নয়ন হত্যাকারিদের গ্রেফতারের দাবি পিবিসিপি ও সমঅধিকার আন্দোলনের: সংঘটিত ঘটনায় আটক ৬, জনসংহতি সমিতির পক্ষে প্রতিবাদ

425

স্টাফ রিপোর্ট- ২ জুন ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: দিঘীনালা সড়কের চার মাইল নামক স্থান থেকে উদ্ধারকৃত বাঙালি মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁেজ বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে , অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুন্না, জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর কামাল, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক, পৌর কমিটির সভাপতি কাজী মোঃ জালোয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান আলম পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম, জেলা সিঃ সহসভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান খাঁন, সহ-সভাপতি মোঃ বাদশা, যুগ্ম সম্পাদক এহসান উল্লাহ মুন্না, কলেজ সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, পৌর কমিটির আহবায়ক মোঃ আবছার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিতে বলাহয়, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় জনগণের ভাষ্য মতে নয়নকে দুইজন উপজাতীয় যুবক যাত্রী ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। মহালছড়ির সাদিকুলকে যে ভাবে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই ভাবে লংগদু উপজেলার নুরুল ইসলাম নয়ন কেও হত্যা করা হয়েছে। এ অঞ্চলকে বারবার অশান্ত করার অপচেষ্টায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ কয়েকদিন পর পর পার্বত্য নিরিহ বাঙালিদের হত্যা, গুম, অপহরণ করেই যাচ্ছে, কিন্তু এগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচার না হওয়ায় আজ আবার এক নিরিহ মোটর সাইকেল চালককে অকালে জীবন দিতে হলো। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

আমরা লক্ষ্য করছি লংগদুতে বাঙালিরা যখন নয়নের লাশের জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ব্যস্ত তখন জেএসএস কর্মীরা নিজেরা নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এটা তাদের পুরাতন অভ্যাস। এতে তাদের বিপুল লাভ। কারণ ছনের ঘরের পরিবর্তে টিনের ঘর ও সাথে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ পাওয়া যায়। ২০১০ সালে বাঘাইছড়িতেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল। যে এলাকায় আগুন ধরানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ চাকমা ও জেএসএস অধ্যুষিত এলাকা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই বাঙালিদের পক্ষে সেখানে প্রবেশ সম্ভব নয়। তাদের এই চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর জন্য পাহাড়ের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। -সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

লংগদুতে সংঘটিত উত্তেজনার জেরে
ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার- লংগদু সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার ঘটনায় সৃষ্ট পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ৬ বাঙালিকে আটক করেছেন পুলিশ। এর মধ্যে চারজন লংগদু থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। লংগদু থানা সূত্রে জানা যায়, আটকরা হলেন- মো. শরীফ (৩২), আবুল খায়ের (২৮), মুক্তার হোসেন (৩০), মো. দেলেঅয়ার হোসেন (৩১), জাকির হোসেন (২৮) ও নুর মোহাম্মদ (২৯)। এ রা সকলেই লংগদুর বাইট্রা পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল হক জানান, উল্লেখিত এই ৬জনকে প্রাথমিক ভাবে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদের পর দোষী হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে মামলা করা হবে।
এদিকে সমঅধিকার আন্দোলনের লংগদু উপজেলার নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান জানান, যে ৬ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে তারা এই ঘটনার সাথে সংপৃক্ত ছিল না। তারা নিরীহ জনগণ। পুলিশ একটি মহলকে খুশি রাখার জন্য অসহায় নিরীহ লোকজন আটক করেছেন। এ র্নিদোষ ৬ব্যক্তিকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

প্রসঙ্গত- মো. নুরুল ইসলাম নয়ন (৩৫)কে তার মোটর সাইকেলযোগে দুই উপজাতীয় ভাড়ায় নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) নামক স্থান থেকে নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নুরুল ইসলাম নয়ন লংগদুর বাইট্টা পাড়ার বাসিন্দা মৃত ফয়েজ আহম্মদের ছেলে। নয়ন ছিলেন মোটর সাইকেল চালক।

লংগুদুতে সংঘটিত ঘটনার নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানিয়েছে জনসংহতি সমিতি
স্টাফ রিপোর্টার- নয়ন হত্যাকান্ডের জের ধরে শুক্রবার লংগুদুতে সংঘটিত ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সংগঠনের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, লংগদুতে উপজেলা সদরের তিনটিলা ও পার্শ্ববর্তী মানিকজুর ছড়ায় সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এ হামলায় লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের দুই শতাধিক ঘরাবাড়ি ও দোকানপাট এবং মানিকজুরছড়ায় কমপক্ষে ৪০টির ঘরবাড়িসহ জুম্মদের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, খাগড়াছড়িতে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে একজন সেটেলার বাঙালি মোটর সাইকেল চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় লংগদু উপজেলায় বাত্যা পাড়া থেকে সেটেলার বাঙালিদের এক জঙ্গী সাম্প্রদায়িক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি আনুমানিক ১০টার দিকে লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় পৌঁছলে সেটেলার বাঙালিরা কোন উস্কানী ছাড়াই জনসংহতি সমিতির অফিসসহ জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ঘরবাড়ি লুটপাটসহ জুম্মদের উপর হামলা করতে শুরু করে। এতে তিনটিলা এলাকায় জুম্মদের ২০০-এর অধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয় বলে জানা যায়। এরপর সেটেলার বাঙালিরা পার্শ্ববর্তী মানিকজুরছড়ায় হামলা করতে যায়। এতে জুম্মদের বসতিতে অগ্নিসংযোগ করলে কমপক্ষে ৪০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ছাই হয়ে যায়। বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে আবার সেটেলার বাঙালিরা দক্ষিণ মানিকজুরছড়া, বাত্যা পাড়া ইত্যাদি জুম্ম গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

লাশ নিয়ে সেটেলারদের জঙ্গী মিছিল বের করার খবর গতরাতে জানাজানি হলে স্থানীয় জুম্ম জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ লংগদু সেনা জোন ও লংগদু থানা কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানান। আজ সকালে সেনা জোনের পক্ষ থেকে টুআইসি মেজর রফিক জুম্মদেরকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ‘মিছিল করা সেটেলারদের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলটি করবে। কোন অঘটন ঘটতে দেয়া হবে না।’ তাই নিরাপত্তা নিয়ে জুম্মদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে জুম্ম জনপ্রতিনিধি ও জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দসহ জুম্মদেরকে তিনি আশ্বস্থ করেন। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক যে, লংগদু সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার লে: কর্ণেল আবদুল আলিম চৌধুরী পিএসসি, টুআইসি মেজর রফিক ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে সেনা-পুলিশের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে এবং লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।

উক্ত জঙ্গী মিছিল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি, জামায়াতে ইসলাম প্রভৃতি জাতীয় রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে এবং তথাকথিত সমঅধিকার আন্দোলন ও অন্যান্য সেটেলার বাঙালিদের সংগঠনের লোকজন অংশগ্রহণ করে বলে জানা যায়। তারই অংশ হিসেবে আজ সকল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত মোটর সাইকেল চালককে হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ এক জঙ্গী মিছিল বের করে। এতে জুম্ম বিরোধী সাম্প্রদায়িক শ্লোগান প্রদান করা হয় বলে জানা যায়।

জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল ও স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, সর্বোপরি জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকশ্রেণির মদদে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতি মনে করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জরুরী ভিত্তিতে এ ধরণের হামলা বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে এবং এই অগ্নিসংযোগ ও হামলার সাথে জড়িত সেনা-পুলিশ ও সেটেলার বাঙালিদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে। -সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান ।