পাহাড়ি নারী নেত্রী নিরূপা চাকমার মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে বিক্ষোভমিছিল সমাবেশ

451
ছবি- শামীমুল আহসান
ছবি- শামীমুল আহসান

ঢাকা ব্যুরো অফিস, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে  গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দাবি করে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া পাহাড়ি নারী নেত্রী নিরূপা চাকমা ও দ্বিতীয়া চাকমাসহ সকলের মুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা ১১ দফা নির্দেশনা বাতলি, সেনা শাসন প্রত্যাহার ও সম্প্রতি খাগড়াছড়ির রামগড়ে র‌্যাবের ইউনিট গঠনের যে বক্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন, তার প্রতিবাদে আজ ১০ ডিসেম্বর তিন পাহাড়ি সংগঠন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা চত্তরে সমাবেশ ও বিক্ষোভমিছিল করেছে।
সমাবেশ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে একটি বিক্ষোভমিছিল করে। পুলিশের বাধার মুখে মিছিলকারিরা দোয়েল চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমা। বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভানেত্রী সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, ছাত্র গণমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নূর সুুমন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য থুইক্যসিং মারমা। এছাড়া সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক নিজাম রহমান।
বক্তাগণ সমাবেশ থেকে একটি দেশে দুই ধরেেণর শাসনব্যবস্থা কেন চালু রাখা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, পুরো দেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেনাশাসন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সভা সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাামের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনরত ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানী করা হচ্ছে। এমনকি সভা সমাবেশ করতেও বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশের জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানা নেতৃবৃন্দ।

P DR...

বক্তাগণ মানবাধিকার দিবসের দিনে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করতে বাধাদান ও মানিকছড়ি উপজেলায় সেনা সহায়তায় সেটলার দ্বারা মানবাধিকার দিবস কর্মসূচিতে আগত প্রায় ৫ জন সাধারণ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করা হয়। এই ধরণের কর্মকান্ড সরকারের ফ্যাসিস্ট চরিত্রেরই বহি:প্রকাশ বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
নারী মুুক্তি কেন্দ্রের সভানেত্রী সীমা দত্ত বলেন, পার্বত্য জনগণকে জন্মলগ্ন থেকেই লড়াই সংগ্রাম করে আসতে হচ্ছে। তিনি এ সময় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমাকে অবলিম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, আমাদের সংগঠন সবসময় পার্বত্য নিপীড়িত জনগণের পাশে রয়েছে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, পাার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকার কারাগার বানিয়ে রেখেছে। যে দেশেরনগণতার দেশের নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তি আন্দোলনের জন্য কাজ করে না সে দেশের জনগণেরও মুক্তি সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সমতলের জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জানুয়ারি মাসে জারিকৃত ১১ দফা সরকারী নির্দেশনার উল্লেখ করে বলেন, শাসকশ্রেনীর এর পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেএই চক্রান্ত রুখে দাড়াতে হবে।

ইউপিডিএফ এর সংগঠক মিঠুন চাকমা সরকার রাষ্ট্র কারা পরিচালনা করে এই প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর একজন কর্মকর্তা দেশের বা রাষ্ট্রের পরিচালনার কাজ যদি ঠিক করে দেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কী ধরণের শাসন চলবে, সেখানে সেনাশাসন চলবে নাকি চলবে না তা ঠিক করে দেন তবে দেশে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীমন্ডলী তথা সরকার গঠনের কীইবা প্রয়োজন রয়েছে?

উল্লেখ্য গত ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে ৮ সংগঠন এক মিছিলের আয়োজন করলে সেনা ও পুলিশবাহিনী নির্বিচারে নারী-পুরুষসহ মিছিলে আগত সবার উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। এতে আহত হয় প্রায় ১৪ জন। মিছিল থেকে আটক করা হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমাকে। উক্ত হামলা-লাঠিপেটা ও আটকের প্রতিবাদে ০১ ডিসেম্বর অবরোধের ডাক দেয়া হলে অবরোধের আগেপরে আরো আটক করা হয় তিন সংগঠনের আরো প্রায় ৭ জন কর্মীকে।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সেনা পুলিশ বাহিনী দিয়ে দমন পীড়ন বন্ধের দাবি, ১১ দফা গণবিরোধী নির্দেশনা প্রত্যাহার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে মুক্তির দাবিসহ সভা সমাবেশের অধিকার সুরক্ষার দাবি জানিয়ে তিন সংগঠন আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভের কর্মসূচি প্রদান করে।

ছবি- শামীমুল আহসান
ছবি- শামীমুল আহসান