খালেদা জিয়ার বক্তব্য বিকৃতি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা : সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

444

DSC_0643 m„m„

ঢাকা ব্যুরো অফিস, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি) : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিকৃতি করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সরাতে চায় বলেই প্রতিহিংসা থেকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করিয়েছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সংগে স্পষ্টভাবে বলতে চাই- এই মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার জন্য হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার বক্তব্যের মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার চিহ্ন মাত্র নেই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ১০টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতি, নাশকতাসহ সর্বশেষে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দায়ের করে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ দেশনেত্রীকে ভয় পায়। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করে রাজনীতি থেকে দুরে রাখতে চায়।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের কিছু সংখ্যক তথাকথিত বুদ্ধিজীবি ও নেতৃবৃন্দ যখন বক্তব্যের অপব্যাখা করে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছিলাম পরপরই। তারপর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়। গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়র ইনস্টিটিউশনে মুক্তিযোদ্ধা দলের একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “ আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।”
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৩ মার্চ হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। তার আগের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলাটি দায়ের করার অনুমতি প্রদান করেন। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদারের আদালত। বিএনপির এই নেতা বলেন, চেয়ারপারসনের বক্তব্যের উদ্ধৃত অংশটি ছিলো- মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সঠিক সংখ্যা নিরুপণের  জন্য যাতে করে শহীদদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা যায়। খালেদা জিয়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, নিজে দীর্ঘদিন পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর কারাবন্দী ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শুধু শ্রদ্ধাশীলই নন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মর্যাদা সংরক্ষণ করেছেন। তাদের পরিবারবর্গ ও সন্তানদের সার্বিক কল্যানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন যা অতীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও করেননি। বেগম জিয়ার সরকার সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য স্মৃতিস্থাপনা নির্মান করেছিলেন। ফখরুল বলেন, রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গিয়ে শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করবার ভয়াবহ চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনও সময় আছে- দেশকে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সকল রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। একই সঙ্গে, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন করতে হবে। অন্যথায় দেশে অরাজনৈতিক শক্তি, চরম উগ্রবাদ প্রাধান্য বিস্তার করবে – যা কারও জন্য কল্যান বয়ে আনবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লা মিয়া, সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান