রাঙামাটি রিপোর্ট, ২০ মার্চ ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলায় ইউপি নির্বাচনের পূর্বেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রধারীদের আটক করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুনী অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার তাঁর লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি চিং কিউ রোয়াজা ও কামাল উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দীপংকর তালুকদার বলেন, ইউপি নির্বাচন ঘিরে পাহাড়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, খুন ও গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড়ে যাতে সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় সে জন্য অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন সরকার দলের প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। যে কারণে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নৌকা প্রতীক নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না । ভয়ে এখন প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন, এতে জনগণের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনে না আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন আসলে স্থানীয় এ রাজনীতি দলগুলো তাদের অপতৎপরতা চালাতে শুরু করে। বিগত উপজেলা ও জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের মুখে সাধারণ জনতাকে জব্দ করে জোর করে বিজয়ী হওয়ার ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, বাঙালী অধ্যুষিত ্এলাকায় এ সংগঠনগুলো তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শতভাগ সফল হয়েছে। এতে অতীতের ন্যায় তারা এসব দুর্গম এলাকায় অস্ত্রবাজী চালাতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। ফলে পাহাড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
প্রাণনাশের হুমকিকে তিনি ভয় পান না মন্তব্য করে জেলা দীপংকর তালুকদার বলেন, আমাকে যারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে, সেই হুমকিতে আমি ভয় পাই না। তারা কি করতে পারবে আমার জানা আছে। আমি সকল জাতির কথা বলি, এটা আমার রাজনৈতিক শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে আমি পিছ পা হবো না। যে দিন হবো সেদিন আমার রাজনৈতিক জীবনে থাকার আরো কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করবো। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অন্য কেউ হত্যা করেনি তাঁর জাতি বাঙালিরাই হত্যা করেছে। ঠিক তেমনিভাবে সারা বিশ্বেই বড় বড় নেতাদের ভ’ল বুঝে তার স্বজাতিরাই হত্যা করেছে। তাই যদি আমার জাতি আমাকে হত্যা করে তবে আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। কারণ আমি একজন দীপংকর মারা গেলেও পার্বত্য এলাকায় হাজারো দীপংকর জন্ম নিবে। তিনি আরো বলেন, আমি সকল জাতির কথা বলি, বলবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অস্ত্রের জোরে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কাউকে প্রার্থী হতে দিচ্ছে না। এই কারণে রাঙামাটি ৪৯টি ইউনিয়নের ৩০টি ইউনিয়ন বাদে বাকী ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ কোনও দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য যে কথা বলা হচ্ছে এটা আমাদের কোন দলীয় কথা নয় এটা হচ্ছে সাধারণ নাগরিকের কথা। আমরা আগামী ২৪ মার্চ যে মিছিল ও সমাবেশ করার কথা বলেছি তা সকলের সমন্বয়ে আয়োজন করবো। এটা করবো সাধারণ নাগরিকের ব্যানারে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা আওয়ামীলীগ নির্বাচন কমিশনে ৫ দফা দাবি পেশ করেছে। দাবিগুলো হলো-ভোটারদের সাথে ভোটার আইডি কার্ড রাখা বাধ্যতামূলক করা, মোবাইল ফোন ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে, ভোটকেন্দ্র কাঁচাবাড়ির হলে পোলিং বুথসমূহ মোটা কাপড় দ্বারা আচ্ছাদিত করতে হবে, দুরবর্তী ও দুর্গম পোলিং সেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বৈ অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে।
পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান