পাহাড় কেটে সাবাড় করছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ইটভাটাগুলো

216

॥ নুরুল কবির ॥

বান্দরবানের লামায়র একটি পাহাড়ের ৫০একর জায়গার মাটি কেটে সাবাড় করা হয়েছে ইট কাটার জন্য। উচু পাহাড়টি এখন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। এই পাহাড়ের মাটি নেওয়া হয়েছে অন্তত ২৭টি অবৈধ ইট ভাটায়। পরিবেশ অধিদপ্তের অনুমতি ছাড়াই এভাবে আশপাশের পাহাড়গুলো কেটে সাবাড় করছে লোভী চক্র। পার্বত্য তেন জেলায় এই দৃশ্য একেবারেই যেন স্বাভাবিক এখন। রাঙামাটি জেলা ও এর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গহিয়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। সঠিক হিসাব জেলা প্রশাসনের কাছেও নেই। এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পরিবেশবাদীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাটাগুলোর পিছনে যারা ব্যাকআপ দেয় তারা সরকারের ক্ষমতার অংশিদার বলে সাধারণ মানুষ যেমন কথা বলতে ভয় পায় তেমনি প্রশাসনের লোকজনও তেমন কোনো উচ্চ বাচ্য করে না।

এনিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, পাহাড় কাটায় জড়িতরা অনেক প্রভাবশালী। তাদের কাছে আমরা অসহায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ফাইতং ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে ১০টি পাহাড় রয়েছে। এই ইউনিয়নের ২৭টি । কোথাও পাহাড়ের কোলে, কোথাও কৃষি জমিতে, আবার কোথাও জনবসতি, প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসব ইট ভাটা। মাটির জন্য ভাটার মালিকরা ১০-১৫টি ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে দিনে-রাতে কাটছেন পাহাড়। মাটি স্তুপ করে রাখার পর ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। শুধু পাহাড়ের মাটি নয়, ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য সাবাড় করা হচ্ছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ পালা। ফাইতং ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাইতং এলাকার মানিকপুর অংশে ফোরবিএম, এনআরবি, ইউবিএম, ওয়াইএসবি ও থ্রিবিএম, ফাইভবিএম, এবিসি, এনআরবি ও বিবিএমসহ অন্তত ২০টি ইটভাটা রয়েছে। ফাইতংয়ের পাহাড়ি এলাকায় আরও ৭টির মতো ভাটা আছে। এক প্রকার প্রতিযোগিতা করে এসব এলাকার পাহাড়গুলো কাটছেন ভাটার মালিকরা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন। তিনি ওয়াইএসবি ইটভাটার মালিক। স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম ও রুবেল হোসেন জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে এখানে পাহাড় কাটা অব্যাহত আছে। আশপাশের কয়েকটি পাহাড়ের মাটি কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পাহাড়ের ৫০একরের বেশি সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয় হয় নি। এর মাঝে একদিন এসে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুই-একটি ইট ভাটাকে জরিমানা করে চলে যান। চলে যাওয়ার পরদিন থেকে শুরু হয় আবার পাহাড় কাটা। যা এখনও অব্যাহত আছে। তবে কোনও কোনও ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিতে দিনে না কেটে রাতে পাহাড় কাটছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক বলেন, পাঁচ লাখ করে এখানের ২৭টি ভাটার মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি তুলেছেন ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার মেম্বার। ওই টাকা দিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছেন।

এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা এ বছর ইটভাটার অনুমোদন নিতে পারিনি। তাই ইট ভাটার কার্যক্রম চালাতে পারবো কিনা জানি না। তবে ইটভাটা প্রস্তুত করে রাখতে হচ্ছে। এজন্য মাটির জোগান দিতে পাহাড়ের কিছু অংশ কাটা হয়েছে। সবাই কাটছে, তাই আমি কাটছি। কাউকে বাধা দেওয়া যাচ্ছে না।