তিনদিনের ব্যবধানে দু’বার রাঙামাটিতে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ভূয়া খবরে ধূম্রজাল

245

॥ আলমগীর মানিক ॥

রাঙামাটি জেলায় তিনদিনের ব্যবধানে পরপর দুইটি বন্দুক যুদ্ধে নিহতের ভূয়া খবর ছড়িয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় তিনজন এবং অপর ঘটনায় ছয়জন নিহত হবার খবর রটে গেলেও, শেষ পর্যন্ত এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এভাবে গুজব ছড়ানোর পিছনে মূলত কারা দায়ী তা নিয়েও সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বাঘাইছড়িতে জেএসএস-ইউপিডিএফ এর মধ্যে সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তথ্যমতে, বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের উত্তর জারুলছড়ি দুলুবনিয়া এলাকায় শুক্রবার ভোর পাঁচটায় গোলাগুলির শুরু হয়ে আনুমানিক দুই ঘণ্টা এই বন্দুকযুদ্ধ চলে। এতে উভয়পক্ষে হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় হয় বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রগুলোও দুইঘন্টার বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে বলে জানালেও কেউ নিহত হবার তথ্য কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি। কিন্তু অন্তত: তিনজন নিহত হবার খবর রটে যায়।

বন্দুকযুদ্ধের এই ঘটনার বিষয়ে সেনা বাহিনী, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ-জেএসএস এর দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর সাথে কথা বলা হলেও কেউই নিহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ঘটনাস্থল দুলুবুনিয়া এলাকাটি ইউপিডিএফর এর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সেখানে সংগঠনটির একটি সশস্ত্র দল অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে পতিপক্ষ জেএসএস এর একটি সশস্ত্র দল হামলা চালালে ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকেও পাল্টা গুলি চালানো হয় বলে সূত্র জানায়। উভয়পক্ষের মধ্যে অন্তত দুই ঘন্টাব্যাপী সহ¯্রাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইউপিডিএফর দুইজন এবং জেএসএস এর একজন নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া ও আঞ্চলিকদলগুলোর দ্বারা পরিচালিত ফেসবুকের বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে প্রচারনা চালানো হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় মুখপাত্র অংগ্যা মারমা জানিয়েছেন, আমাদের কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জেএসএস। এতে ইউপিডিএফ’র কোনো নেতাকর্মী হতাহত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। যে খবরটি প্রচার করা হয়েছে সে খবরগুলোকে ভূয়া খবর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর বাঘাইছড়ি উপজেলার নেতা ত্রিদিব চাকমা জানিয়েছেন, আমাদের সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলি করা হয়েছে এবং আত্মরক্ষার্থে সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হয়েছে, কিন্তু এতে আমাদের কোনো নেতাকর্মী হতাহত হয়নি।
বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আমরা গুলি বিনিময়ের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু হতাহতের কোনো সত্যতা পাইনি। তিনি জানান, কে বা কারা নিহতের খবর ছড়িয়েছে সেটি আমি জানি না।

এদিকে, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সেনারিজিয়নের দায়িত্বশীল দুইজন উর্দ্বতন কর্মকর্তা ও রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর কাছে জানতে চাইলে তারা কেউই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন।

পক্ষান্তরে, একজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খবর পাওয়ার পর বাঘাইছড়ির ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন গিয়ে নূন্যতম কোনো আলামত পায়নি।

এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিনদিন আগে গত ২৪ আগস্ট কোনো প্রকার নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমান ছাড়াই শুধুমাত্র ফেসবুকের ষ্ট্যাটাস দেখেই মিডিয়ায় রাঙামাটির লংগদুর ছোট কাট্টলীতে ৬ জন মারা গেছে এমন খবর প্রচার তরে। এরপর আজ (শুক্রবার) আবারো একটি টিভি চ্যানেলে তিনজন নিহতের খবর প্রচার করা হলো। এই ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার করে কার বা কোন সংগঠনের পারপার্স সার্ভ করা হলো? এমন প্রশ্ন করে উক্ত কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার করার মানে হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্থিত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা। এটা আমাদের কারো জন্যই মঙ্গলজনক কিছু বয়ে আনবে না।