নিয়ম না মেনে রাঙামাটি শহরের প্রায় দোকানে চলছে গ্যাসের ব্যবসা

617

॥ আবদুল নাঈম মোহন ॥
রাঙামাটি শহরের প্রায় সর্বত্রই পানের দোকান, মুদির দোকানসহ বাজার এলাকা ও রাস্তার আশে পাশে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার, অকটেন, পেট্রলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। ফলে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে মজুদ করে এই ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার বেচাকেনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বেশিরভাগ দোকানি বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই এ ব্যবসা করছে। এলপি সিলিন্ডার এখন পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানির অনেকেরই ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনারও অনুমোদন নেই। নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে যে কোন সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।

অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বিক্রি রোধে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, এমনটিই প্রত্যাশা করছেন জেলার সচেতন মহলগুলো। জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডেদন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে যত্রতত্র বিক্রি করা হচ্ছে। দেশে সাধারণত উৎপাদনকারীর কারখানা থেকে ডিলাররা সিলিন্ডার ক্রয় করে। এরপর ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার পৌঁছায়। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা ডিলারদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদের বিষয়টি যাচাই করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।

যদিও বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪’র অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা-২০০৪/ ৬৯ ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ করা যাবে। তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী, এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। এলপিজি প্রাঙ্গনে ধূমপান, দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছে আলো বা তাপের উৎস থাকা চলবে না।

কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে চায়ের দোকানে চুলার পাশে মজুদ রেখে কিংবা সিগারেটের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,শহরের বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান, খুচরা বাজারের দোকান, রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে যত্রতত্র ফেলে রেখে বিক্রি করছে পেট্রোল ও এলপিজি সিলিন্ডার। এসব দোকানদার বেশিরভাগই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেননি। তা ছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে। আবার বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ নেয়ার তোয়াক্কা করছেন না তারা। পারভেজ খান নামের একজন জানান, বেশিরভাগ দোকানি ব্যবসা পরিচালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিলেও ১০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্ফোরক সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব দোকানে ২০টি থেকে শতাধিক সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করলেও সনদ নেই। এক দোকানে নানা ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাস বোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চা ও পানের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট, মনোহারি ও মুদি সামগ্রী বিক্রির দোকানেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।

গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালায় যা আছেঃ
‘গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ১৯৯১’-তে বলা হয়েছে— ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়ের জন্য কমপক্ষে পাকা ফ্লোরসহ আধা পাকা ঘর থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা সংক্রান্ত লাইসেন্স ও ছাড়পত্রসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এক্সস্টিংগুইশার, মজবুত এবং ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে।

সিলিন্ডার আমদানির বিষয়ে বিধির তৃতীয় পরিচ্ছেদে বলা আছে— লাইসেন্স ছাড়া সিলিন্ডার আমদানি নিষিদ্ধ। কোনও ব্যক্তি বিনা লাইসেন্সে গ্যাসপূর্ণ বা খালি সিলিন্ডার আমদানি করতে পারবেন না।

সিলিন্ডার পরিবহনের বিষয়ে বিধিমালার চতুর্থ পরিচ্ছেদে বলা আছে— গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার কোনও দ্বিচক্রযানে (মোটরসাইকেল, সাইকেল) পরিবহন করা যাবে না। কোনও যানে সিলিন্ডার পরিবহনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের কোনও অংশ উক্ত যানের বাইরে থাকা চলবে না। যানের যে অংশে সিলিন্ডার রাখা হয়, সে অংশে কোনও ধারালো বস্তু থাকবে না।

বিধিমালার সপ্তম পরিচ্ছদে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি ও গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুত রাখার বিষয়ে বলা আছে— লাইসেন্স ব্যতীত সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ।

বিধি-৪১ এর বিধান অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি বিনা লাইসেন্সে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করতে পারবেন না, অথবা গ্যাসপূর্ণ কোনও সিলিন্ডার তার অধিকারে (মজুত) রাখতে পারবেন না।’