ঢাকা ব্যুরো অফিস, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : দেশের বিভিন্ন স্থানে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রাজাকার পুত্র ও বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নাম থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
অনেক জেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা করছে নেতাকর্মীরা। পরাজয় ঠেকাতে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট থানা বা জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে অনেকেই দলীয় সভানেত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
এ পরিস্থিতি দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় হলেও অবাক হওয়ার মত বিষয় যে, প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা গোপালগঞ্জও এই প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে নেই। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের কেউ যেন আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসতে না পারে। এ প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে জেনেছেন প্রধানমন্ত্রীর জেলা গোপালগঞ্জের হরিদাশপুর ইউনিয়নের শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য মৃত নুরুল হক মুন্সীর ছেলে মকিতুজ্জামানকে তৃণমূলের সর্মথন না থাকার পরও চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয়ে হয়েছে। এর ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে প্রাণবাজী রেখে যুদ্ধ করেছি। আজ তার দল থেকেই রাজাকাপুত্র নির্বাচন করছে। আওয়ামী লীগের মত দলে নেতা-কর্মীর কি এতই আকাল পড়েছে যে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের দোসরদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে এনে নির্বচান করাতে হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘ ১৯৭১ সালে নুরুল হক মুন্সী তার নিজ গ্রামে ৪জনকে হত্যা করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক আঃ হামিদ কাজীর বড়ভাই আঃ খালেক কাজীর মেঝো ছেলে আলাউদ্দিন কাজীকে হত্যা করে শান্তি কমিটির সদস্য রাজাকার নুরুল হক মুন্সী।
এলাকার সাধারণের সকলেই একবাক্যে বলেন, ‘কেন কী কারণে নব্য আওয়ামী লীগার রাজাকার পুত্র মকিত মুন্সীকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হলো তা বোধগম্য নয়। জানা যায়, এর প্রতিবাদের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মানব বন্ধনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হরিদাশপুরের তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘গোপালগঞ্জের রাজাকার মকিত মুন্সীর পিতা মৃত রাজাকার নুরুল হক মুন্সীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর বাল্যবন্ধু আঃ মালেক গাজীর বড়ভাই আঃ আলী গাজী এবং তার ছেলে মিন্টু গাজীকে নৃশংসভাবে হত্য করা হয়। তিনি জানান, আঃ রাজ্জাক ছিলেন আনসার কমান্ডার, তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতেন।
পাকি দোসর নুরুল হক মুন্সী রাজাকারদের দলবল নিয়ে আঃ আলী গাজী ও তার ছেলে মিন্টু গাজীকে রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় আঃ আলী গাজীর ভাই ওদুদ গাজীকে বলে, ‘তোমার ভাই আঃ রাজ্জাকের কাছে রাইফেল আছে, তা নিয়ে এলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে। এমতাবস্থায় ওদুদ গাজী রাইফেল নিয়ে আসার পর তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এখানেই নুরুল হক মুন্সীর বর্বরতরা শেষ নয়। নুরুল হক মুন্সী ভেড়ার বাজার নিবাসী দোকানদার ননী গোপালকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ননী গোপালের অপরাধ ছিল তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খওয়াতেন। মকিত মুন্সীর পিতা নুরুল হক মুন্সী ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপালগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামের কাজী ইসরাইল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা বকুল শেখ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শেখ ও মুক্তিযোদ্ধা গাজী আঃ রাজ্জাক এর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।
রাজাকার নুরুল হক মুন্সীর ছেলে মকিত মুন্সী আওয়ামী লীগের প্রার্থী অন্যদিকে মকিত মুন্সীর চাচাতো ভাই বুলা মুন্সী হরিদাশপুর বিএনপির সভাপতি।
স্থানীয় জনসাধারণ ও আওয়ামী নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘রাজাকারপুত্র মকিত মুন্সীর মনোনয়ন বাতিল না করলে এ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কেউ নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু রাজাকারকে মনোনয়ন দেয়ার কালিমা থেকে আওয়ামী লীগ মুক্ত হতে পারবে কী।
সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান