মারমা (দ্বিতীয়বার), ৮নং ওয়ার্ডে পৌর আওয়ামী লীগের সা: সম্পাদক পরিমল কর্মকার (দ্বিতীয়বার) এবং ৯নং ওয়ার্ডে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিটন তালুকদার নির্বাচিত হয়েছেন। সংরক্ষিত তিনটি মহিলা কাউন্সিলর পদে শাহিদা আক্তার, উক্রাঞো মারমা নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে শনিবার (১৬ জারুয়ারী) খাগড়াছড়ি পৌরসভায় সকাল ৮টায় উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ১৮ ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ভোটারদের ঢল নামে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে মহিলা ভোটারের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিলো। আর সব স্বাভাবিক ভাবে চললেও দুপুর সোয়া ২টার দিকে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলম উপস্থিত হলে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
শনিবার (১৬ জানুয়ারী) সকালে ভোটের শুরুতে সকাল সাড়ে ৮টায় খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজে কেন্দ্র আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী তার ভোট দেন। এছাড়াও ৮টা ১০ মিনিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম খাগড়াছড়ি শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও বিএনপির প্রার্থী ইব্রাহীম খলিল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভোট দেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম অভিযোগ করে বলেন, ভোটের আগের রাত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকজন পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা চেষ্টা করেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো: ইব্রাহিম খলিল বলেন, ভোটাররা আতংকের মধ্যে ভোট দিয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভায় সবক’টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ভোটার বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। র্যাব ও বিজিবি’র স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিলো। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সাথে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয় পুরো শহর। এবার প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে।
এই নির্বাচনে সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে ভোটার সংখ্যাও। প্রথম বারের মত ইভিএমএ এর সাথে পরিচিত হওয়া নিয়েও শেষ নেই ভোটারদের আগ্রহ ও কৌতুহলের। ফলে এই পৌর নির্বাচন উৎসবের মধ্যে আরেক নতুন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে ইভিএম নিয়ে নানা আশঙ্কাও রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটে দিতে ভুগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে ভোটাররা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৭ জন। নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭ শ ৩৬ জন এবং পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৩ শ ৫১ জন।