ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে ডিএমপি কমিশনার: আইন না মানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে

368

স্টাফরিপোর্ট- ৭ অক্টোবর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি): সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের অসতর্কতা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষতা, পেশাদারিত্বের অভাবের পাশাপাশি পথচারীদের জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার, আন্ডারপাস ব্যবহারে অনীহা, আবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, নাগরিক দায়িত্ববোধের অভাব এবং সর্বোপরি আইন না মানার সংস্কৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। নিরাপদ সড়কের জন্যে সবার আইন মানার সংস্কৃতি ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। আজ বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে মক স্পীকার ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে এখনও পুলিশ হাত উঁচিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। মানসম্পন্ন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশের শহরগুলোতে ৮ শতাংশের বেশি রাস্তা নেই। যে কারণে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন বাংলাদেশে চালকদের লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। নেই কোনো আধুনিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রত্যেকটি সড়ক দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে ছিন্নভিন্ন, অসহায় করে তুলছে। অপরিকল্পিত সড়ক-মহাসড়ক, মহাসড়কের উপর হাটবাজার ও চাঁদাতোলার নামে হুটহাট গাড়ি থামানো, হাইওয়েতে ধীরগতির গাড়ি নসিমন-করিমন, ভটভটির অবাধ চলাচল, আইন প্রয়োগকারী কিছু ব্যক্তির অনৈতিকতা, লাইসেন্স বিহীন চালক দ্বারা গাড়ী চালানো, অ-অনুমোদিত ও ফিটনেস বিহীন গাড়ী, পথচারীদের অসতর্ক চলাফেরাÑ সর্বোপরি চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চালকদের পাল্লাপাল্লি এবং কার আগে কে যাবে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া এবং চালকদের বিরামহীন গাড়ি চালানোও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে প্রতি চারঘন্টা অন্তর গাড়িচালকদের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ এবং দিনে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর বিধান রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে একজন চালকের গাড়ি চালানোর কর্মঘণ্টা বলে কিছুই নেই। গড়ে প্রতিনিয়ত একজন গণপরিবহনের ড্রাইভারকে ১২-১৬ ঘন্টা গাড়ি চালাতে হয়। জনাব কিরণ আরও বলেন, বছরে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে ২৫ হাজার ৯০৩ জন মানুষ। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় দৈনিক গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৭১ জন। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে বলা হয়েছে দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছে ৬৪ জন। এদিকে প্রতিবছরের সড়ক দুর্ঘটনার কারণে জিডিপির দেড় থেকে দুই শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিযোগিতায় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের সার্টিফিকেট ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মঈনুল আলম, ফ্রী-ল্যান্স সাংবাদিক জাহিদ রহমান, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম মোরশেদ, ড. তাজুল ইসলাম তুহিন এবং সাংবাদিক আহমেদ সারোয়ার।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।