॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অ্যাসফাল্ট ব্যাচমিক্স প্ল্যান্টের মাধ্যমে বানানো হচ্ছে সড়ক নির্মাণের বিটুমিনাস উপকরণ। পেভার মেশিন, কম্প্রেসার, রোলার মেশিনসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সড়কে সারফেস ওভারলেয়িং এর কাজ হওয়ায় কাজের গুনগত মান বজায় থাকার পাশাপাশি সড়ক হবে টেকসই। এতে প্রতি কিলোমিটার সড়কে ব্যয় হচ্ছে কোটি টাকা। সড়কে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ হওয়ায় সন্তুষ্টি জানিয়েছে পরিবহন চালকরা।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে ৩৯৭ কিমি সড়কের অধিকাংশই উঁচু নিচু পাহাড়ি এলাকা বেষ্টিত। ভূপ্রাকৃতিক গঠনের কারণে পাহাড়ি সড়ক নির্মাণে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে। ৮০’র দশকে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে পার্বত্য অঞ্চলের সড়ক নির্মাণ করা হয়। অতীতে সনাতনী পদ্ধতিতে সড়ক নির্মাণ হওয়ায় তা বেশি টেকসই হত না।
তবে এবার খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থেকে মাটিরাঙা পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিমি সড়কে ‘সারফেস ওভার লেয়িং’ এর কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এই কাজে অ্যাসফ্লাট ব্যাচমিক্স মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। সড়ক মেরামতের কাজ পায় চট্টগ্রামের মের্সাস তাহের ব্রার্দাস। বর্তমানে সড়কের প্রায় বেশীর ভাগ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,‘ সম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অ্যাসফ্ল্টা ব্যাচমিক্স প্ল্যান্টের মাধ্যমে বানানো হচ্ছে সড়কের সারফেস ওভার লেয়িং এর উপকরণ। এতে সঠিক তাপমাত্রায় মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সড়কের এসব ব্যবহার করা হচ্ছে পেভার ফিনিশিং। পেভার ফিনিশিং সড়কের উপরিভাগে সমানভাবে ওভার লেয়িং করে। এতে দিনে অন্তত দেড় কিলোমিটার সড়কে সারফেস ওভার লেয়িং করা হয়। এতে সড়ক অত্যন্ত টেকসই ও মৃসণ হয়। এছাড়া কাপেটিংয়ের আগে সনাতন পদ্ধতিতে রাস্তা পরিষ্কারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কম্পপ্রেসার মেশিন। নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে রাস্তার কাজে গুনগত মান রক্ষা হচ্ছে।
সড়ক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা জানান , অত্যাধুনিক ফেভার মেশিন দিয়ে কাজ করায় কাজের মান ভালো। সড়কে সঠিকভাবে নিয়মঅনুযায়ী কাপেটিং করা যায়। দিনে দেড় কিমি সড়ক কাপেটিং করা যায়।
সড়ক মেরামতের কাজে নিয়োজিত তদারকি কর্মকর্তা এস এম শামীম রানা জানান, পাহাড়ি সড়কে আমরা হেভি ইকুপমেন্ট ব্যবহার করছি। এর ফলে কাজের গতি বাড়ে। সনাতন পদ্ধতিতে কাপেটিং করলে কাজের মান ভালো থাকে না।
সড়কের নির্মাণ কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সন্তুষ্টি জানিয়েছে স্থানীয়রা। আগে সড়কে খানাখন্দ থাকলেও এখন তা নেই। কমেছে ভোগান্তি। সড়কে বাস ও সিএনজি চালকরা জানান ,আগে সড়কে দুঘর্টনা ঘটত। খানাখন্দে ভরা ছিল। পাহাড়ি সড়ক হলেও তা মৃসণ না থাকায় লাফালাফি হত বেশি। এখন যেভাবে রাস্তার কাজ হচ্ছে তার গুনগত মান ভালো হচ্ছে। যাতায়াতে আগের চেয়ে কম সময় লাগে।’
এখন থেকে পাহাড়ি সড়কে আর সনাতনী পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজ করতে দেয়া হবে না জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কাজের গুনগত মান রক্ষা ও টেকসই রাস্তা সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা আধুনিক প্রযুক্তি।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান,সড়কে সারফেসিংয়ের কাজে ব্যাচমিক্স মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সড়ক মেরামত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ নেটওর্য়াক তৈরি করছি।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান,খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। খাগড়াছড়ি-হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। গতানুগতিক প্রযুক্তির বাইরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আবশ্যাক করেছি। এতে বিটুমিনাস কাজের গান অনেক ভালো। মন্ত্রণালয় ও প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজের মান রক্ষা করছি।