পার্বত্য তিনজেলা এবং চট্টগ্রাম বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফলে এবারও হতাশা

159

॥ আনোয়ার আল হক ॥

এবরও ফলাফলে পিছিয়ে গেছে তিন পার্বত্য জেলা। যদিও সমগ্র চট্টগ্রাম বোর্ডেই পাশের হার এবং জিপিএ ৫ সার্বিকভাবে কমেছে। তবে পার্বত্য তিন জেলা সেই হারের সাথে তাল রেখে আরো কমেছে। সবচেয়ে বিপর্যয় হয়েছে পার্বত্য খাগড়াছড়ির ফলাফলে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা থেকে ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৩ হাজার ৬২৯, পাশের হার ৬৪.৬২%। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩৭ জন শিক্ষার্থী। তবে এ বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বোর্ড এবং সারাদেশের সকল বোর্ডেই সার্বিকভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীর পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেশি।

রাঙামাটিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের তালিকায় এবারও শীর্ষে রয়েছে কাপ্তাইয়ের বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ। এই কলেজ থেকে ১৪৪জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৯৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ আনার গৌরব অর্জন করেছে। এর পরে রয়েছে, রাঙামাটি সরকারি কলেজ; এই কলেজ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছে, আর লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ জন শিক্ষার্থী। এ দুটি নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলও স্থানীয়দের হতাশ করেছে। রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে বিগত বছর ৫৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও এবার তার অর্ধেকও পায়নি। এই কলেজে সার্বিক পাশের ৬৫ শতাংশ। যে ফলাফলে সন্তুষ্ট হতে পারেননি খোদ কলেজের শিক্ষকরাও।

এদিকে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবারের পাসের হার ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ কম। সিটিজি বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৫ হাজার ৯০৩ জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ জন। যেখানে গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেইসাথে পাস করাদের মধ্যে গতবার এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পায় ১২ হাজার ৬৭০ জন। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটোই কমেছে।

রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে এই বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান।

বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ২৪ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়াও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৮৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩ হাজার ৪৫৪ জন। যেখানে গতবার ছিল ছাত্র পাসের হার ৭৭ দশমিক ৯২ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৮২ দশমিক ৯২ শতাংশ। গতবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ৫ হাজার ৫৬৪ জন ও ছাত্রী ৭ হাজার ১০৬ জন।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে এগিয়ে আছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ২২ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, শতভাগ পাস করেছে এমন কলেজের সংখ্যা ১২টি। যেখানে গতবার এ সংখ্যা ছিল ১৬টি। পাসের হার শূন্য এমন কলেজের সংখ্যা তিনটি। তারমধ্যে চট্টগ্রাম মহা নগরীর চান্দগাঁয়ের একটি। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ। এ কলেজের ২১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউই পাস করতে পারেনি। অন্যটি মহালছড়ির বৌদ্ধ শিশু গড় স্কুল এন্ড কলেজ এবং অপর প্রতিষ্ঠানের নাম মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল স্কুল এন্ড কলেজ।

প্রসঙ্গত, এবারের চট্টগ্রাম বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ২৭৯টি প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন্দ্র ছিল ১১৩টি। পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৩১০ জন ও ছাত্রী ৫৪ হাজার ৬৩৯ জন। তিন বিভাগেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছে ৯ হাজার ৯৮১ জন। মানবিক থেকে ১৯ হাজার ৯৩ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৮ হাজার ২৩৬ জন পরীক্ষার্থী।

সারাদেশে এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৯২ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। গতবারের তুলনায় এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ কমেছে। গতবারের তুলনায় ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন কম পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর আগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

সারাদেশেই এবার পাসের হারও কিছুটা কমেছে। গতবার পাসের হার ছিলো ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এবার এইচএসসি ও সমমানে সব বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পাসের হার ছিলো ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।