পাহাড় মাতিয়ে শেষ হলো বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন সম্প্রীতি আনন্দের এবং মৈত্রিময় অঞ্চলঃ মন্ত্রী বীর বাহাদুর

525

॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

টানা পাঁচদিন পাহাড়ের মানুষকে মাতিয়ে গানে গানে শেষ হলো ‘বঙ্গবন্ধু এ্যাডভেঞ্চার উৎসব’। শুক্রবার রাঙামাটি মারি স্টেডিয়ামের আকাশ বাতাস রঙিন করে এই রোমাঞ্চকর উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এ সময় আতসবাজির রঙিন আলোর সাথে আকাশ প্রদীপে আলোকিত ছিল গোটা রাঙামাটি। বক্তব্যশেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন সম্প্রীতি, আনন্দের এবং মৈত্রিময় অঞ্চল। তিনি বলেন, সেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়নের যে দুর্বার গতি তৈরি হয়েছে, সেই গতিধারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য সকল খাতে উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে পর্যটন খাতেও; তবে পাহাড়ের পর্যটনকে আরো এগিয়ে নিতে হলে এ ধরণের আয়োজনগুলো খুব বেশি প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সেটা করে দেখিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

পার্বত্য মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধান অতিথি বীর বাহাদূর বলেন, খেলাধূলায় অংশ নিতেছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মা-বাবা এখানে চলে এসেছে। এটাই সম্প্রতির পার্বত্যঞ্চল। শেখ হাসিনার কারণে পার্বত্যঞ্চল মৈত্রির অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। যারা আজ খেলায় অংশ নিয়েছে তারা পার্বত্যঞ্চলের দূতের ভূমিকা রাখবে। পার্বত্যঞ্চলের সম্প্রতির বন্ধন চারিদিকে ছড়িয়ে দিবে।
মন্ত্রী জানান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাহাড়ে শান্তির বারতা পৌছেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ও পিছিয়ে নেই। পাহাড়ের বাসিন্দাদের আতœসামাজিক উন্নয়ন ঘটছে। তিনি আরও জানান, দেশের উন্নয়নে তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তরুনদের মাঝে সাহস ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে এ অ্যাডভেঞ্চারের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে ভাবে তরুনরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তেমনি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্ধৃতি টেনে মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সফল হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে সরকার ৪০ হাজার সোলার বিতরণ করবে। এর মধ্যে ১১ হাজার সোলার বিতরণ করা হয়েছে। যাতে পাহাড়ের দুর্গম মানুষ অন্ধকারছন্ন না থাকে।

তিনি বলেন, পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে সরকার উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করতে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপিত করেছে। শান্তি, মৈত্রি, সম্প্রতি থাকলে আমাদের অঞ্চল এগিয়ে যাবে; আমাদের সন্তানরা এগিয়ে যাবে। আমরা সংঘর্ষ চাই না, মৈত্রি চাই। আমাদের সন্তানরা প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে থাকবে।

প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষায় নয়, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবো। দেশের জন্য, সমাজের জন্য সম্পদে পরিণত হবো। পড়ার কোন বিকল্প নেই। নকলের দিন শেষ। খেলাধূলার বিকল্প নেই। খেলাধূলা কাছে টানে। এসময় মন্ত্রী প্রতিযোগীদের খাবারের জন্য এক লাখ টাকা, আয়োজকদের জন্য দুই লাখ টাকা, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করেন। মন্ত্রী বক্তৃতার প্রারম্ভে জাতির পিতা, তার পরিবারবর্গ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার (এনডিসি) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন, বোর্ডেও চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, তথ্য কমিশনের সচিব সুদত্ত চাকমা, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন।

অনুভূতি ব্যক্ত করেন, প্রতিযোগী রাঙামাটির মেয়ে মুন দেওয়ান, বরিশাল থেকে আগত তৌহিদুল ইসলাম, বান্দরবানের জেরিৎ বম, নঁওগা থেকে ওয়াহিদা বিনতে রোকন। বক্তৃতা পরবর্তী অংশ গ্রহনকারী প্রতিযোগিদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এরপর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ এ্যাডভেঞ্জারে বিভিন্ন ইভেন্টে ১০০জন প্রতিযোগী (১৮-৩৫বছর) অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রাঙামাটি জেলা থেকে ২০জন, খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ১৫জন, বান্দরবান জেলা থেকে ১৫ এবং বাকী ৫০জন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে অংশ নিয়েছে। ১১জুন-১৫জুন পর্যন্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচদিন তারা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্পটে রোমাঞ্চকর পর্বতারোহণ, নৌবিহার, কায়াকিং, হাইকিং ও ট্রেইল রান, টিম বিল্ডিং, ট্রেজার হান্ট, ট্রেকিং, ক্যানিওনিং, ট্রি ট্রেইল, রোপ কোর্স, মাউন্টেইন বাইক, জিপলাইন, রেপলিং, ও কেভ ডিসকভারীতে অংশ নেয়। এসব ইভেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এক অন্যরকম μীড়া অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারা। পাহাড়ের মানুষ আগ্রহভরে তা উপভোগ করে।