নানাক্রম-বুড়িঘাট সড়কে বদলে যাবে নানিয়ারচরের হাজারো পরিবারের জীবনযাত্রা

413

।। নানিয়ারচর প্রতিনিধি ।।

অবহেলাভরে পড়ে আছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার দুর্গম নানাক্রম-পলিপাড়া-বুড়িঘাট সড়ক। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বদলে যাবে অত্র এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের জীবনযাত্রার মান। নানিয়ারচর উপজেলার সাথে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ থাকলেও উপজেলা বা জেলার সাথে নানাক্রম-পলিপাড়া-বুড়িঘাট এলাকার নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ফলে যাতায়াত কিংবা পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অত্রাঞ্চলের প্রায় ৫হাজার পরিবারের। সরেজমিনে দেখা যায়, অত্র এলাকার সড়ক যোগাযোগ না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা, কৃষক কিংবা সাধারণ জনগণ পায়ে হেটেই ছুটে চলছে গন্তব্যে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই এলাকার সাধারণ কৃষকরা কলা, আদা, হলুদ, আনারসসহ উৎপাদিত পাহাড়ি পণ্য পায়ে হেঁটেই নিয়ে যান হাট-বাজারে। স্থানীয়দের দাবি নানাক্রম-বুড়িঘাট সড়কটি নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের প্রায় তিন হাজার কৃষক পরিবার ও প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের জীবন যাত্রার মান বদলে যাবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, “নানাক্রম-পলিপাড়া-বুড়িঘাট এলাকার একটি উন্নত সড়ক না থাকায় ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ভোগান্তির স্বীকার। নানাক্রম-পলিপাড়া-বুড়িঘাট সড়কটির ফলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশাবাদী।” স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কবির হোসেন জানান, “এই সড়কটির উন্নয়ন হলে নানিয়ারচরের সাথে বুড়িঘাটের যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা হবে। এতে করে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই নানিয়ারচর যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবহন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।”

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী জানালেন, ছোট ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করতে অনেক দূর দূরান্ত পায়ে হেঁটে স্কুল যেতে হয়। বিষয়টা অভিভাবকদের জন্য খুব চিন্তার। সড়কটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে। ৪নং ওয়ার্ড মধ্যম পলিপাড়া’র বাসিন্দা পাইজা মারমা বলেন, পানি শুকিয়ে গেলে আমি নদীর ২পাড়ে ধান চাষ করি। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় মাথায় করেই ধান ঘরে তুলতে হয়। রাস্তাটা হলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম।

স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মামুন ভূঁইয়া জানান, “নানাক্রম হতে বুড়িঘাট সড়কটি ইতোমধ্যেই কাজের শুরু হয়ে নানাক্রম পর্যন্ত এসে কোন এক অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর। উপজেলার বুড়িঘাট অঞ্চলেই আনারসের ফলন অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নত যাতায়াত সুবিধা না থাকায় কৃষকরা মাথায় পণ্য বহন করে লোড পয়েন্টে মালামাল পরিবহণ করেন। এতে করে সাধারণ কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। নানাক্রম-পলিপাড়া হতে বুড়িঘাট পর্যন্ত একটি ভাল মানের সড়ক নির্মাণ হলে সাধারণ কৃষকরা উপকৃত হবেন।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নানিয়ারচর কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা রনি সাহা প্রতিবেদককে জানান, এই সড়কটি উন্নয়নে প্রকল্প আকারে “পার্বত্য চট্রগ্রাম পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প (সিএইচটি ৩) ডিপিপি’র অন্তর্ভুক্ত আছে। একনেক এ পাঁশ হলেই দ্রুত এই সড়কের কাজ শুরু হবে।”