পাড়াকর্মী জ্যোতিকা চাকমার পাশে দাড়িয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড

365

॥ ওমর ফারুক সুমন ॥
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ওল্ড লংকর গ্রামে হাদোক পাড়াকেন্দ্রের ক্যান্সার আক্রান্ত এক পাড়াকর্মী জ্যোতিকা চাকমার পাশে দাড়িয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ১৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় পত্রিকা আলোকিত রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন পোর্টালে জ্যোতিকা চাকমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান, নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার, সাথে সাথেই প্রকল্প পরিচালক প্রকাশ কান্তি চৌধুরীকে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। একই সাথে আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি’র পক্ষে বোর্ড আওতাধীন টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, প্রকল্প ব্যবস্থাপক জানে আলম ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন, ‘মিজ জ্যোতিকা চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ওল্ডলংকর গ্রামে উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের হাদোক পাড়াকেন্দ্রের পাড়াকর্মী হিসেবে গত বছর নিয়োগ পান। দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের যাতায়াতের জন্য চার ঘন্টা নৌকায় আবার চার ঘন্টা পায়ে হেটে ওল্ডলংকর গ্রাম হাদোক পাড়াকেন্দ্রের কর্মী মিজ জ্যোতিকা চাকমা। সেই দুর্গম এলাকায় প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের মৌলিক সেবা প্রদান করে আসছিলেন তিনি। একই সাথে আলোকিত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি ওমর ফারুক সুমনকেও ধন্যবাদ জানান।

টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী আরো লিখেন, দুর্গম এই গ্রামে একমাত্র পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমেই বিভিন্ন সামাজিক সেবা পৌঁছানো হয়। আর এই কঠিন কাজটিই করে আসছিলেন দক্ষ পাডড়াকর্মী মিজ জ্যোতিকা চাকমা। গতবছর নিয়োগ পরীক্ষার সময় দেখলাম পাড়াটি ত্রিপুরা পাড়া আর প্রার্থী জ্যোতিকা চাকমা। শংকা জাগলো চাকমা মেয়েটি ত্রিপুরা ভাষায় ছোট ছোট ত্রিপুরা শিশুদের কিভাবে পড়াবে। মেয়েটি জানাল সে ত্রিপুরা ভাষা ভালোই জানে।

বিশ্বাস হলো না। সহকর্মী মনজু মানস ত্রিপুরাকে বললাম যাচাই করতে। দেখলাম মেয়েটি বেশ ভালোই পারছে। কৌতুহলী হয়ে কারন জানতে চাইলাম। মেয়েটি জানাল সে ভালোবেসে এ গ্রামের এক ত্রিপুরা ছেলেকে বিয়ে করে এই পাড়ায় বসবাস করছে। মেয়েটির চাকুরী হলো। ভালোই কাজ করছিলো। তিনি বলেন-‘গত কয়েকদিন আগে ঢাকায় যাচ্ছিলাম সভায় অংশগ্রহণ করতে। এমন সময় মেসেঞ্জারে আমাদের অভিভাবক বোর্ডে চেয়ারম্যান মহোদয়ের নক। জানলাম জ্যোতিকার অসুস্থতার খবর সাথে দেখলাম একটি অনলাইন পত্রিকার নিউজ। স্যার কিছু নির্দেশনাও দিলেন।

জানালাম আমরা আছি জ্যোতিকার সহযোদ্ধার হয়ে। শনিবার উন্নয়ন্ন বোর্ডে মাননীয় চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি মহোদয়ের পক্ষ থেকে বোর্ডের আওতাধীন টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের পাড়াকর্মী ক্যান্সার আক্রান্ত মিজ জ্যোতিকা চাকমার হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিলাম। মিজ জ্যোতিকা অ্যাডিনয়েড সিস্টিক কার্সিনোমা নামে একটি জটিল ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।’

প্রকাশ কান্তি চৌধুরী লিখেছেন- ‘প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা জ্যোতিকাকে এ অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট লাগলো। যে ছেলেটিকে ভালোবেসে সবাইকে ছেড়ে এ প্রত্যন্ত গ্রামে চলে এসেছিল সেই পরেশ ত্রিপুরাকে আজ দেখলাম। জ্যোতিকার প্রতি তার ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, তার আকুতি দেখে মুগ্ধ হলাম। ভালোবেসে ভুল করেনি জ্যোতিকা। আমরা ইতোমধ্যে আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসার বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। তারা জ্যোতিকার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাঁদের প্রতি মানবিক সাড়া প্রদানের জন্য। বিশ্বাস আমাদের সবার দোয়া-আশীর্বাদে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে জ্যোতিকা পূর্ন প্রানপ্রাচুর্যে।’