বঙ্গরত্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু

501
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন

দার্শনিক আবু মহি মুসা- ২ সেপ্টেম্বও ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : বঙ্গরত্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি ও সমাজসেবক। দীর্ঘ ৪৬ বছর তিনি ছাত্রলীগ, ন্যাপ (ভাসানী), জাসদ, গণফোরাম ও সর্বশেষ বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)-র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিরলসভাবে দেশ ও জনগণের জন্যে কাজ করে আসছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১১ নং সেক্টরের কামালপুর-হালুয়াঘাট সেক্টরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমানে তিনি বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)-র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)-র ৮ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঈপ্সিত লক্ষ্যে সারাদেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে পেশাজীবি, শ্রমজীবি, গরীব-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী, খান আবদুল গাফফার খাঁন (সীমান্ত গান্ধী), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, নবাব স্যার সলিমউল্যাহ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, মাওলানা আব্দুল কালাম আজাদ, শের-ই-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাদার তেরেসাসহ হাতে গোনা যে ক’জন রাজনীতিবিদ নিরলসভাবে সংগ্রাম করেছেন এবং এখনো করছেন বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) তাদের মধ্যে অন্যতম।

আমি যতদুর জানি, বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) তাঁর সামান্য আয় থেকে যতটুকু টাকা-কড়ি সঞ্চয় করতে পেরেছেন তাও গরীব মেহনতি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। যার প্রেক্ষিতে তাঁর এলাকায় তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিত। খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে আমি তাঁর আত্মজীবনী বাংলা তথা বাংলাদেশের জনসাধারণের নিকট উপস্থাপন করলাম। আমার বিশ্বাস জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে- সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে দেশ সেবার সুযোগ দেবেন।
ভূমিকা

ইংরেজী ১৯৭১ খ্রিঃ ২৬ মার্চ পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটে। বৃটিশের ১৯০ বছরের ও পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের উপনিবেশিক শোষণের অবসান ঘটিয়ে বাংলার আপামর জনসাধারণ দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে ১৯৭১ খ্রিঃ ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতাত্তোর ৪৬ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে, কিন্তু বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে এখনও স্থিতিশীল হতে পারেনি। শিক্ষার পরিবেশ নাই, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার ভুলুন্ঠিত। বাংলার শতকরা ৭০ ভাগ শোষিত ও বুভুক্ষূ মানুষ এখনও তাদের বাঁচার মৌলিক উপাদান- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগের অভাবে দারিদ্রসীমার নীচে সাধারণভাবে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করে আসছে। জাতির এমনি ক্রান্তিলগ্নে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত ও স্বাধীনতাত্তোর ৪৬ বছরের দীর্ঘ সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তথা নিপীড়িত নির্যাতিত জনসাধারণের অর্থনৈতিক মুক্তিতে ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে বলিষ্ট সংগ্রাম কওে আসছেন তার ধারাবাহিক বর্ণনা প্রদত্ত হলো ঃ

পারিবারিক পরিচয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু এর বাল্য নাম ছিল আবু তাহের। ছোট বেলায় মা-বাবা তাকে আবু ডাকতেন। তিনি বাংলা ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ ৬ ফাল্গুন, মঙ্গলবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় টাঙ্গাইল জেলার সাবেক সদর থানা বর্তমান দেলদুয়ার থানার সেহড়াতৈল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দাদা- মরহুম রিয়াজ উদ্দিন সরকার, দাদী- আমেনা খাতুন, নানা- কাজী এখলাস উদ্দিন, নানী- হালিমা খাতুন। তাঁর পিতা মৌলভী খোরশেদ আলী একজন সমাজ সেবক ও ধার্মিক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। ১৯৯৪ খ্রিঃ ১৪ আগষ্ট তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন যিনি সেহড়াতৈল গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর মাতা রাবেয়া খাতুন সেহড়াতৈল গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।

বড় ভাই মরহুম আবদুর রাজ্জাক জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিনি ১৯৯৭ খ্রিঃ ১৪ অক্টোবর তাঁর কর্মস্থল থেকে ঐ দিনের কাজ শেষে অন্যান্য দিনের ন্যায় বাসায় (সেহড়াতৈল গ্রামে) ফেরার পথে এক ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। মরহুম আবদুর রাজ্জাক সেহড়াতৈল গ্রামের পাবলিক গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী জুলেখা বেগম বকুল ছাড়াও ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান। তাঁরা হলেন- মোয়াজ্জেম হোসেন, পারুল আক্তার, পারভীন আক্তার এবং তানভীর হোসেন কাফি। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর ছোট বোন অর্থাৎ তাঁর বাবা-মার তৃতীয় সন্তান ছাহেরা খাতুন আঙ্গুর, স্বামী আশরাফ আলী। তাঁর ৪ সন্তান যথাক্রমে সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, ফরিদা আক্তার ও নাজমা আক্তার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র ছোট ভাই অর্থাৎ তাঁর বাবা-মা-র ৪র্থ সন্তান আসাদ ইবনে খোরশেদ (বাবু) একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর স্ত্রী জেস্মিন আরা, ছেলে এহসান শাহরিয়ার জ্যোতি ও মেয়ে আনিকা জাহিন খুশবু। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর সর্বকনিষ্ট বোন অর্থাৎ তাঁর বাবা-মার ৫ম সন্তান নাসরিন সুলতানা রেনু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষয়িত্রী; স্বামী মোজাহারুল ইসলাম তাঁর দু সন্তান জোহরা খাতুন জেরিন ও রাশেদুল ইসলাম রনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু বাংলা ১৩৮২ সালের ১ বৈশাখ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর। তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমানআরা (হাওয়া)-র বয়স ছিল ১৭ বৎসর, যিনি তাঁর বাবা-মার অত্যন্ত আদরের- বর্তমানে একজন সুগৃহিনী। আঞ্জুমানআরা (হাওয়া) তাঁর ৯ ভাই, বোনের মধ্যে প্রথম। তাঁর ৬ ভাই যথাক্রমে মরহুম আতাউর রহমান, সারোয়ার হোসেন, আইয়ুব আলী, আফজাল হোসেন, আব্দুল বাতেন ও সাখাওয়াৎ হোসেন (বুলবুল) এবং বোন মমতাজ পারভীন ও মায়া পারভীন। ২০১১ খ্রিঃ ৯ জুন তাঁর শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর ৩ সন্তান। তন্মধ্যে ১ম সন্তান সামসুন্নাহার রুনা (৩৫) মানসিক প্রতিবন্ধী দু’বছর পূর্বে তিনি দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২য় সন্তান কামরুন্নাহার এনা (৩৩) বিবাহিত এবং সরকারী ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজী মাষ্টার্সের ছাত্রী। তৃতীয় সন্তান মঞ্জুর হোসেন সেতু (২৫) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র।

 শৈশব ও শিক্ষা জীবন-০১

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র বয়স যখন ৪ বছর তখন তাঁর পিতা মরহুম মৌলভী খোরশেদ আলী টাংগাইল সদর থানার দেলদুয়ার ইউনিয়নের সেহড়াতৈল গ্রাম থেকে এসে কাতুলী ইউনিয়নের খরশিলা গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ফলে তিনি বাবা-মা ও বড় ভাই এর সাথে খরশিলা গ্রামে বসবাস আরম্ভ করেন। শৈশব থেকেই ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ৫ (পাঁচ) বছর বয়সে ১৯৫৮ খ্রিঃ তৎকালীন পাবনা বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার বোয়ালকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। তাঁর মেধায় অভিভূত হয়ে শিক্ষকগণ তাঁকে শিশু শ্রেণী হতে সরাসরি দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রমোশন দেন। উক্ত স্কুল যমুনা নদীর ভাংগনের ফলে স্থানান্তরিত হলে তার বাবা মা তাঁকে টাঙ্গাইল সদর থানার হুগড়া ইউনিয়নের চকগোপাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ১৯৬৪ খ্রিঃ তাঁকে আনুহলা জুনিয়র হাই স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া সমাপ্ত করার পর তার বাবা-মা তাঁকে ১৯৬৭ সালে টাঙ্গাইল জেলার সাবেক সদর থানার ও বর্তমান দেলদুয়ার থানার ছিলিমপুরের এম.এ করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি করে দেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র বাবার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি ভালই ছিল। গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, সোনালী আঁশের সমাবেশে কৃষি নির্ভর পরিবার। তার বাবা পৃথক হয়ে খরশিলা গ্রামে বসবাস করার সময় যখন তাকে ৫ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয় তখন তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার মান সাধারণ মধ্যবিত্তে এসে দাঁড়ায়। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর দাদা সন্তোষ জাহ্নবী হাই স্কুল থেকে ১৯০৫ খ্রিঃ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর বাবা করটিয়া হাই স্কুলে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তার বাবার বয়স যখন ৬ বছর তখন তার দাদা মারা যান। ফলে তাঁর বাবার লেখাপড়া তেমন হয়ে উঠেনি। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে তার ভাই-বোনদের সকলেই সুশিক্ষিত।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০১: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু যখন দশম শ্রেণীর ছাত্র অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিঃ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার পরীক্ষার্থী তখন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসক ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দেশের সর্বত্র গণঅভ্যূত্থান ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানোর চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জেলাখানায় বন্দী করে রাখা হয়। মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে তিনি দু’লক্ষ লোকের মিছিল নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জেলখানার তালা ভেঙ্গে তাঁকে মুক্ত করে আনবেন। এমনি পরিস্থিতিতে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩নং আসামী কমান্ডার আব্দুর রব এর ভাষ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক বাঙালী বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবের পক্ষে আগরতলা মামলার কৌশলী ছিলেন বর্তমান গণফোরাম সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবীদ ড. কামাল হোসেন।

ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষা (টেষ্ট) সমাপ্ত করেই ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু টাঙ্গাইলের গণঅভ্যূত্থানে যোগ দেন। এ সময় তিনি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর সান্নিধ্যে আসেন। সারা পূর্ব পাকিস্তানের এমন কণ্টকাকীর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে টাংগাইল জেলার পশ্চিম এলাকাব্যাপী ডাকাত দমন আন্দোলনের সূত্রপাত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ক্রমে ঐ আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়। মাত্র তিন দিনের গণআন্দোলনে বা গণঅভ্যূত্থানে প্রায় ৬৭ জন ডাকাত মৃত্যুবরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৬৯ খ্রিঃ মার্চ মাসে আইয়ুব শাহী ইয়াহিয়ার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে টাঙ্গাইলের তৎকালীন অবাঙ্গালী মহকুমা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল-মেনন এর নেতৃত্বে পুলিশ ও ই.পি.আর এর এক বিশাল বাহিনী পশ্চিম টাংগাইলে গমন করে গণআন্দোলনে নিহত ডাকাতদের ছয় জনের লাশ তুলে যখন টাংগাইল শহরের দিকে রওনা হয় তখন তিনি মাত্র ৭/৮ জন ছাত্র সহ ১০/১২ হাজার জনসাধারণের বিশাল বাহিনী নিয়ে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে তাদের গতিপথ রুদ্ধ করে দাঁড়ান। এমন গণঅভ্যূত্থানের মধ্যে প্রায় এক ঘন্টা বাকবিতন্ডার পর মহকুমা প্রশাসক পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে উক্ত ৬টি লাশ ছাত্রদের তথা জনসাধারণের নিকট হস্তান্তর করে টাংগাইল চলে আসেন। ১৯৬৯ খ্রিঃ ২৫ মার্চ আইয়ুব খান সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করায় সামরিক শাসন জারী হলে সারা পশ্চিম টাংগাইলে ব্যাপক ধরপাকড় আরম্ভ হয়। ছাত্র জনতার অনেকে গ্রেফতার হন। পাক সামরিক বাহিনী তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করে। নিরীহ জনসাধারণের উপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য তিনি ন্যাপ এর সভাপতি মাওলানা ভাসানীর শরনাপন্ন হন। মাওলানা ভাসানীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসে।

নির্বাচনী পরীক্ষার পর তিনি আর লেখাপড়া করতে পারেননি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব শাহী ও ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়ার ফলে গ্রেফতার এড়ানোর জন্যে তাকে একটানা ৬ মাস পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। পলাতক অবস্থায় তাঁকে ১৯৬৯ খ্রিঃ এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। যার ফলে তিনি এস.এস.সি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারেননি। এ সময় তার বন্ধুদের অনেকে পাক সেনা কর্তৃক বন্দী হন এবং জেলখানা থেকেই এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৬ খ্রিঃ ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিব বাঙ্গালী জাতির আত্ম নিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী পেশ করেন। শেখ মুজিব সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফার পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা- সমিতিতে বক্তৃতা প্রদান অব্যাহত রাখেন। এ বছর ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র ছোট বোন ‘পেয়ারা’ আমাশয় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনসাধারণ ৬ দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। পাকিস্তান সরকার ৮ মে শেখ মুজিবকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। এ গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৭ জুন সারাদেশে ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘটে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিহত হয় এবং ৮০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬ খ্রিঃ শেষের দিকে গভর্ণর মোনায়েম খানের পরামর্শে পাকিস্তানের শাসকবৃন্দ শেখ মুজিবকে ভারতের দালাল আখ্যায়িত করে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থের সাহায্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটিয়ে পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র করতে চায়। যদিও এ ষড়যন্ত্র সঠিক ছিল, তা সত্ত্বেও মাওলানা ভাসানী এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালনের  পাশাপাশি পুরো ডিসেম্বর মাসব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাঁক দেন এবং ঘেরাও আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৮ খ্রিঃ পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগরতলা মামলায় অভিযুক্তদেও নাম প্রকাশ করে। তাতে শেখ মুজিব প্রধান আসামী।

ঊনসত্তরের গণ অভ্যূত্থান

এদিকে তৎকালীন আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশে ১৯৬৮ খ্রিঃ শেষভাগে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং সর্বদলীয় ছাত্র পরিষদ ১১ দফা দাবী পেশ করে। ১৯৬৯ খ্রিঃ ৬ জানুয়ারী শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শুনানির দিন ধার্য্য হলে ঐ দিন ছাত্রদের ১১ দফা দাবী সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়।

১৯৬৯ খ্রিঃ ৬ জানুয়ারী বিচারকক্ষে শেখ মুজিব তাঁর বিবৃতিতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ দাবী করেন। তাঁকে আইনগত সহায়তা দেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সংগ্রামী ছাত্র জনতা বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলো শেখ মুজিবের মুক্তির অগ্নী শপথ।

১৯৬৯ খ্রিঃ ১৭ জানুয়ারী ছাত্র সমাজ ৬ দফাকে ১১ দফার অন্তর্ভূক্ত করে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থান শুরু করে। নেতৃত্ব দেন রাশেদ খান মেনন, আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, সামছুদ্দোহা, মোস্তফা জামাল হায়দার, দীপা দত্ত, তোফায়েল আহম্মেদ ও নাজিম কামরান চৌধুরী।

এ গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ লাগে টাঙ্গাইলেও। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী ও ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলাম (নূরু) এবং তৎকালীন করটিয়া সাদত কলেজ থেকে আগত দু’জন ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে এম.এ করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাদের সাথে যোগ দেন এবং ছাত্রলীগ তথা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি মাওলানা ভাসানীর সান্নিধ্যে আসেন এবং মাওলানা ভাসানীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও বুদ্ধিজীবিসহ আপামর জনসাধারণ এ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়। এ আন্দোলন দমন করার সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে আইয়ুব মোনায়েমের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং বিনা শর্তে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যাকে দেশদ্রোহী বলে ফাঁসী কাষ্ঠে ঝুলানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছিল তাঁকে মুক্তি দিয়ে ১৯৬৯ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারীতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব সর্বদলীয় নেতাদেরকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক ডাকলেন এবং অচলাবস্থা দূর করার পথ খুঁজতে লাগলেন। গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থতার পর ১৯৬৯ খ্রিঃ ২৫ মার্চ প্রধান সেনাপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের নিকট লিখিত এক পত্রে আইয়ুব খান দেশের তদানীন্তন গুরুতর পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাকে শাসন ক্ষমতা গ্রহণের অনুরোধ জানালে পাকিস্তানে দ্বিতীয়বারের জন্য সামরিক শাসন প্রবর্তিত হয় এবং ১৯৬৯ খ্রিঃ শাসনতন্ত্র, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহ বাতিল বলে ঘোষিত হয়।

সত্তরের নির্বাচন, ঘূণিঝড় ও জ্বলোচ্ছাস

সামরিক সরকারের ১৯৭০ খ্রিঃ ২৮ মার্চের ও ১৫ আগষ্টের ঘোষণা মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের ও ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এদিকে নির্বাচনের পূর্বেই ১২ নভেম্বর, ১৯৭০ ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছাসে ভোলা ও নোয়াখালীসহ উপকূলীয় দ্বীপসমূহের জানমাল গৃহাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রায় ১০ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ড. কামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দুঃস্থ মানবতার সেবায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়ায়। অথচ পাক সরকার শুধুমাত্র সমবেদনা জ্ঞাপন করেই ক্ষান্ত হন। মাওলানা ভাসানী ঘূর্নিদূর্গত এলাকা ঘুরে এসে শেখ মুজিবকে সমর্থন করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি দুঃস্থ মানবতার সেবায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়ায়। ঘূর্নিদূর্গত উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের সাহায্যে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনও স্থানীয়ভাবে ত্রাণ কমিটি গঠন করেন এবং জনসাধারণের নিকট থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে ঘূর্নিদূর্গত এলাকায় প্রেরণ করেন। এ সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে সারা পাকিস্তানের ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৭টি মহিলা আসনসহ পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন দখল করে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮২ টি আসন পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

সামরিক সরকারের সাথে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আলোচনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ খ্রিঃ এর মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেন। ১৩ ফেব্রুয়ারী ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের কথায় কর্ণপাত না করে পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্ট্রোর কথামত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকলেন ১৯৭১ খ্রিঃ ৩ মার্চ। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, ভূট্রো ও পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ৬ দফার ভিত্তিতে সংবিধান রচনার বিষয়ে সম্ভাব্য সব ধরণের আপোষ আলোচনা হয়। প্রতিটি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার দল ৩ মার্চের অধিবেশনে যোগদানের জন্যে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আকস্মিকভাবে ১ মার্চ করাচী হতে এক বিবৃতির মাধ্যমে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করলেন পাকিস্তানের দু’অংশের নেতাদের মধ্যে রাজনীতিগত বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ বিরোধ অবসানের অবকাশ সৃষ্টিকল্পে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ৩ মার্চের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করায় ১ মার্চের বিকেল হতে বাঙালী জাতি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানের শাসন উঠে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের বাণী ও নির্দেশ আইন হিসেবে পালিত হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অবস্থা গুরুতর বুঝে ১০ মার্চ ঢাকায় সকল রাজনৈতিক নেতাদের এক গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। শেখ মুজিব তাতে যোগদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন “বন্দুক উঁচিয়ে এ গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে নিরস্ত্র মানুষকে নির্মম ও নির্দয় ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এ হত্যাকারীদের সঙ্গে কোন বৈঠক হতে পারেনা”।

পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার প্রয়াসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৬ মার্চ ঘোষণা করেন যে, ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। এদিকে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের এক ঐতিহাসিক জনসভায় বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দশ লক্ষাধিক জনসমাবেশে চার দফা দাবী পেশ করেন ২৫ মার্চের অধিবেশনে যোগদানের পূর্বশর্ত হিসেবে। দাবীগুলো ছিল ঃ (ক) অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার, (খ) সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত নেয়া, (গ) সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র গণহত্যা তদন্ত করা, (ঘ) জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পূর্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিব বলেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম  মুক্তির সংগ্রাম, রক্ত দিতে আমি প্রস্তুত, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”।

মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে ৯ মার্চে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশিত চার দফার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। আতাউর রহমান শেখ মুজিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এ মুহুর্তে আপনি স্বাধীন বাংলার জাতীয় সরকার গঠন করুন”। এরপর ১৫ মার্চ আর এক দফা শাসনতান্ত্রিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে আলোচনার জন্যে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। সঙ্গে আসেন সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ৩৫ জন সাংসদ। ইতোপূর্বে টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর করা হয়েছে। ১৬ মার্চ হতে ২১ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিব, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইয়াহিয়া খান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা চলে। অপর পক্ষে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ২৩ মার্চ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি আয়োজিত পল্টন ময়দানের বিরাট জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলণ করেন।

উত্তাল ঢাকায় আগমন

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক তখন ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে মোহাম্মদ হোসেন এর বাসায় থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে লেখা-পড়া করতেন এবং লেখাপড়ার সাথে সাথে শিক্ষকতাও করতেন। ঢাকার রাজনৈতিক অবস্থা ছিল টলমলে। প্রতিদিন পত্রিকা পাঠ করে  এবং রেডিওর সংবাদ শুনে তাঁর বাবা-মা বড় ছেলের চিন্তায় একেবারে দিশেহারা। এমতাবস্থায় তাঁর বাবা-মাকে বলে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ঢাকায় এসে তাঁর বড় ভাই এর খোঁজ খবর নিতে চান। প্রথমে তাঁর বাবা-মা রাজী না হলেও পরবর্তীতে রাজী হলেন। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ৩ মার্চ ঢাকায় আসেন এবং ১০ মার্চ ঢাকা ত্যাগ করেন। এসময়ে তিনি তাঁর বড় ভাই এর সাথে ৩ মার্চ শেখ মুজিবের পল্টন ময়দানের জনসভায় ও ৭ মার্চ শেখ মুজিবের রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় এবং ৯ মার্চ মাওলানা ভাসানীর পল্টন ময়দানের জনসভায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর বড় ভাই আবদুর রাজ্জাককে টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়ীতে ফিরিয়ে নিতে পুনরায় ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন। ঢাকার রাজনৈতিক পরিবেশ তখন খুবই উত্তপ্ত। ইতোমধ্যে বাঙালী-পাঞ্জাবী/বিহারী দাঙ্গা হয়েছে। সদরঘাট, বকশীবাজার, লালবাগ, লক্ষ্মীবাজার, চকবাজার ও নবাবপুর এলাকায় তিনি দেখতে পেলেন নবাবপুর রোডের বিহারী হোটেলসহ পাঞ্জাবী/বিহারীদের কিছু বাসা/দোকানসহ অন্যান্য স্থাপনায় বাঙালীরা হামলা করেছে। তাতে তাদের কিছু ক্ষতিও হয়েছে। এমনিভাবে মোহাম্মদপুর, মীরপুরেও হাঙ্গামা হয়েছে। মোহাম্মদপুর ও মীরপুরে উভয় পক্ষের বাসা/দোকান ইত্যাদির ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তিনি বড় ভাইকে বাড়ী ফেরার কথা বললেন। কিন্তু তাঁর বড় ভাই বাড়ী ফিরতে রাজী হলেন না। ঢাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি তিনি নিজ চক্ষে দেখতে চান। তিনি দেখতে চান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ মিছিল হচ্ছে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে। ঢাকা শহরের প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন দূর্গ গড়ে উঠেছে, থমথমে অবস্থা। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ৪ দিন ঢাকায় থাকার পর ২১ মার্চ বাড়ী ফিরলেন। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলে তিনি তাঁর বড় ভাইকে গ্রামের বাড়ী চলে আসতে বললেন। বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনকে ফুলবাড়ীয়া ষ্টেশনে টাঙ্গাইলের বাসে উঠিয়ে দিলেন। তাঁরা একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিলেন।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাকবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা

২৫ মার্চের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ করাচী চলে গেলেন, রয়ে গেলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো। সরল বিশ্বাসে শেখ মুজিব ও তাঁর দল যখন ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদ অধিবেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহুর্তে ১৯৭১ খ্রিঃ ২৫ মার্চ কালো রাতে ১২.২৫ মিঃ পাকিস্তানের সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবন হতে গ্রেফতার করে। শেখ মুজিব গ্রেফতার হবার কিছুক্ষণ পূর্বে মরহুম তাজউদ্দিন আহম্মদ এবং ড. কামাল হোসেন, ড. কামাল হোসেনের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাসায় আসেন। তখন রাত ১০ ঘটিকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদেরকে দ্রুত এলাকা ত্যাগের জন্যে তাগিদ দেন। এমনকি একরকম জোর করে তাদেরকে ধানমন্ডির ৩২ (পুরাতন) বর্তমানে ১১ নম্বর রোডের বাসার প্রধান ফটক পর্যন্ত ঠেলে দেন। শেখ মুজিব সেদিন তাদেরকে বলেছিলেন আমি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পালিয়ে গেলে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা জনসাধারণকে আমার সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা দেবে যে, আমি ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে চাই। স্বাধীনতার ঘোষণা লিখিত আকারে তৈরী করা হয়েছে, পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে তা জনসাধারণের উদ্দেশে পাঠ করা হবে। তাজউদ্দিন আহম্মদ ও ড. কামাল হোসেন এর পরে তাজউদ্দিন আহম্মদ এর বাসায় যান। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন লালমাটিয়ায় রাত কাটানোর। সাথে আরও একজন যোগ দেন তিনি হলেন কুমিল্লার এমপি মোজাফফর। অবশেষে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর (বর্তমান ১৬) রোড এ লালমাটিয়ার ড. কামাল হোসেন এর ভাগ্নির বাসায় ড. কামাল হোসেনকে ড্রপ করে জনাব তাজউদ্দিন আহম্মদ ও মোজাফফর মীরপুর হয়ে ভারতে চলে গেলেন। পুরো ঢাকা শহরে কার্ফ্যু দিয়ে তল্লাশী চালাচ্ছিলেন পাক-সেনারা। ড. কামাল হোসেন পর পর ৪ দিন লালমাটিয়ার ৪ টি বাড়ীতে রাত কাটানোর পর পাক সেনাদের হাতে গ্রেফতার হন। অতঃপর পাকিস্তানের সামরিক সরকার আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ভাসানীসহ অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে বেআইনী ঘোষণা করে। ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাক সামরিক বাহিনীকে বাংলার শান্তি প্রিয় নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর লেলিয়ে দেয়া হয়। তারা ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে, পিলখানার ই.পি.আর হেডকোয়ার্টারে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল ও জগন্নাথ হলে, চট্টগ্রামের বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে এবং পুরান ঢাকায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ফলে সে রাতে শুধু ঢাকা শহরেই পঞ্চাশ হাজারের অধিক লোক মারা যায় এবং চট্টগ্রামে ১০০০ নিরস্ত্র বাঙালী সেনা নিহত হন। পাক সেনাদের এ সাফল্যে আত্মহারা হয়ে ২৬ মার্চ সকালে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেলেন জুলফিকার আলী ভূট্টো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এর মধ্যরাতে তথা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে তাঁর সর্বশেষ আদেশে ও মাওলানা ভাসানী ও অন্যান্য বাঙালী নেতৃবৃন্দের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবিসহ বাঙালী সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সদস্যগণ তথা আপামর জনসাধারণ মুক্তিযোদ্ধা সেজে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান ২৬ মার্চ, ১৯৭১ খ্রিঃ ও পরে মেজর জিয়াউর রহমান জিয়া ২৭ মার্চ ১৯৭১ খ্রিঃ স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন। তাতে জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তৎকালীন মেজর জিয়ার ভাষণ রেডিওতে শুনেছিলেন। তা’ এখনো তাঁর স্মৃতিতে বিদ্যমান বলে জানিয়েছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ১৯৭১ খ্রিঃ ২৬ মার্চ বিকেল ৪.৩০ মিঃ টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের খরশিলা গ্রামের ঈদগাঁ মাঠে আনুমানিক ২/৩ হাজার লোকের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতে গিয়ে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়ে ১১ নং সেক্টরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তিনিও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক। কিন্তু তিনি কখনও এ ঘোষণার জন্য রাষ্ট্র বা সমাজের কাছে কোন প্রকার সম্মান বা মর্যাদা দাবী করেননি।

শিক্ষকতা ও শিক্ষা জীবন-০২

১৯৭১ খ্রিঃ এপ্রিলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ১৯৭২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হলে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি উচ্চতর গণিতসহ কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি টাঙ্গাইলের বাগবাড়ী চৌবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে প্রায় ১ বছর ৬ মাস শিক্ষকতা করেন।

সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড-০১

১৯৭২ খ্রিঃ তিনি তাঁর নিজ গ্রাম টাঙ্গাইল সদর থানার খরশিলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এসময় তিনি মাওলানা ভাসানীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)-র রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েন। একই বছর তাঁর ছোট ভাই লেবু ও বোন শান্তি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় তাঁরই চোখের সামনে মৃত্যুবরণ করে। তিনি এখনও সেই ভয়াবহ স্মৃতি বহন করে চলেছেন।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০২

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ খ্রিঃ ১০ জানুয়ারী শেখ মুজিব স্ব-গৌরবে ফিরে আসেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আপন জনগণের কাছে; সঙ্গে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। শেখ মুজিব ১১ জানুয়ারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারী করেন। সংবিধান রচনার পূর্ব পর্যন্ত এই অস্থায়ী সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে। সংবিধান রচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭২ খ্রিঃ ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি এক গুপরিষদ আদেশ জারী করেন। এ আদেশ ১৯৭১ খ্রিঃ ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর বলে ধরা হয়। এ আদেশ অনুসারে ১৯৭০ খ্রিঃ ৭ ডিসেম্বর হতে ১৯৭১ খ্রিঃ ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনসমূহে বাংলাদেশ হতে নির্বাচিত সকল গুপ্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম গুপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৭২ খ্রিঃ ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের গুপরিষদের প্রথম অধিবেশনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বর্তমানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে চৌত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট এশটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। আইন মন্ত্রী ছাড়াও এ কমিটিতে আরও চারজন মন্ত্রীকে নেয়া হয়। তারা হলেন- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জনাব এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান। এ কমিটি কর্তৃক উপস্থাপিত খসড়া সংবিধান পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ৪ নভেম্বর পরিষদ সদস্যদের তুমূল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্য দিয়ে গুপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে চুড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।

অন্যদিকে শোষণহীন তথা সমাজবাদী অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৭২ খ্রিঃ ২৬ মার্চ শেখ মুজিব ও তার সরকার বাংলাদেশের প্রচলিত তফসীলভূক্ত ব্যাংক, বীমা, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে জাতীয়করণ করেন যদিও তাঁর দলের বৃহৎ অংশ বুর্জোয়া অর্থনৈতিক আদর্শে গড়ে উঠেছিলেন। বস্তুতঃ বুর্জোয়া অর্থনীতিতে গড়ে উঠা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় তাঁর ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্থাৎ শোষণমুক্ত সমাজ গঠন অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উøুদ্ধ মুজিববাদের চার অন্যতম সংগঠকের মধ্যে মার্কসবাদে বিশ্বাসী সিরাজুল আলম খান ১৯৭২ খ্রিঃ প্রথমার্ধে শেখ মুজিবকে রাজনৈতিক দলসহ পার্লামেন্ট বাতিল করে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে সমাজতান্ত্রিক নীতি প্রণয়ন করার জন্য পরামর্শ দেন। শেখ মুজিব তাতে রাজী না হওয়ায় সিরাজুল আলম খান ১৯৭২ খ্রিঃ ৩১ অক্টোবর মেজর (অবঃ) এম.এ জলিলকে সভাপতি, আ.স.ম আবদুর রবকে মহাসচিব ও স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজকে সহ-সভাপতি করে ছাত্রলীগের ভিন্ন মতাবলম্বী অংশের সমন্বয়ে গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও শিক্ষা জীবন-০৩

এখানে উল্লেখ্য যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র শিক্ষকতাকালীন টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার ও তাঁর নিজ গ্রামের বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হাছান মাষ্টার (মোঃ হাছেন আলী) এর পরামর্শে শিক্ষকতা বাদ দিয়ে ১৯৭৩ খ্রিঃ প্রথমার্ধে আবুল হোসেন আবু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে ভর্তি হন। একই বছর ৭ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা- ১৩৭, টাঙ্গাইল-৫, টাঙ্গাইল সদর- দেলদুয়ার আসনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. আলীম আল রাজীর পক্ষে পশ্চিম টাঙ্গাইলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭৩ খ্রিঃ তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকসু (ঊটঈঝট) নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে সোহরাওয়ার্দী হল সংসদে সহকারী সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন এবং বিজয়ী হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন পুরো সময়ে তিনি এ পদে বহাল থাকেন। এ সময়ে তিনি মেজর জলিলের সান্নিধ্যে আসেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৩

এদিকে ১৯৭৩ খ্রিঃ মুজিব সরকার যে রাষ্ট্রপতি আদেশ নং- ৯ প্রবর্তন করে তাতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে চাকুরীজীবিদের অনীহা দেখা দেয়। কারণঃ উক্ত আদেশে সরকারী কাজে নিয়োজিত যে কোন কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন ব্যতিরেকেই চাকুরী থেকে বিনা নোটিশে বরখাস্ত করার বিধান প্রবর্তিত হয়েছিল। এ আইন দেশকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়।

১৯৭৪ খ্রিঃ ১৭ মার্চ জাসদ জনসভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও ও স্মারকলিপি পেশ করার কর্মসূচি নেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওকালে রক্ষী বাহিনীর ব্রাসফায়ারে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত এবং বহু ছাত্রলীগ ও জাসদ কর্মী আহত হয়। স্বয়ং আ.স.ম আবদুর রবও গুলিবিদ্ধ হন। এহেন অবস্থায় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা নিয়ে সংগঠনসমূহ গড়ে উঠার যে প্রক্রিয়া শুরু হলো তারই পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদ ও সমরবাদ জন্ম নিল। বস্তুতঃ ১৯৭৪ খ্রিঃ মাঝামাঝি থেকে জাসদ রাজনীতি কার্যতঃ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। একটি প্রকাশ্য বিকল্প গণসংগঠন এমনভাবে বিলুপ্ত হওয়ায় পার্টির কর্মী সমর্থকরা এক অনিশ্চিত অবস্থায় নিপতিত হন। কিন্তু নেপথ্য কণ্ঠ থেকে ভেসে এলো এক বিপ্লবী অনুপ্রেরণার মন্ত্র। “দেশে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, এখানে সংগ্রাম অর্থ যুদ্ধ আর সংগঠন মানে সেনাবাহিনী। এ শ্লোগানের রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করলো ‘বিপ্লবী গণবাহিনী’।” জাসদ কর্তৃক তারুন্য নেতৃত্বে গঠিত বিপ্লবী গণবাহিনীর দূর্বার আন্দোলনের মুখে শেখ মুজিব সরকারকে হিমসিম খেতে হয়। অপরপক্ষে স্বাধীনতাত্তোর সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি ও আব্দুল হক- তোয়াহার পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকান্ড বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এহেন পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব গঠিত রক্ষী বাহিনীকে গণবাহিনী ও সর্বহারা পার্টি দমনে নিয়োজিত করা হয়। অপরদিকে ১৯৭৪ খ্রিঃ দেশে ভয়াবহ বন্যার ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এক চরম দুর্দশার মধ্যে পতিত হয়। দূর্ভিক্ষে অনাহারে বেশ কিছু লোক মারা যায়। তৎকালীন সরকার রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র দমননীতির মাধ্যমে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে রক্ষী বাহিনী নিয়োগ করে। ফলে রক্ষী বাহিনীর মাত্রাধিক্য দমনমূলক কার্যকলাপে বহু তরুন-জীবন অকালে হারিয়ে যায়। পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির  বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদারকে ১৯৭৫ খ্রিঃ ২ জানুয়ারী শেখ মুজিবের শাসনামলে রক্ষী বাহিনীর হেফাজতে অকালে জীবন দিতে হয় যা জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক। অপরদিকে মুজিব সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ অংশের ব্যাপক দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এতদ্ব্যতীত সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশ তখনও বিশ্ব-রাজনীতির দাবানলে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগে ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। এমন তিক্ত পরিস্থিতিতে শেখ মুজিব ১৯৭৫ খ্রিঃ ২৫ জানুয়ারী সম্ভবতঃ শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে বাংলাদেশ সংবিধান (৪র্থ সংশোধনী) আইন’ ৭৫ পাস করে বহুদলীয় রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা রহিত করে আওয়ামী লীগ বাতিল করতঃ এক দলীয় বাকশাল পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৪: বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা, সিপাহী বিদ্রোহ

আওয়ামী লীগ সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামল, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের মাত্র ছয় মাস শাসনামল এবং বাকশাল পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তুতি নিতে না নিতেই বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বুর্জোয়া অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ধনিক শ্রেণীর দোসর, আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেপথ্য পরিচালনায় লেঃ কঃ ফারুক রহমানের তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে এবং লেঃ কঃ খন্দকার আবদুর রশিদ এর নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর একটি অংশ (দু’টি ইউনিট একটি ট্যাংক রেজিমেন্ট যার সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন কর্ণেল ফারুক অন্যটি আর্টিলারী যার সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন কর্ণেল রশিদ) ১৯৭৫ খ্রিঃ ১৫ আগষ্ট ভোর রাতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এখানেই শেখ মুজিবের সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটে।

৩ নভেম্বর ১৯৭৫ ভোর রাতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, ক্যাপ্টেন (অবঃ) মনসুর আলী ও এইচ.এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী সেলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গৃহবন্দী সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে কর্ণেল (অবঃ) তাহেরের নেতৃত্বে জাসদ কর্তৃক গঠিত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ ভোর রাতে সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে খালেদ মোশাররফের পতন ঘটায়। জিয়া মুক্তি লাভ করেন। শোনা যায় জিয়ার নির্দেশে জিয়ার সমর্থকরা বন্দী অবস্থায় ৭ নভেম্বর সকালে জেনারেল খালেদ মোশারফ, কর্ণেল হুদা ও কর্ণেল হায়দারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

১৯৭৫ খ্রিঃ ১৫ আগষ্টের পট- পরিবর্তনকে জাসদ মেনে নেয়নি। জাসদ মনে করে এ পট পরিবর্তনে দেশের কাঠামোগত বা উপকাঠামোগত কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলে জাসদ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এ অবস্থান থেকে ঐ পরিবর্তনের বিরোধিতা করে। ১৫ আগষ্ট পরিবর্তনের পরপরই জাসদ থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি লুটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং মোশতাক ও জিয়া সরকার উৎখাতের কর্মসূচি হাতে নেয়। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জিয়ার সামরিক ট্রাইব্যুনালে গোপন বিচারের মাধ্যমে জিয়ার জীবন রক্ষাকারী কর্ণেল তাহেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় এবং দ্রুত তা কার্যকর করা হয়।

কর্মজীবন, সমাপনী শিক্ষা জীবন-০৪

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ১৯৭৭ খ্রিঃ অনুষ্ঠিত ১৯৭৫-৭৬ শিক্ষাবর্ষের বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) এর চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মজীবনের দিকে ধাবিত হন।

১৯৭৮ খ্রিঃ ১ জানুয়ারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন “দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড” এর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, বরাল রিভার ব্রীজ প্রজেক্ট এবং দি প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও নির্মাণ কাজে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯-৮১ খ্রিঃ তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন জামালপুর জেলা পরিষদে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্লানিং স্কীম অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডে দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি নেডিকোর সাথে যৌথভাবে বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলার ফ্লাড কন্ট্রোল ও ড্রেনেজ সিস্টেম এর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন নির্মাণ ও উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশল উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারী চাকুরী ছেড়ে ১৯৮১ খ্রিঃ তিনি “দি প্রগ্রেসিভ ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কন্সট্রাকশন লিঃ” নামে একটি নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বেশীদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড-০১

১৯৮৪ খ্রিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু টাঙ্গাইলের সন্তোষে “আবুল হোসেন পিস্ ফাউন্ডেশন” নামক একটি সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের আজীবন চেয়ারম্যান।

জন্মলগ্ন থেকেই ‘আবুল হোসেন পীস ফাউন্ডেশন’ নিম্নে বর্ণিত কর্মকান্ডসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে আসছেঃ

(ক) গরীব ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান।
(খ) দূরারোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা-সহায়তা প্রদান।
(গ) ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ।
(ঘ) স্কুল, মাদ্রাসা, গীর্জা, মন্দির ও পেগোটা সংস্করণে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।

দুঃস্থ মানবতার সেবায় পুরোপুরি আত্মনিয়োগের প্রয়াসে ১৯৮৭ খ্রিঃ তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান “ইষ্টার্ণ ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন” নামক একটি এন.জি.ও – সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৮৮ খ্রিঃ বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। টাঙ্গাইল শহর তখন ৪/৫ ফুট পানির নীচে। টাঙ্গাইল সদর থানার চর এলাকা সম্পূর্ণ পানির নীচে। বন্যার কবলে অনেকে মারা গেছেন, ভেসে গেছে বহু বাড়ীঘর, গবাদীপশু, ছাগল, হাঁস-মুরগী। পানি ছাদ ছুঁই ছুঁই। কোন রকমে মাঁচা পেতে মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছে। এমন অবস্থায় বসে থাকতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু। তিনি অনেক কষ্টে টাঙ্গাইলের সন্তোষে বর্তমান মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন অফিসে পৌঁছলেন। ঐ সময় তাঁর হাতে ৬৫ হাজার টাকা ছিল। বাসায় ১ (এক) মাসের খাবার ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা রেখে বাকী ৫০ হাজার টাকার মালামাল আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর ত্রাণ কমিটির হাতে তুলে দেন। ত্রাণ কমিটিতে ছিলেন সন্তোষের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট সমাজসেবক প্রয়াত মোঃ ইমান আলী, রক্ষিত বেলতার মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনিরুজ্জামান মজনু, নাসিমা আক্তারসহ সরকারী মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, কাগমারী, ও স,ই,বি, টেকনিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল এর কয়েকজন প্রফেসর। অতঃপর ত্রাণ কমিটির সদস্যদের সাথে তিনি বন্যা কবলিত চর এলাকায় গমন করে দুঃস্থ বানভাসি জনসাধারণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৫

এছাড়া ১৯৮২ খ্রিঃ তিনি পুনরায় জাসদের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৮৯ খ্রিঃ তিনি জাসদ (সিরাজ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হন। জাসদ রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শাজাহান সিরাজের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সভা সমিতিতে বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন

ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ খ্রিঃ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কথা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আগষ্ট মাসে টাঙ্গাইলের চর অঞ্চলের ২৩৭ জন যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যান। ভারতের মেঘালয়ের (বৃহত্তর আসাম) তুরার ক্যাম্পে ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীর তত্ত্বাবধানে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১ নং সেক্টরের অধীনে ভারতের সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডে ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নে তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সেক্টরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে ওহঃবষষরমবহপব এর দায়িত্বে থাকার সুবাদে তাঁর ভারতীয় ওহঃবষষরমবহপব এর ক্যাপ্টেন গোল্ড ব্লাডার ও ক্যাপ্টেন বি.কে. পানওয়ার, রেজিমেন্ট কমান্ডার লে. কর্ণেল কে.এস. ব্রার, ৯৫ মাউনটেইন ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী প্রমুখের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়। অতঃপর যুদ্ধকালীন গোয়েন্দা কর্মকান্ডের কোন এক পর্যায়ে সানসিং বাবাজীর মাধ্যমে ভারতের ৯৫ মাউনটেইন ও ছত্রীসেনা (জঙ্গী পল্টন) ব্রিগেডের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল গান্দব নাগরার সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে ও সখ্যতা গড়ে উঠে। এতে করে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার পুরো সীমান্ত এলাকায় তাঁর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সুযোগ পান। যুদ্ধকালীন তাঁর সঙ্গী ও পাশাপাশিদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন টাঙ্গাইল শহরস্থ থানাপাড়ার মোঃ শাহজাহান মিয়া, চৌবাড়ীয়ার দেলবর আনসারী, অলোয়ার আবদুল কাদের, কাতুলীর আব্দুস সামাদ মাষ্টার ও আবু সাঈদ, দিঘুলিয়ার বেলাল হোসেন (আলী), আনুহলার কোরবান আলী, পাথরাইলের ময়েজ বি.এস.সি, মামুদপুরের (কুঁচিয়ামুড়ির) আব্দুল জলিল, কাকুয়ার (হুগড়ার) মোকাদ্দেস আল-মামুন, জাঙ্গালীয়ার ছানোয়ার হোসেন খান, দেলদুয়ারের মনোরঞ্জন ধর, রুদ্র জুগনীর মাহমুদ আলী, তাঁর নিজ গ্রাম খরশিলার আবু হাছান মাষ্টার (হাছেন আলী), রূপসীযাত্রার মোহাম্মদ সেলিম, সন্তোষের ইমান আলী, চকগোপালের রফিকুল ইসলাম ও সানোয়ার হোসেন, কুকুরিয়ার আব্দুল মান্নান প্রমুখ অন্যতম। কয়েক বছর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা আবু হাছান মাষ্টার (হাছেন আলী) দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ১১ নং সেক্টরের অধীনে অনেকগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সতের/আঠারটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এ সকল যুদ্ধের মধ্যে কয়েকটি ছিল ভয়াবহ যুদ্ধ। ধানুয়া-কামালপুর, শ্রীবর্দী-ভায়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট যুদ্ধ ছিল ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনের সহযোগী নেতৃত্বাধীন মারাত্মক ভয়াবহ ও স্মরণীয় যুদ্ধ। শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী-ভায়াডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকি¯তান হানাদার বাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তাঁর সহযোগী তিন জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভায়াডাঙ্গা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন আবু তাহের, আব্দুল গনি ও অপর একজনের নাম জানা যায়নি। এ যুদ্ধে আবু তাহের অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আবু তাহের এ যুদ্ধে এল.এম.জি-র ব্রাশ ফায়ারের সাহায্যে হানাদার সৈন্যদের বেশ কিছু সময়ের জন্য প্রতিরোধ করে রেখে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাবার ব্যবস্থা করে দেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হানাদারদের গুলিতে আহত হলে তাকে আবু তাহের এবং আব্দুল গনি কাঁধে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়ে তারা নিরাপদ স্থান হিসেবে একটি বাড়ীতে ঢোকেন। তারা বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই দেখতে পায় ঐ বাড়িতে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর বহু লোকজন অবস্থান নিয়ে আছে। এ বাড়িতেই আবু তাহের ও আব্দুল গনি আহত মুক্তিযোদ্ধাসহ আলবদরদের হাতে ধরা পড়েন। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ধৃত তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্যদের হাতে তুলে দেয়। পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈন্যরা ধৃত তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে বারবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে শ্লোগান দিতে বললেও তাঁরা দেননি। বরং তারা বীরত্বের সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেয়। বহুবার চেষ্টা করেও যখন পাকসেনারা ঐ তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিতে ব্যর্থ হয় তখন তারা আহত মুক্তিযোদ্ধাসহ আবু তাহের ও আব্দুল গনিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাঞ্জাবী সৈন্যরা চলে যাবার পর এলাকার সাধারণ মানুষ শহীদ তিন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করে। উল্লেখ্য আজও শেরপুর জেলার শ্রীবর্দীতে ঐ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা ঘাতক রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের ধরে নিয়ে চরম শাস্তি দেয় এবং হত্যা করে।

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ধানুয়া-কামালপুরের যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জের ধানুয়া-কামালপুর যুদ্ধটি ছিল সারা দেশের সকল যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ বেশ কয়েকদিনব্যাপী চলে। এতে হানাদার সৈন্যদের যেমন জীবনহানি ঘটে তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষেও বেশ কয়েকজনের জীবনহানি ঘটে। এ যুদ্ধের সময় ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল তাহের আহত হন। কর্ণেল তাহের তিন/চার জন সঙ্গীকে নিয়ে ভারতীয় সীমান্তের দক্ষিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় কামালপুরের পাকিস্তানী হানাদারদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য পায়ে হেঁটে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমন সময় একটি এন্টি পার্সনাল মাইন তার পায়ের চাপে ব্রাষ্ট হয়। ঐ মাইনের আঘাতে কর্ণেল তাহেরের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্ত এলাকাব্যাপী পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা এন্টি পার্সনাল মাইন ও এন্টি ট্যাংক মাইন বসিয়ে রেখেছিল। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন যুদ্ধরত অবস্থায় ঐ রণাঙ্গনে একটি বিশেষ ওহঃবষষরমবহপব রিহম এর দায়িত্বে ছিলেন। কর্ণেল তাহেরের অবস্থা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীকে অনুরোধ করেন। ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী দ্রুত কর্ণেল তাহেরের নিকট আসেন এবং তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীর প্রচেষ্টায় দ্রুত কর্ণেল তাহেরকে হেলিকপ্টারে করে চিকিৎসার জন্যে ভারতের মাদ্রাজে নেয়া হয়।

মযমনসিংহ-হালুয়াঘাটের যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এখানে তিনি ভারতীয় ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নকে ভারতের গাচ্ছুয়াপাড়া থেকে বাংলাদেশের হালুয়াঘাটে প্রবেশ করার রাস্তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা বাংলাদেশ সীমান্তে বহু এন্টি পার্সনাল মাইন এবং এন্টি ট্যাংক মাইন বসিয়ে রাখে। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জীবন বাজী রেখে সমস্ত মাইন অপসারণ করে বিপদমুক্ত রাস্তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ও ভারতীয় সৈন্যদের ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আক্রমন করার ক্ষেত্র তৈরী করে দেন। মাইনগুলো একটি বাড়িতে একত্রিত করে রাখা হয়েছিল এবং তা পাহারা দেয়ার জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। এন্টি পার্সোনাল মাইন দু’হাটুতে চেপে তামাশা করার সময় হঠাৎ একটি মাইন ব্রাষ্ট হয়ে গেলে আব্দুল বাছেদ বাশার নামক একজন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করে, যার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইল সদর থানার আলোকদিয়া গ্রামে। ১৯৭১ খ্রিঃ ডিসেম্বর পাঁচ/ছয় তারিখে ভারতীয় বাহিনীর ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নের সৈন্যরা ও মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে হালুয়াঘাট আক্রমন করে এবং এখানে হানাদারদের সঙ্গে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমন প্রাথমিকভাবে হানাদার বাহিনীর তেমন কোন ক্ষতি করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত বিমান আক্রমন চালানো হয়। কয়েকবার বিমান হামলার পর হানাদার সৈন্যরা হালুয়াঘাট ত্যাগ করে। হালুয়াঘাট যুদ্ধে ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন। এখানে ভারতের ১১ জন পদাতিক সৈন্য যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মর্টার সেলিং আক্রমনে নিহত হন।

হালুয়াঘাট মুক্ত করার পর ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ভারতীয় মিত্র সৈন্যদের সঙ্গে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হন। ময়মনসিংহ আসার পথে যৌথ বাহিনী ফুলপুর শহর আক্রমন করে। এখানে হানাদারদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে হানাদারদের পতন ঘটে। ফুলপুর মুক্ত করার পর ১০ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী ময়মনসিংহ শহর আক্রমন করে। এখানে হানাদারদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যৌথ বাহিনী হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হওয়ায় যৌথ বাহিনীকে শেষ পর্যন্ত বিমান হামলা চালাতে হয়। যুদ্ধে হানাদারদের পক্ষে ব্যাপক জীবনহানি ঘটে। ১০ ডিসেম্বর একজন কর্ণেল ও বেশ কয়েকজন অফিসারসহ ৫৫১ জন পাক সেনা যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করে। ফলে ময়মনসিংহ মুক্ত হয়। ময়মনসিংহের যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। ময়মনসিংহ মুক্ত করার পর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনকে এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ময়মনসিংহের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।

অপরপক্ষে, ৯ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল গান্দব নাগরার উপস্থিতিতে ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী বললেন, আমি এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা চাই যিনি দেশের জন্য এ’ মুহুর্তেই জীবন দিতে পারে। এগিয়ে এলেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র সহযোদ্ধা শ্রীবর্দীর তরুন জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক। পাক আর্মিদেরকে সারেন্ডার করার আহ্বান সম্বলিত পত্র দিয়ে তাঁকে পাঠানো হলো জামালপুর পাক আর্মি সাব সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। সেখানে তাঁকে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার কর্ণেল সুলতান মাহমুদ খান এবং ওহঃবষষরমবহপব এর লে. মুন্নু খান শান্তি কমিটির বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেক এর নির্দেশে এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ বদর বাহিনীর কমান্ডার এ.কে.এম কামারুজ্জামানের সহযোগিতায় অমানুষিক নির্যাতন করে, উল্টো করে বেঁধে তাঁর হাত ও পায়ের প্রত্যেকটি আঙ্গুলে সূচ ঢুকিয়ে দেয়। বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে একটি হাটুর নীচের হাড় ভেঙ্গে দেয়, নড়বড়ে করে দেয় একটি হাটুর বাটি। তারপর একটি তাজা বুলেট কাগজে মুড়িয়ে বুলেটের জবাব বুলেটে দেয়া হবে লিখে কর্ণেল সুলতান মাহমুদ খান মেজর জেনারেল গান্দব নাগরা ও ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীকে জানিয়ে দেন। তিনি কোনক্রমে যৌথ বাহিনীর শ্রীবর্দী ক্যাম্পে চলে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিশেষ হেলিকপ্টারে ভারতের পুনাতে পাঠানো হয়। এহেন অবস্থায় যৌথ বাহিনী ১১ ডিসেম্বর জামালপুর শহর আক্রমণ করে। এ আক্রমণেও যৌথ বাহিনী পাক বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় যৌথ বাহিনী বিমান আক্রমণ চালিয়ে তাঁদের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। এতে পাক বাহিনীর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং ৮১০ জন পাকসেনা গ্রেফতার হন।

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখায় মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণী ওসমানী এবং ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীর ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেন। জেনারেল ওসমানী মাঝে মধ্যেই রণাঙ্গন পরিদর্শনে যেতেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনকে পেলেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে আলাপ আলোচনা করতেন। একদিন রণাঙ্গনে জেনারেল এম.এ. গণী ওসমানী-র বক্তব্য রাখার সময় ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন জেনারেল ওসমানীকে প্রশ্ন করেন- ঐড়ি সধহু পযরষফৎবহ ড়ভ ুড়ঁ? উত্তরে জেনারেল ওসমানী বলেন- ও যধাব বরমযঃ পযরষফৎবহ, ঋরৎংঃ ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঝবপড়হফ ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঞযরৎফ ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঋড়ঁৎঃয ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঋরভঃয ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঝরীঃয ইবহমধষ জবমরসবহঃ, ঝবাবহঃয ইবহমধষ জবমরসবহঃ ধহফ ঊরমযঃয ইবহমধষ জবমরসবহঃ. জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর উত্তর প্রমাণ করে তিনি একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক সেনানায়ক ছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে যে কতটুকু আপন ভাবতেন তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর উত্তরে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সত্যিই নিজ সন্তান তূল্য মনে করতেন।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজি তাঁর সহপাঠী সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ ও ৯৩ হাজার জোয়ানসহ যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করলে বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। এ ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে আত্মদান করেছেন ত্রিশ লক্ষের অধিক নর-নারী, সম্ভ্রম হারিয়েছেন তিন লক্ষের অধিক মহীয়সী মাতা ও ভগ্নি, জন্ম নিয়েছে পঞ্চাশ হাজারের অধিক যুদ্ধ শিশু যারা প্রয়াত মাদার তেরেসার চেষ্টায় ইউরোপ ও আমেরিকায় খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠছে। গৃহহারা হয়েছেন এক কোটিরও বেশী মানুষ এবং ছিন্নমূল ও সর্বহারা হয়েছে অসংখ্য জনসাধারণ। শেখ মুজিব ও ড. কামাল হোসেন এ সময়ে পশ্চিম পাকি¯তানের কারাগাওে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। তাঁরা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদেও নিকট অস্ত্র সমর্পন করতঃ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদেও বিদায় দিয়ে ১৯৭২ খ্রিঃ ২৭ জানুয়ারী গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল সদর থানার খরশিলায় চলে আসেন।

কর্মজীবন-০২

১৯৯০ খ্রিঃ তিনি “দি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস্ লিমিটেড” (ঞঊঈ-ঝযবঃঁ এৎড়ঁঢ়) নামে একটি উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন প্রতিষ্ঠিত “দি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস্্ লিমিটেড” রিখটার স্কেলে ৮-৯ মাত্রার ভুমিকম্পের ঝুঁকি সহনীয় বিবেচনায় জবঃৎড়-ভরঃঃরহম এর মাধ্যমে পুরাতন বিল্ডিংস (দালান-কোঠা) সংরক্ষণে; জার্মানীর বার্লিন, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ও সৌদি আরবের মক্কা নগরীর স্থাপনাসমূহের আদলে এবং আধুনিক স্থাপত্য শৈলী সন্নিবেশিত আন্তর্জাতিকমানের বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের টেকসই বিল্ডিংস (দালান-কোঠা), গোডাউন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, হোটেল, সার্ভিস এপার্টমেন্ট, ফ্যাক্টরী, ওয়্যারহাউজ, ড্যাম স্লুইচগেইট, ফ্লাইওভার ও ব্রীজ এর নকশা প্রণয়নে/ডিজাইনে এবং নির্মাণে দেশী-বিদেশী আর্কিটেক্ট ও প্রকৌশলীবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে সম্ভাব্য ভুমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিষয়ে তাঁর ধারণা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং মায়ানমারের কিছু অংশে প্রচন্ড শক্তিশালী ভুমিকম্প হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এ অঞ্চলটির বিস্তার প্রায় ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এতে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশসহ ভারতের আসামের ও মায়ানমারের কিছু অংশজুড়ে অর্থ্যাৎ আসামের গোহাটি হয়ে বাংলাদেশে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও কুমিল্লার শাহরাস্তি হয়ে মায়ানমারের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় একটি সুবিশাল চ্যুতির (ফল্ট) অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের রাঙ্গামাটির উত্তরাঞ্চল, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চল, বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, বৃহত্তর সিলেট জেলাসহ ভারতের বৃহত্তর আসাম ও বৃহত্তর ত্রিপুরা প্রদেশসহ মায়ানমারের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে রিখটার স্কেলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভুমিকম্প হতে পারে। এ রকম দুর্যোগে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ফল্ট ও চ্যুতি এলাকার আশপাশের ১০০ কিলোমিটার এলাকা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

বাংলাদেশে সবধরণের বাসা-বাড়ীর অবকাঠামো নির্মাণে ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইন করা হয়না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রাজ/রড মিস্ত্রি তাঁদের ইচ্ছা মাফিক ফাউন্ডেশন দিয়ে সুপার ষ্ট্রাকচার করে থাকে। ভুমিকম্প হলে ডিজাইনে ভারসাম্যহীন ঐসব অবকাঠামো তাৎক্ষনিকভাবে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। অপরপক্ষে যে সকল অবকাঠামোর ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইন করা হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তাও পুরোপুরি সাউন্ড হয় না। এজন্য বাসা-বাড়ীর অবকাঠামোর মালিকেরাই দায়ী। কারণ আনুমানিক শতকরা ৭০ ভাগ মালিক রাজ/রড মিস্ত্রির ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইনে কাজ করেন। প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ মালিক ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইনের জন্য খুবই কম টাকা খরচ করেন; ফলে ডিজাইন সাউন্ড হয়না। শতকরা ৫ ভাগ মালিক প্রয়োজনীয় টাকা-কড়ি খরচ করে তাঁদের বাসা-বাড়ীর অবকাঠামোর ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইন করে থাকেন। ভবন নির্মানেও অনেক ত্রুটি থেকে যায় । অধিকাংশ মালিক কম দামে টহংঢ়বপরভরবফ নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করে বাড়ীর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে থাকেন। আবার যারা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দালান/ভবন নির্মাণ করেন, তাঁদের গাফিলতির কারণেও অবকাঠামোর গুণগত মান খারাপ হয়ে থাকে। ফলে দালান/ভবন টেকসই হয়না। অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা বাসা-বাড়ীর অবকাঠামো ডিজাইন করতে হবে এবং নির্মাণ কাজের তদারকী করতে হবে যাতে টেকসই দালান-কোঠা নির্মাণ করা যায়।

যে সকল দালান/ভবন ইতোপূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ মান সম্পন্ন নয় এবং ৭-৮ রিখটার স্কেলে ভুমিকম্প হলে ধ্বসে যেতে পারে, ঐ সকল দালান/ভবনের জবঃৎড়-ভরঃঃরহম করে ভুমিকম্প সহনীয় করা যেতে পারে। যে সকল দালান/ভবন ৬-৭ রিখটার স্কেলের ভুমিকম্প সহনীয় নয় এবং জবঃৎড়-ভরঃঃরহম করা যাবে না, তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। সম্ভাব্য ভুমিকম্পের পর অবকাঠামোর ধ্বংসস্তুপ থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য সকল প্রস্তুতি থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেককেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে; বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় যাতে পড়তে না হয় সেক্ষেত্রে দালান/ভবন মালিকদেরকে সঠিক ষ্ট্রাকচারাল ডিজাইন করতঃ উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দালান/ভবন নির্মাণ করতে হবে, যাতে ৮-৯ রিখটার স্কেলের ভুমিকম্প হলেও দালান/ভবন ধ্বসে না পড়ে, কোন প্রাণহানি না ঘটে।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৬

১৯৯১ খ্রিঃ তিনি “বাংলাদেশের রাজনীতি” নামক একটি পুস্তিকার ১ম সংস্করণ প্রকাশ করেন, তাতে ১৯৫৭ খ্রিঃ থেকে ১৯৯১ খ্রিঃ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনসমূহ সুন্দর ও সাবলিলভাবে তুলে ধরেন।

১৯৯৩ খ্রিঃ প্রথমার্ধে আওয়ামী লীগের একাংশ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একাংশ, কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ) একত্রিত হয়ে ড. কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন। পরিশেষে ১৯৯৩ খ্রিঃ ২৯ আগষ্ট এ সকল দলের সমন্বয়ে ড. কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে গণফোরাম গঠিত হলে তিনি এ দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন।

বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের চক্রান্তে ১৭৫৭ খ্রিঃ ২৩ জুন নবাব আলীবর্দী খাঁ এর দৌহিত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর আম্রকুঞ্জে পরাজিত ও পরে নিহত হবার ফলে বাংলার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্যে কেঁড়ে নিয়েছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ইংরেজরা। শুরু হয় তাদের শোষণ ও শাসন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৪ ও ১৫ আগষ্ট ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের অভ্যূদ্বয় ঘটে। বাংলা ভাগ হয়ে পূর্ব বাংলা  পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পশ্চিম বাংলা ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়। তখন থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠি পূর্ব বাংলাকে শোষণ ও শাসন করতে থাকে। ১৯৭১ খ্রিঃ এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পত্তন হয়।

এ উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে এক’শ ত্রিশ বছরেরও আগে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস থেকে আরম্ভ করে মুসলিম লীগ, কম্যুনিষ্ট পার্টি, আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এবং একের পর এক বহু বিচিত্র দলের আবির্ভাব ঘটেছে এদেশে। মাহাত্মা গান্ধী, নবাব স্যার সলিমূল্লাহ, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, সীমান্ত গান্ধী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, মেজর জলিল, ড. কামাল হোসেন বিশেষ করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নেতা ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের জনতাকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে রেখে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন।

জনতা প্রায় অন্ধ হয়ে অনুসরণ করেছে নেতাকে এবং নেতার নির্দেশিত রাজনীতিকে। কিন্তু তাদের কাংখিত মুক্তি আজও আসেনি। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গবেষক মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু তাঁর রচিত “বাংলাদেশের রাজনীতি” গ্রন্থে ভারত, পাকি¯তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগলিক বৈশিষ্টসমূহের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। সত্যের প্রতি অবিচল থেকে একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, প্রতারিত জনতার কথা; তাদের আশা-আকাংখা বেদনা ও ক্ষোভের কথা। এ পুস্তিকাটি নিপিড়িত, নির্যাতিত, মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে সামাজিক অর্থনীতিতে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের রাজনীতিতে অংশরত সর্ব মহলে নানাভাবে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাবে এবং অনেক অজানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৭: সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড-০২

১৯৯৩ খ্রিঃ তিনি “লেবু দাতব্য চিকিৎসালয়” নামে একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যা আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য, স্থাপন করেন।

ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ১৯৯৬ খ্রিঃ ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য দেশের সাধারণ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা- ১৩৭, টাঙ্গাইল- ৫ (টাঙ্গাইল সদর- দেলদুয়ার) থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

১৯৯৬ খ্রিঃ তিনি “এম. খোরশেদ লাইব্রেরী” নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, যা আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য, স্থাপন করেন।

১৯৯৭ খ্রিঃ ৩ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু এর নেতৃত্বে অনঁষ ঐড়ংংধরহ চবধপব ঋড়ঁহফধঃরড়হ এর ওহঃবষষরমবহপব, জবংবধৎপয ্ অহধষুংরং ঈবহঃৎব টাঙ্গাইলের বেলতা রক্ষিতস্থ, কার্যালয় সন্তোষ, টাঙ্গাইল এ একটি নিরপেক্ষ ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র কংগ্রেস’ গঠিত হয়।

এতদ্ব্যাতীত ২০০০ খ্রিঃ তিনি “সেতু হাউজিং লিঃ” নামে একটি রিয়েল এষ্টেট কোম্পানী প্রতিষ্ঠা/স্থাপন করেন। ২০০১ খ্রিঃ তিনি “ইসলামিক বাস্তু লিঃ” নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠান দু’টোর কার্যক্রম বেশীদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ২০০১ খ্রিঃ ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দেশের সাধারণ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা- ১৩৭, টাঙ্গাইল- ৫ (টাঙ্গাইল সদর – দেলদুয়ার) থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

২০০৩ খ্রিঃ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে এম.বি.এ পাশ করেন।

বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) গঠন

গণতন্ত্র ও শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে সুশীলসমাজসহ দেশের আপামর জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে ২০০৩ খ্রিঃ ২৩ মার্চ বিজয় সরণী টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এ এক আলোচনা সভার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মারফত আলী মাষ্টার, টাঙ্গাইলের আইয়ুব উদ্দিন ভূঞাসহ আরও অনেকে।
৩ এপ্রিল, ২০০৪ টাঙ্গাইলের সন্তোষ- বেলতা রক্ষিতস্থ অনঁষ ঐড়ংংধরহ চবধপব ঋড়ঁহফধঃরড়হ এর ওহঃবষবমবহপব- জবংবধৎপয ্ অহধষুংরং ঈবহঃৎব কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্র কংগ্রেস (ঘঝঈ) এর ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্রতা দূরীকরণে; নারী ও শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী, অপহরণ, খুন, গুম. বোমাবাজী, ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধে; যুগোপযোগী শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনে; স্বল্প ব্যয়ে বাসস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়নে; আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দেশ, জনগণ ও ছাত্র সমাজের স্বার্থে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর নেতৃত্বে ১২ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।

সন্ত্রাসবাদের কবলে বাংলাদেশ

১৪ ডিসেম্বর, ২০০৫ রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায়, বিজয় সরণি টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫ এ বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর নির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক ১৯৯৯ খ্রিঃ ৬ মার্চ যশোহর টাউন হলে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, ২০০১ খ্রিঃ ২৮ জানুয়ারী পল্টনে সিপিবির জনসভায়, ২০০১ খ্রিঃ ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, ১৪০৮) রমনার বটমূলে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, ২০০১ খ্রিঃ ৩ জুন গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের গীর্জায়, ২০০১ খ্রিঃ ১৬ জুন নারায়নগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে, ২০০২ খ্রিঃ ৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের ৪টি সিনেমা হলে, ২০০৪ খ্রিঃ ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে, ২০০৫ খ্রিঃ ১৭ আগষ্ট ৬৩টি জেলায় ৫০০টি স্থানে একই সময় একযোগে, ২০০৫ খ্রিঃ ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠীতে ২ বিচারকের গাড়ীতে এবং সর্বশেষ ২০০৫ খ্রিঃ ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা/গ্রেণেড/সিরিজ বোমা হামলার তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ-০৮

২০০৫ খ্রিঃ ২৩ মার্চ রোজ বুধবার, ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর বাসভবন রক্ষিত বেলতা, সন্তোষ, টাঙ্গাইলে, ২০০৬ খ্রিঃ ১৭ অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার, বিজয় সরণী টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এ এবং ২০০৭ খ্রিঃ ৪ আগষ্ট রোজ শনিবার ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর বাসভবন রক্ষিত বেলতা, সন্তোষ, টাঙ্গাইলে বিশেষ সাংগঠনিক সভাসমূহের মাধ্যমে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর কার্যক্রমকে দেশব্যাপী বিস্তৃতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্ন (১৯৯৩ খ্রিঃ) থেকে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন দীর্ঘ প্রায় ১ (এক) যুগ গণফোরামের টাংগাইল জেলা শাখার সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

১১ জানুয়ারী, ২০০৭ এ দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর ১৯ জানুয়ারী, ২০০৭ রোজ শুক্রবার বিকেল ৪ ঘটিকায় বিজয় সরণী টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫ এ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র সভাপতিত্বে ইবহমধষ ঔধঃরুড় ঈড়হমৎবংং (ইঔঈ) এর উদ্যোগে রাজনীতির “হোলি খেলায় বাংলাদেশ” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র রক্ষায় এবং দেশে সামাজিক অর্থনীতি প্রবর্তনে পার্টির নেতা-কর্মীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।

সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড-০৩

ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইডিএ একটি সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি ১৯৮৭ খ্রিঃ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন যা এ দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। অদূর ভবিষ্যতে ইডিএ-র কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মডেল হিসেবে অনুকরণীয় হবে।

ইডিএ-র সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের মধ্যে ঞযব গবঃযড়ফরংঃ ঈযঁৎপয, টক এর অনুদানে সম্পাদিত “জবংবধৎপয, ঞৎধরহরহম, জবযধনরষরঃধঃরড়হ ড়ভ ফরংঃৎবংংবফ ড়িসবহ ্ রিফড়ংি রিঃযরহ ঃযব ঔঁৎরংফরপঃরড়হ ড়ভ ২৯ ঁহরড়হং ঁহফবৎ ঃযব ঔঁৎরংফরপঃরড়হ ড়ভ ৫ ঁঢ়ধুরষধং- ঞধহমধরষ ঝধফধৎ, উবষফঁধৎ, ঘধমধৎঢ়ঁৎ, কধষরযধঃর ্ ইযঁধঢ়ঁৎ ড়ভ ঞধহমধরষ ফরংঃৎরপঃ রিঃযরহ ঃযব ঢ়বৎরড়ফ ড়ভ ২০০১ ঃড় ২০০৩.

সেমিনার ও আলোচনা সভা

মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে প্রায় ৭০টি সেমিনার/আলোচনা সভা সম্পন্ন করেছেন। তন্মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো উল্লেখযোগ্য –
১.    “ঝযবরশয গঁলরন – ঞযব অৎপযরঃবপঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয”, “ঊহফবধাড়ঁৎ ড়ভ ঃযব পধৎবঃধশবৎ মড়াবৎহসবহঃ ধহফ ঃযব লড়রহঃ ভড়ৎপবং রহ বংঃধনষরংযরহম মড়ড়ফ মড়াবৎহধহপব”, “গধঁষধহধ ইযধংধহর – ঞযব ঢ়ৎড়ঢ়যবঃ ড়ভ ারড়ষবহপব”, “ঈবহঃৎধষ মড়াবৎহসবহঃ ংঃৎঁপঃঁৎব ধহফ মড়াবৎহধহপব”, “জবভড়ৎসধঃরড়হ ড়ভ পড়হংঃরঃঁঃরড়হ ঃড় ধফসরহরংঃবৎ ঃযব ংঃধঃব”, “ঈড়হঃৎড়ষষরহম পড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ রহ বংঃধনষরংযরহম ৎঁষব ড়ভ ষধি ধহফ ংড়পরধষ বপড়হড়সু”, “ঞযব ধফফৎবংং ড়ভ ঝযবরশয গঁলরন ড়হ গধৎপয ০৭, ১৯৭১ ঃড় ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয”, “ঘধঃরড়হধষ ঊপড়হড়সু ধহফ ঃযব জঁষব ড়ভ খধ”ি, “ওৎড়হ খবধফবৎ ড়ভ অংরধ, গধঁষধহধ অনফঁষ ঐধসরফ কযধহ ইযধংধহর”, “জবংঃড়ৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং ্ উবসড়পৎধপু ড়হ চৎড়ঃবপঃরহম ঞবৎৎড়ৎরংস ধহফ জধঢ়ব অপঃরারঃরবং ড়ভ গরংপৎবধহঃং”, “অংংধংংরহধঃরড়হ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ”, “ঝঃধঃব, ঘধঃরড়হ, ইধহমষধফবংয ্ ঝযধযরফ গঁলরন”, “গধহসড়যধহ’ং ঠরংরঃ ঃড় ইধহমষধফবংয ধহফ ঊীঢ়বপঃরড়হ ড়ভ চবড়ঢ়ষব”.
২.    “ঊহমষরংয (ষধহমঁধমব) ভড়ৎ ঃযব ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ যঁসধহ ৎবংড়ঁৎপবং”, “ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ড়ভ ংড়পরধষ বপড়হড়সু ধহফ ঢ়ড়ঢ়ঁষধঃরড়হ পড়হঃৎড়ষ রহ ভৎধসরহম ঃবৎৎড়ৎরংস ধহফ পড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ ভৎবব ংড়পরবঃু ধৎব বংংবহঃরধষ”, “অংংবংংরহম গধষব অঃঃরঃঁফব ঞড়ধিৎফ ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ডড়সবহ রহ ইধহমষধফবংয”, “জবংবধৎপয, ঞৎধরহরহম ধহফ জবযধনরষরঃধঃরড়হ ড়ভ গড়ংঃ উরংধফাধহঃধমবফ/ উরংঃৎবংংবফ ডড়সবহ ধহফ ডরফড়ংি”, “ঊংঃধনষরংযসবহঃ ড়ভ অফড়ঢ়ঃরড়হ ঙভভরপব ঃড় যবষঢ় জবংপঁব ধহফ জবযধনরষরঃধঃরড়হ ড়ভ ঝঃৎববঃ ঈযরষফৎবহ/ ঙৎঢ়যধহং ভড়ৎ ঊপড়ষড়মরপধষ নধষধহপব ড়ভ ঊহারৎড়হসবহঃ”, “ঝড়পরড় – ঊপড়হড়সরপ ধপঃরারঃরবং ড়ভ ঘড়হ – এড়াবৎহসবহঃ ঙৎমধহরুধঃরড়হং ড়ভ ঝড়ঁঃয অংরধ”, “ঐবধষঃয ঈধৎব রহ ইধহমষধফবংয”, “ঊহারৎড়হসবহঃ ধহফ ঋড়ৎবংঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয”, “ওসঢ়ধপঃ ড়ভ ঔধসঁহধ জরাবৎ ইধহশ ঊৎড়ংরড়হ ড়হ ঃযব চবড়ঢ়ষব ড়ভ ঞধহমধরষ”, “গধংং ঊফঁপধঃরড়হ রহ ইধহমষধফবংয”, “ঊভভবপঃ ড়ভ ঋষড়ড়ফ ড়হ জঁৎধষ চবড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয”.
৩.    “অংংবংংরহম ঈধঁংবং, ঊভভবপঃং ্ জবসবফরবং ড়ভ ঞবৎৎড়ৎরংস রহ ইধহমষধফবংয”, “উৎধসধ ভবংঃরাধষ ১৯৯৬- ওহধমঁৎধঃরড়হ ড়ভ ঞযবধঃৎব ঝপযড়ড়ষ, ঞধহমধরষ”, “উৎধসধ ঋবংঃরাধষ ১৯৯৮ – উৎধসধ রং ঃযব ডবধঢ়ড়হ ড়ভ ঝড়পরধষ ঊয়ঁরষরনৎরঁস”.
৪.    “জবংবঃঃষবসবহঃ, ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎবং ধহফ জড়ধফং উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঢ়ৎড়লবপঃং ড়ভ ঘধষশধ – ঐধঃরশঁসৎঁষ – ইড়হঢ়ধৎধ ঢ়ৎড়লবপঃ” ড়হ ঙপঃড়নবৎ ২৩, ১৯৯৮; “এৎধফধঃরড়হ ড়ভ অমমৎবমধঃবং ড়হ ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃরবং ড়ভ অংঢ়যধষঃরপ সরীবং” ড়হ অঁমঁংঃ ১২, ২০০৮; “চৎড়ংঢ়বপঃং ড়ভ জবহবধিনষব ঊহবৎমু রহ ইধহমষধফবংয”, গধৎপয ২৩, ২০১১; ঊহমরহববৎং ষবধফবৎংযরঢ় ভড়ৎ ঘধঃরড়হধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ, ঋবনৎঁধৎু ১১ ঃড় ১৪, ২০১১; ঊহমরহববৎ’ং জড়ষব রহ ঝড়পরড়-ঊপড়হড়সরপ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ধহফ ঊহারৎড়হসবহঃ, ঋবনৎঁধৎু ১১ ঃড় ১৪, ২০১১; এষড়নধষ ঈষরসধঃব ঈযধহমব ধহফ ইধহমষধফবংয, ঋবনৎঁধৎু ১৩, ২০১১; ঈযধষষবহমবং ভড়ৎ ভড়ড়ফ ংবপঁৎরঃু রহ ইধহমষধফবংয, ঋবনৎঁধৎু ১১, ২০১১; ঘঁপষবধৎ ঢ়ড়বিৎ ঢ়ৎড়মৎধসসব রহ ইধহমষধফবংয, ঋবনৎঁধৎু ১২, ২০১১; “কড়ষশধঃধ গবঃৎড়: চষধহহরহম, উবংরমহ, ঈড়হংঃৎঁপঃরড়হ ধহফ ঙঢ়বৎধঃরড়হ”, অঢ়ৎরষ ০৭, ২০১২; “ডড়ৎষফ ঢ়ষঁসনরহম উধু” ড়হ “ঢ়ষঁসনরহম ঢ়ৎধপঃরপবং রহ ইধহমষধফবংয: ঢ়ৎড়নষবসং ্ ঢ়ৎড়ংঢ়বপঃং”, গধৎপয ১৩, ২০১৬.
৫.    অৎঃরভরপরধষ পধষধসরঃু ঃবৎৎড়ৎরংসং ধহফ হধঃঁৎধষ পধষধসরঃু বধৎঃযয়ঁধশব: অহ ড়াবৎারবি ড়ভ ইধহমষধফবংয ্ ড়ঃযবৎ পড়ঁহঃৎরবং ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ ধহফ ড়ঁৎ ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃরবং, ঝবঢ়ঃবসনবৎ ০৩, ২০১৬.
ঞযব ধনড়াব দঝবসরহধৎং/উরংপঁংংরড়হ গববঃরহম’ বিৎব যবষফ ধঃ ইবষঃধ জধীরঃ, ঝধহঃড়ংয, ঞধহমধরষ; ইরলড়ু ঝধৎধহর ঞড়বিৎ, ১২১/৩ ঞবলশঁহরঢ়ধৎধ, ঞবলমধড়হ, উযধশধ; ইযধংধহর ঐধষষ, ঞধহমধরষ; ঘধঃরড়হধষ চৎবংং ঈষঁন, ঐড়ঃবষ ঝড়হধৎমধড়হ; ঐড়ঃবষ ঝযবৎধঃড়হ, ঞযব ওহংঃরঃঁঃরড়হ ড়ভ ঊহমরহববৎং ইধহমষধফবংয (ওঊই), উযধশধ জবঢ়ড়ৎঃবৎং টহরঃু, উযধশধ,

ঝরহপব ১৯৯৩ ঃড় ফধঃব যব যধং নববহ পড়হঃরহঁরহম যরং ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃরবং ধং ঃযব ঈযধরৎসধহ ড়ভ ঃযব অফারংড়ৎু ঈড়সসরঃঃবব, ঞযবধঃৎব ঞধহমধরষ, ধ পঁষঃঁৎধষ ড়ৎমধহরুধঃরড়হ রহ ইধহমষধফবংয; খরভব গবসনবৎ – এবহবৎধষ খরনৎধৎু, ঞধহমধরষ; ঝযবৎঢ়ঁৎ জড়ঃধৎু ঊুব ঐড়ংঢ়রঃধষ, ঝযবৎঢ়ঁৎ; ঘড়নড়ঃধৎধ ঈষঁন, ঔধহমধষরধ, উবষফঁধৎ, ঞধহমধরষ; ঝড়হধৎমধড়হ ঈষঁন, ইবষঃধ জধীরঃ, ঝধহঃড়ংয, ঞধহমধরষ; তরষধ ঈযধৎ টহহধুধহ ঝধসরঃু, ঞধহমধরষ, ঞধহমধরষ তরষষধ ঝধসরঃু, উযধশধ, গবহঃধষষু জবঃধৎফবফ ডবষভধৎব ্ ঊফঁপধঃরড়হ ঝধসরঃু, উযধশধ ধহফ ংড় ড়হ.

এখানে উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত সেমিনার/আলোচনা সভাসমূহের বেশীরভাগই “আবুল হোসেন পীস ফাউন্ডেশন” এর ব্যানারে সম্পন্ন হয়েছে।

সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড-০৪

নব্বই এর দশক থেকে দীর্ঘ সময়ে ইরাক, ইসরাইল, প্যালেষ্টাইন, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, আলজেরিয়া, সুদান, মিশর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকায় মানবাধিকার ও বিশ্ব শান্তি বিঘœ হওয়ার প্রেক্ষিতে বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে বিশ্বের ৩৮ রাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানকে যুদ্ধ বিগ্রহের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা ও আলোচনার মাধ্যমে এ সকল রাষ্ট্রের সমস্যাসমূহের সমাধান করার জন্য পত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানান। তন্মধ্যে এক চিঠিতে ইরাকের অবিসংবাদিত নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করার পরিবর্তে ক্ষমা করে দেয়ার আহ্বান জানান। যারা এ সকল চিঠির বিষয়সমূহের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন তন্মধ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, স্পেনের রাষ্ট্রপতি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী অন্যতম।

এতদ্ব্যাতীত তিনি আবুল হোসেন পীস্্ ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে আমেরিকার নেতৃত্বে গঠিত ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের ন্যাটো জোটের মাধ্যমে সামরিক অভিযান চালিয়ে আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা তথা লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্ণেল মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে হত্যার নিন্দা জানান। এ সময়ে আমেরিকার মাননীয় রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন- “আমেরিকা একজন সৈন্য না পাঠিয়েও লিবিয়া দখল করে গাদ্দাফীর পতন ঘটালো; লিবিয়া স্বাধীন হলো, লিবিয়ার মানুষ এখন স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন করবে”।

ইঞ্জিঃ আবুল হোসেন “আবুল হোসেন পীস্্ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তাঁকে জানিয়েছিলেন, ‘লিবিয়ার মানুষ স্বাধীনতা হারালো’, লিবিয়া আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের ঔপনিবেশে পরিণত হলো”। ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস এ বিষয়ে তাঁকে কয়েকবার টেলিফোনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান দূতাবাস কোন প্রশ্ন তোলেননি। উল্লেখ্য যে, আশির দশক থেকেই সারা বিশ্বের যেখানেই অনাচার, অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন, যুদ্ধ-বিগ্রহে মানুষ তাঁর মানবাধিকার হারাচ্ছেন বঙ্গরতœ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ‘আবুল হোসেন পীস্্ ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে অদ্যাবধি এর প্রতিবাদ করে আসছেন। তিনি ইরাক ক্রাইসিস, লিবিয়া ক্রাইসিস, সিরিয়া ক্রাইসিস, আফগানিস্তান ক্রাইসিস, সুদান ক্রাইসিস, ইয়েমেন ক্রাইসিস, পাকিস্তান ক্রাইসিস, ফ্রান্স ক্রাইসিস, জার্মানী ক্রাইসিস, আলজেরিয়া ক্রাইসিস, মিশর ক্রাইসিস, প্যালেস্টাইন-ইসরাইল ক্রাইসিস, শ্রীলংকা ক্রাইসিস, তিউনিসিয়া ক্রাইসিস, মায়ানমারের রোহিঙ্গা ক্রাইসিস, ভারত ক্রাইসিস ও বাংলাদেশ ক্রাইসিস বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন লিখেছেন এবং তা জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরেছেন। এ সকল দেশের সমস্যাসমূহ শুধু অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষ হত্যা ও সম্পদ বিনষ্ট করে সমাধানের চেষ্টা না করতঃ রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতৃবর্গকে একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটে।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ- ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত

২০০৯ খ্রিঃ ফেব্র“য়ারীতে তিনি ৪৮০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ নামক বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বের করেন। বইটিতে তিনি খৃষ্টপূর্ব ৪শ বছর থেকে ২০০৮ খ্রিঃ পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা ও মায়ানমার (বার্মা) এর ২৪০৮ বছরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গতিধারা অত্যন্ত সুনিপুনভাবে লিপিবদ্ধ করেন।

২০০৯ খ্রিঃ ৪ মার্চ, রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায় বিজয় সরণি টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫ এ ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) এর কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু। ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে ২৪ ফেব্র“য়ারি, ২০০৯ বিডিআর জোয়ানদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে বিডিআর এ দায়িত্বপালনকারী সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিডিআর এর উল্লেখযোগ্য অংশ সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। এ বিদ্রোহ ২৪ ফেব্র“য়ারি, ২০০৯ থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারি, ২০০৯ পর্যন্ত চলে। এতে বিডিআর জোয়ানদের হাতে বিডিআর এর মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। এ ঘটনায় উপরোল্লিখিত ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, শাকিল আহমেদ এর স্ত্রী, ১ জন সেনা সদস্য,  কয়েকজন বিডিআর সদস্য ও পথচারীসহ মোট ৭৩ জন নিহত হন। সভায় এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা, নিহত ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং সরকার কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও আর্থিক অনুদান প্রদানসহ এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।

২০১১ খ্রিঃ ফেব্র“য়ারীতে তিনি ৩০৪ পৃষ্ঠার ‘শেখ মুজিব-বাংলাদেশের স্থপতি’ নামক বইয়ের প্রথম সংস্করণ বের করেন। বইটিতে তিনি ১৭৫৭ খ্রিঃ থেকে ২০১০ খ্রিঃ পর্যন্ত প্রায় ২৫৩ বছর সময়কালের ভারত উপমহাদেশের-বঙ্গদেশের তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিবিধি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তন, বর্তমান বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন ঘটান।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দু’টো সম্মাননা লাভ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ৩০ জুলাই, ২০১১ রোজ শনিবার মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ভাইস চ্যান্সেলর ড. এম. নুরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে “মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথা (ইতিহাস) ও প্রজন্মের চেতনা” শীর্ষক এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবুকে ১৯৬৯ খ্রিঃ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ও ১৯৭১ খ্রিঃ মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ২টি বিশেষ সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ.কে. খন্দকার, বীরউত্তম, এম.পি, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এবং চেয়ারম্যান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ’ ৭১ কেন্দ্রীয় কমিটি। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে এস ফোর্সের অধিনায়ক ও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অবঃ) কে. এম. সফিউল্লাহ, বীরউত্তম, সাব-সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল (অবঃ) এম. হারুন-অর-রশীদ, বীরপ্রতীক ও মু্িক্তযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারী অন্যতম।

রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন

৩০ ডিসেম্বর, ২০১১ রোজ শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভি,আই,পি লাউঞ্জে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) জাতির উদ্দেশে ৮-দফা কর্মসূচী ঘোষনা করে।

২০১০ খ্রিঃ থেকে ২০১৩ খ্রিঃ পর্যন্ত ৩ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু বিশ্বশান্তি সন্ধানে (ওহ ছঁবংঃ ড়ভ ডড়ৎষফ চবধপব) নামক একটি বই লিখেছেন। বইটিতে বিশ্বের ৩৩০ জন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী মণীষির তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩ খন্ডে পুরো বইটি প্রকাশ করার কথা। বইটির প্রথম খন্ডে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ৫৫ জন মণীষির জীবন বৃত্তান্ত সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বইটিতে ইসলামিক সমাজব্যবস্থার সাম্যনীতির আলোকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশ্বের সকল রাষ্ট্রে ‘সামাজিক অর্থনীতি’ প্রবর্তনে ‘ঞযবড়ৎু ড়ভ ঊয়ঁধষরংস’ নামে একটি বিশেষ তত্ত্ব সংযোজন করা হয়েছে; যাতে বিশ্বের দরিদ্র ও বুভুক্ষূ মানুষের জীবনমান উন্নত করা যায় এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে “বিশ্বশান্তি সন্ধানে” নামক বইটি বিশ্বের ৩০টি সর্বশ্রেষ্ঠ বইয়ের মধ্যে অন্যতম বলে পরিগণিত হবে। ইতোমধ্যে ২৬ মার্চ, ২০১৩ খ্রিঃ ‘বিশ্বশান্তি সন্ধানে’ বইটির ১ম খন্ড প্রকাশক নওরোজ কিতাবিস্তান এর মাধ্যমে বের করা হয়েছে।

স¤প্রতি তিনি ‘এম. খোরশেদ স্কুল এন্ড কলেজ’ নামক একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

ইতোপূর্বে গবেষণালব্ধ ব্যতিক্রমধর্মী ‘বাংলাদেশের রাজনীতি’ নামক বইটি লেখার জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর তৎসময়ের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোজাফফর আহমেদ- এর নেতৃত্বে ভাসানী অনুসারী মঞ্চ কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবুকে ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ খ্রিঃ, রোজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯৮৩ খ্রিঃ বঙ্গরতœ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) জামালপুর কাচারী জামে মসজিদ এর ওজুখানা, মিনার ও ঝর্ণা ডিজাইন করেছিলেন। ঐ সময় কাচারী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব আবদুল মালেক। কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করার সময় জনাব আবদুল মালেক সাহেব হঠাৎ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঝর্ণার পানি বিস্তৃতাকারে যে যন্ত্র/অংশ দিয়ে বের হচ্ছে ঐ যন্ত্রের/অংশের ইংরেজী নাম কি? ঐ অংশের ইংরেজী নাম ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন সাহেবের জানা নেই। তাই হঠাৎ তিনি অনুমান করে বলে ফেললেন ঝঢ়ৎরহশষবৎ. দীর্ঘ সময় পর ২০১২ খ্রিঃ উরপঃরড়হধৎু  বের করে দেখেন তিনি যে ইংরেজী শব্দটি ১৯৮৩ খ্রিঃ বলেছিলেন তা সঠিক।

১৬ মে, ২০১৪ ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) এর পক্ষে বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ভারতের লোকসভা নির্বাচন, ২০১৪ এ জয়ী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনীত প্রধানমন্ত্রী জনাব নরেন্দ্র মোদিকে ভারত এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, স¤প্রীতি গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান, যাতে তাঁর গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২ খ্রিঃ সংঘটিত ধর্মীয় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় একজন মুসলিম সাংসদসহ প্রায় ২০০০ লোকের প্রাণহানি ঘটে, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম স¤প্রদায়ের, এমনটি যেন আর না ঘটে।

বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র নেতৃত্বে ১ নভেম্বর, ২০১৩ রোজ শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিঃ ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনাড়ম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর ডাক শীর্ষক সংশোধিত ৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় সমবাদ তত্ত্ব

বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গণতান্ত্রিক সমবাদ ও সামাজিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) ‘সমবাদ তত্ত্ব’ এর উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর নিকট উদাত্ত আহ্বান জানান। তত্ত্বটি নি¤œরূপঃ

সমবাদ তত্ত্ব: “গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টন প্রক্রিয়া, যাতে বুভুক্ষূ মানুষ (বিশেষ প্রতিকূল পরিবেশ ব্যতীত) কখনও না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন না করে এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা যায়”।

জনগণের জীবন মানোন্নয়নে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর ২৫ বছরের ভিশন

২০২৩ সালের মধ্যে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ, ২০২৮ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ, ২০৩৩ সালের মধ্যে উচ্চমধ্য আয়ের দেশ, ২০৩৮ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে “ভিলেজ সিটি” সমন্বিত শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করণ।

বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর ৮ দফা কর্মসূচি

বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূরীকরণে; নারী ও শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য, খুন ও ডাকাতি, গুম, বোমাবাজি, নির্বাচন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে; যুগোপযোগী শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনে; স্বল্প ব্যয়ে বাসস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়নে; আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তথা সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরীতে ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস’ (বিজেসি) ০৮ (আট) দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন- যা নি¤েœ প্রদত্ত হলো-

০৮ (আট) দফা কর্মসূচি-

১। সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এবং ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে তথা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরীতে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করণ।

২। যুগোপযোগী বৈষম্যহীন শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তন করণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করণে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধানের আলোকে জনসাধারণকে সতর্ক সচেতন করণ।

৩। রাষ্ট্র পরিচালনায় গতানুগতিক রাজনীতির বিপরীতে ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রেখে “সমবাদ তত্ত্ব” (ঞযবড়ৎু ড়ভ ঊয়ঁধষরংস)- র ভিত্তিতে “গণতান্ত্রিক সমবাদ” (উবসড়পৎধঃরপ ঊয়ঁধষরংস) পদ্ধতি প্রবর্তন করণ।

৪। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী প্রদানসহ ধনী-গরীবের ব্যবধান কমাতে সম্পদের সুষম বন্টন ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করণে এবং নিঃস্ব থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শতকরা ৯৩ ভাগ জনগণের জীবনমান বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং বেকার সমস্যার সমাধানসহ সকল মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান নিশ্চিত করণে হযরত ওমর (রা) শাসনামলের অনুকরণে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমবাদ তত্ত্ব-র ভিত্তিতে ‘সামাজিক অর্থনীতি’ (ঝড়পরধষ ঊপড়হড়সু) প্রবর্তন করণ।

৫। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধিকরণসহ কোরআনে হাফেজ, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ বেকার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেকার ভাতা প্রদান করণ।

৬। দেশের আইন শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুগোপযোগী পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনী গঠন করণ।

৭। খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরীতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমি সংস্কার আইন প্রণয়ন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করণ।

০৮। বাংলাদেশকে ৫টি প্রদেশ ও ১২টি বিভাগে বিভক্তি করণ এবং প্রত্যেক প্রদেশে ২৫টি করে শিল্পাঞ্চলসহ একটি করে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করণ।

মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় মূল্যবোধ

বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন (আবু) যে সকল কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করা পছন্দ করেন তন্মধ্যে নামাজ পড়া, সর্বদা সুগন্ধি (খুশবু) ব্যবহার করা, নারী জাতিকে ভালবাসার মাধ্যমে সম্মান করা, দ্বীনের পথে (মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) খরচ করা, মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা, ন্যায়ের পথে মানুষকে ধাবিত করা, সাদাসিধে কাপড়-চোপড় পরিধান করা, ক্ষুধার্তকে অন্ন ও বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেয়া, অসহায় এতিম, বিধবা, দুঃস্থদেরকে সেবা দেয়া, মেহমানদেরকে উত্তম খাদ্য পরিবেশন করা, সর্বোপরি নির্যাতিত, নিপীড়িত ও উপেক্ষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা অন্যতম।

সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রকাশিতব্য বইসমূহ

বঙ্গরত্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু অনেকগুলো বই লিখেছেন, তন্মধ্যে প্রকাশিত উপরোল্লিখিত ৩টি বই ব্যাতীত নি¤েœ বর্ণিত বইগুলো প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে-

    বিশ্বশান্তি সন্ধানে- দ্বিতীয় খন্ড [তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ]
    ঐঁহমবৎ ্ চড়াবৎঃু
    বিশ্বশান্তি সন্ধানে- তৃতীয় খন্ড [জনযুদ্ধ]
    ঈড়হমৎবংং [ঊয়ঁধষরংঃ] গধহরভবংঃড়
    উপমহাদেশের রাজনীতি
    ওংষধস ্ ঈড়সসঁহরংস
    বিশ্ব রাজনীতি
    ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব ্ ঈড়সসঁহরপধঃরড়হ
    ঞযব ডড়ৎষফ ও খরশব
    সহনশীলতা
    অঃ ঞযব উড়ড়ৎ ড়ভ ৩ৎফ ডড়ৎষফ ডধৎ
    গু ঊভভড়ৎঃ [আত্মজীবনীমূলক]

সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে প্রকাশিত কবিতাসমূহ

এতদ্ব্যাতীত সম্প্রতি তিনি দেশাত্ববোধক ২৩টি কবিতা লিখেছেন, তাহলো- রজনীগন্ধা, নতুন পথের সন্ধানে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, পদ্মা সেতু, অবাক পৃথিবী, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, ভাগ্য বিধাতা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, স্বরাজ শান্তির নীড়, জনতার নিশানায়, শান্তির প্রীতি, চাঁপা কান্না, খিদমতগার, গডফাদার, সমবাদ নীতি, স্বপ্নের বাংলাদেশ, বস্তিবাসী, ক্ষুধা ও দারিদ্র, তাজমহল, নীরব দূর্ভিক্ষ, সহনশীলতা, বড় ভাই, রাজনীতি।

রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সারসংক্ষেপ

বলা বাহুল্য, ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ১৯৬৯-১৯৭১ খ্রিঃ ৩ বছর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের, ১৯৭২-১৯৭৩ খ্রিঃ ২ বছর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)-র, ১৯৭৪-১৯৭৭ খ্রিঃ ৪ বছর জাসদ ছাত্রলীগের, ১৯৭৮-১৯৭৯ খ্রিঃ ও ১৯৮১-১৯৯১ খ্রিঃ ১২ বছর জাসদের, ১৯৯২-২০০৩ খ্রিঃ প্রায় ১২ বছর গণফোরামের এবং ২০০৩ খ্রিঃ হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)-র সাথে সম্পৃক্ত থেকে দীর্ঘ ৪৬ বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।

প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে বর্তমানে তিনি শুধু ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস লিঃ’ [টেক-সেতু গ্রুপ] ব্যাতীত অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছেন।

বর্তমানে (২০১৬) বঙ্গরতœ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু “বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস” (বিজেসি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারর্সদের দ্বারা গঠিত সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, টাংগাইল জেলা কমিটির সভাপতি। এতদ্ব্যাতীত তিনি সাংবাদিকতায়ও নিয়োজিত আছেন।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।