পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে স্মরণকালের বৃহত্তম বিপর্যয়, সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত শতাধিক

564

রাঙামাটি থেকে আনোয়ার আল হক- ১৩ জুন ২০১৭:  ঝড়ো হাওয়া, টানা বর্ষন ও পাহাড় ধসে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি স্মরণকালের বৃহত্তম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ব্যাপক পাহাড় ধসে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্য মিলিয়ে শতাধিক লোক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক। জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েক জন। দু’দিনের টানা বর্ষনেরধারাবহিকতায় মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত ও এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতের ঘটনাস্থল রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।

এদিকে রাঙামাটির সাথে সকল জেলা এবং উপজেলা সমূহের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে দিনভর। জেলার কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, নেই অধিকাংশ মোবাইল নেটওয়ার্কও। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে জেলায় শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি সদরে ২৪, কাউখালীতে ১৫, কাপ্তাইয়ে ৯, বিলাইছড়ি ২ জুরাছড়ি ২জন রয়েছে।

দুই সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত চার সেনা সদস্য উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে পাহাড় ধসের মুখে পড়েন। এসময় আরো অন্তত: ১২ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সিএমএইচ এ পাঠানো হয়েছে। নিহত সেনা সদস্যরা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, কর্পোরাল আজীজ ও সৈনিক শাহিন। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন তানভির নব বিবাহিত এবং মেজর আেিজজের একটি সন্তান রয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, পাহাড় ধসে রাঙমাটি সদরের শিমুলতলী, ভেদভেদি, মানিকছড়ি এলাকায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া কাউখালীতে ২১, কাপ্তাইয়ে ১৫, বিলাইছড়ি ৩ জুরাছড়ি ২জন রয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা ছাড়া ৩ কেজি করে চাউল প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে রাঙামাটির সাথে আগামী তিনদিনেও সড়ক যোগাযোগ পুণস্থাপন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাউখালী থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ঘিলাছড়িতে নিহত হয় ৩জন, এরা হলো দবির হোসেন (৮৪) খোদেজা বেগম (৬৫), অজিফা খাতুন(৬০)। ঘাঘড়া ইউনিয়নে- নাসিমা বেগম (৬০) বৈশাখী চাকমা (১০),  কলমপতি ইউনিয়নে লায়লা বেগম (২৮)। কাশখালী ইউনিয়নে ফাতেমা বেগম (৬০), মো ঃ মনির (২৫) ইসহাক (৩৪)। বেতবুনিয় ইউনিয়নে অংকাচিং মারমা (৫১), আচে মা মারমা (৩৬), শ্যামা মারমা, (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭) ফটিকছড়ি ইউনিয়নে লাই প্রু মারমা (৪০) ও সুভাষ চাকমা (৩৫)। কাউখালীর সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জুরাছড়িতে নিহতরা হলো চিত্রলতা (৫৫), বিশ্বমনি চাকমা (৬)। কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার, রাইখালী ও বড়্ইছড়িতে পাহাড়ে ধসে ৯ জন মারা গেলেও এদের মধ্যে লউনুচিং মার্মা (৩০)এবং শিশু মিখিই মার্মা(১২) অন্যদের নাম এ রিপোর্ট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়িতে পাহাড় ধসে ৩জন নিহত হয়েছে।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালূকদার জানান, এ পর্যন্ত রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ২১ জনের লাশ আনা হয়েছে।

এদিকে ঘটনাস্থল গুলোতে এখনও ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা ্প্রশাসন শহরে মাইকিং করছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরী পর্যবেক্ষন সেল খোলা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্যরা। পাহাড় ধসের কারণে সকাল থেকেই রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহা সড়ক, কাপ্তাই-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-রাজস্থলী-বান্দরবান, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনায় গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় জেলা পরিষদ, পুলিশ, সেনবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার নগদ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ২০ কেজি চাল ত্রান সহায়তার দেয়া ঘোষণা দেয়া হয়।


ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা প্রশাসন শহরে মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড়ে ঢালুতে বসবাসকারীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরী পর্যবেক্ষন সেল খোলা হয়েছে।

বর্তমানে জেলা শহরে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার সরবরাহ হচ্ছে।

এদিকে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙামাটিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করবেন ।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান। দৈনিক রাঙামাটি