গত বছরের পাহাড় ধসের রেশ ধরে এবার কাঙ্খীত পর্যটক পায়নি প্রকৃতির রাণী রাঙামাটি। এমনকি ঈদের ছুটিতেও এবার রাঙামাটিতে পর্যটকের তেমন একটা আনাগোনা ছিল না।
পরপর দুই বছর ধরে জেলায় পর্যটক না আসায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে এই শিল্পের সাথে সাথে জড়িতরা। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধস, প্রবল বর্ষণ পরবর্তী ২০১৮ সালেও তারই পূনরাবৃত্তি, বৈরি আবহাওয়া এবং সড়ক পথ বেহাল থাকার কারণে পর্যটকের অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ।
এছাড়া পাহাড়ে সশস্ত্র আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারে নিজেদের ত্রাসের রাজস্ব কায়েম, চাঁদাবাজি, হত্যা এবং গুমের কারণে পর্যটকরা এ অঞ্চলে না আসায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাথায় বাজ পড়েছে। নিরাপত্তা ও নানা অফিসিয়াল জটিলতার কারণে বিদেশীদের উপস্থিতি এ অঞ্চলে নেই বললেই চলে।
তাই জেলার পর্যটকদের জন্য মন মাতানো স্থান পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স’র ঝুলন্ত সেতু, ডিসি বাংলো পার্ক, পুলিশ পলওয়েল পার্ক, সুখী নীল গঞ্জ, কাপ্তাই সংযোগ সড়কের পর্যটন স্পট, টুকটুকি ইকো ভিলেজ, সুবলং ঝর্ণায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো সীমিত।
আর এসব গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তারা এবার গত বছরের ন্যায় অলস সময় পাড় করছে। পাহাড়ি ঐতিহ্যর পোশাক টেক্সাটাইল মার্কেটগুলো গত বছরের ন্যায় এবারো বিকিকিনি নেই। তাই এ ব্যাবসার সাথে জড়িতরাও এবার লোকসানের মুখে পড়েছে।
দু’বছর ধরে প্রাকৃতিক দূর্যোগ তথা পাহাড় ধস, টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ের সশস্ত্র আঞ্চলিক দলগুলোর ত্রাসের কারণে পুরো জেলায় এখন আতংক বিরাজ। যে কারণে এ জেলায় পর্যটক না আসায় পর্যটন ব্যবসার সংশ্লিষ্টরা পুঁজি হারাচ্ছে দিনদিন।
অনেকে পর্যটন ব্যবসা ছেড়ে বিকল্প পেশা গ্রহণ করেছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে আর আগের মতো বুকিং চোখে পড়ে না। তবে কম দামী কিছু হোটেল- েেমাটেল বুকিং থাকলেও ভিআইপি বা ভিভিআইপি মোটেলগুলোতে বুকিং নেই বললে চলে।
ঢাকা জেলার সাভার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বেসরকারি চাকরীজিবী বজলুর রহমান জানান, তারা কয়েকজন বন্ধু মোটরবাইক নিয়ে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছেন এবং এ জেলার পাহাড়-হৃদের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কয়েকদিন থাকবেন।
বজলু বলেন আমার সাথে বন্ধু নুরুজামান, মাহফুজ আহম্মেদ সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। পর্যটক মাহফুজ বলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা কয়েকবন্ধু মিলে প্রতি বছর কোন না কোন জেলা সফর করি। এবার আমাদের সফর ঠিক করেছি পাহাড়-হৃদের শহর রাঙামাটিতে।
কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের, আমরা যে রাঙামাটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে বেড়াতে এসেছি তার তেমন কিছু দেখতে পারেনি। ভূমি ধসে অনেক ক্ষতি হয়েছে এ জেলার। বিশেষ করে সড়কগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন মূহর্তে দূর্ঘটনায় কবলিত হতে পারে যে কোন যানবাহন।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সূর্যসেন ত্রিপুরা বলেন, এবারের ঈদের মৌসুমে রাঙামাটিতে তেমন উল্লেযোগ্য পর্যটক নেই। ভূমি ধস আতংক এবং প্রবল বর্ষণের কারণে এ জেলায় পর্যটকের আনাগোনা কমে গেছে। তাই গত বছরের ন্যায় এ বছরও সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
রাঙামাটি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, প্রাকৃতিক দূর্যোগের উপর কারও হাত নেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে পর্যটন স্পটগুলো যেমন মারাত্বক ক্ষতি হূেয়ছে তেমনি বাইরে আসা পর্যটকরা আতংকিত হওয়ায় এ জেলায় পর্যটকের আনা-গোনা কমে গেছে।
এছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি পাহাড়ের সশস্ত্র দলগুলোর হত্যা, চাঁদাবাজি, খুন, গুমের কারণেও পর্যটকরা এ জেলায় না আসার অন্যতম কারণে বলে তিনি জানান। এ কারণে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প গত বছর থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে তিনি যোগ করেন।