গত বছরের তুলনায় উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ ৩০কোটি টাকা কমে যাওয়ায় জনমনে ক্ষোভ

550

॥ আনোয়ার আল হক ॥

সারাদেশে যখন বিভিন্ন দফতর তাদের এডিবি’র অর্থ খরচ করে কুলাতে না পারার কারণে সরকার সমালোচনায় পড়ছে। তেমনি প্রেক্ষাপটে শতভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কৃতিত্ব দেখানোর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অনকুলে এডিবি বরাদ্দ বিগত বছরের তুলনায় ৩০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও বোর্ডের পরামর্শক কমিটি। জনপ্রতিনিধিদের মতে, বিশেষ করে গেলো অর্থ বছরে ভয়াবহ পাহাড় ধসের কবলে পড়ে যখন তিন পার্বত্য জেলা ক্ষত বিক্ষত তখন এমন নজিরবিহীন ঘটনা হতাশ করেছে পার্বত্যবাসীকে।

জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্র ও পত্রপত্রিকা থেকে জানতে পারছি, সারাদেশের প্রায় সকল সেক্টরেই বরাদ্দের পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ানো হয়। সেখানে ধসের কবলে পড়া পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রামকে বঞ্চিত করার জন্য সরকারের ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মহল বিশেষের যড়যন্ত্র বলে মনে করেন তারা। এজন্য মন্ত্রণালয়ে নবযোগদান করা সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জনপ্রতিনিধিরা।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প বাছাই সম্পন্ন করেছে উন্নয়ন বোর্ড। রোববার অনুষ্ঠিত বোর্ডের পরামর্শক কমিটি সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার পর চলতি অর্থ বছরে বাস্তবায়ন যোগ্য প্রকল্প সমূহ চুড়ান্ত করা হয়।

তবে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উন্নয়ন বোর্ড থেকে তেমন কোনো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিগত দু’বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলমান প্রকল্প সমূহকেই শেষ করার লক্ষ্যে এডিবি’র সিংহভাগ বরাদ্দ ছাড় করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায় এ বছর বিগত বছরের তুলনায় এডিবি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে ৩০ কোটি টাকা কম বরাদ্দ আসায় নতুন প্রকল্পে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ জানান, এ বছর (২০১৮-১৯ অর্থ বছরে) এডিবি বাস্তবায়ন কোড নং-৭০৩০ এর আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। সে অনুযায়ী কোড ৭০৩০ এর অনুকূলে বরাদ্দ ৩০ কম এসেছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন পরবর্তীতে পুণঃপর্যালোচনা করে প্রয়োজনে এই বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

বরাদ্দ কম কেন এসেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টির সাথে অনেকগুলো কর্তৃপক্ষ জড়িত, নিশ্চয়ই তারা যুক্তির আলোকেই বরাদ্দ কম রেখেছেন। তিনি জানান, আমরা আপাতত চলমান প্রকল্পগুলি শেষ করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

রোববার সকাল ১১.০০ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সভা রাঙামাটিতে বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি সভায় সভাপতিত্ব করেন।

প্রসঙ্গত, বোর্ডের রেওয়াজ অনুযায়ী প্রত্যেক বছর নতুন অর্থ বছরের শুরুতে প্রকল্প পর্যালোচনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট পরামর্শক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে পরামর্শক কমিটির সভা চেয়ারম্যান।

এতে সদস্যবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন, তিন পার্বত্য জেলার তিনজন সার্কেল চীফ, তিন পার্বত্য জেলার তিনজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলার তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলা তিনজন হেডম্যান এবং তিন পার্বত্য জেলার তিনজন বেসামরিক গণ্যমান্য ব্যক্তি।

রোববার অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল গত বছরের ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত পরামর্শক কমিটি সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য উন্নয়ন সহায়তা (কোড নং-৭০৩০) এর আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুন স্কিম/প্রকল্প বাছাই এবং বিবিধ আলোচনা। সভায় বোর্ডের চেয়ারম্যান পরামর্শক কমিটির সকল সদস্যকে বোর্ডের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্প/স্কিম বাস্তবায়ন কাজ তদারকি ও পরিদর্শনের আহবান জানান।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ (অতিরিক্ত সচিব), সদস্য- অর্থ শাহীনুল ইসলাম (যুগ্মসচিব), সদস্য প্রশাসন আশীষ কুমার বড়ুয়া (যুগ্মসচিব), সদস্য-পরিকল্পনা ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী (উপসচিব), সদস্য- বাস্তবায়ন মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ (উপসচিব)।  এ ছাড়া উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শক কমিটি সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম.চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা, বাঘাইছড়ি উপজেলা খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অমলেন্দু চাকমা, রাঙামাটি জেলার ১১৯ নং ভার্য্যাতলী মৌজা হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, খাগড়াছড়ি জেলার ২৪২ নং পুজজগাং মৌজা হেডম্যান সুইহ্লাপ্রু চৌধুরী, রাঙামাটি জেলার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাদল চন্দ্র দে, খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ভূবন মোহন ত্রিপুরাসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।