আলমগীর মানিক- ১০ জুন ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি: লংগদুর যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো রনেল চাকমা (৩৩) ও জুনেল চাকমা। শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। দিঘীনালা থানার ওসি শামসুদ্দিন ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাতে তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের মোটর সাইকেলটি মাইনী নদী থেকে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সকাল ১১টার পর থেকে খর¯্রােতা মাইনী নদীতে শহীদ মোয়াজ্জেম শাহাজের ডুবুরী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তীব্র ¯্রােতের কারণে অভিযানে কিছুটা বেগ পেতে হয় ডুবুরী দলকে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে জুনেলের বাড়ি রাঙামাটির লংগদুতে। আর রনেলের বাড়ি খাগড়াছড়ির বাবুছড়ায়। তার বাবা রাজমোহন চাকমা (মৃত) ও মা কপিলা দেবি চাকমা।
পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতরা নয়নকে দিঘীনালা উপজেলার চার মাইল নামক স্থানে এনে হত্যা করে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে লংগদুর পাহাড়ি পল্লীতে আগুন দেওয়াসহ পরবর্তী সহিংস ঘটনায় ভয় পেয়ে তারা মোটর সাইকেলটি গত দু’দিন আগে রাতের অন্ধকারে মাইনী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৯ জুন) রাতে তাদেরকে লংগদু থেকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (১০ জুন) সকালে তাদেরকে রাঙামাটি চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে চালান করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লেয়াকত আলী জসিম (৩০), বাবুল হোসেন (৩৫), ও দিদার হোসেন (৩৫)। এ নিয়ে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। লংগদু থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুই যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার দিকে রওনা হন। দুপুরের পর দীঘিনালার চার মাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে তার মৃতদেহের ছবি দেখে শনাক্ত করে পরিবার ও বন্ধুরা। পরদিন সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। এই ঘটনায় ২ জুন দিঘীনালা থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করা হয়।
এই ঘটনার পর ২ জুন বাইট্টাপাড়া থেকে লংগদুবাসীর ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি শোকমিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। ওই সময় ওই মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। আড়াই শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এই ঘটনায় লংগদু থানায় তিন থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে পুলিশ মামলা দায়ের করে।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান