স্টাফ রিপোর্টার, ১৯ মার্চ ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : বরকলে সম্প্রতি খুন হওয়া কৃষক মো. হারিছ মোল্লা হত্যাকান্ড নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে তার স্বজনেরা। হারিসের পাঁচ বছরের শিশু পুত্র বলছে তার বাবাকে মারধোর করেছে তারই বড়ভাই রমজান ও কালাম গং। স্বজনদের অভিযোগ হারিছ মোল্লাকে যারা হত্যা করেছে তারাই প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে নিরপরাধ স্ত্রী ও তার ভাইকে এ ঘটনায় ফাসিয়ে দেওয়ার যড়যন্ত্র করছে। স্থানীয়দের ধারনা পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে কিন্তু রং দেওয়া হচ্ছে স্ত্রী হেনারা বেগমের পরকীয়া বলে ।
ঘটনার পরপরই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে স্ত্রী হেনারা বেগমসহ তিনজনকে পুলিশ আটক করলেও স্বজনেরা তাদের নির্দোষ বলে দাবি করে বলেন, প্রকৃত খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। বুধবার সকালে রাঙামাটি শহরের বনরূপায় একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি করেন তারা। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নিহত হারিছ মোল্লার শ্বাশুড়ি সালেহা বেগম, আটক আসামি ছগির আহমেদের বোন তাছলিমা বেগমসহ প্রতিবেশী লোকজন। এ সময় হারিছ মোল্লার পাঁচ বছরের শিশু সন্তান আতিককে তার বাবার হত্যার প্রত্যক্ষদর্শি হিসেবে দাবি করেন তারা। আতিক সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার বাবা হারিছ মোল্লার হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয়।
৩ মার্চ রাতে বরকল উপজেলার ভুূষণছড়া ইউনিয়নের কলাবুনিয়ার বামল্যান্ড নামক এলাকার কৃষক মো. হারিছ মোল্লাকে খুন করা হয়। একদিন পর ৩ মার্চ সকালে তার বাড়ির পাশে একটি তামাক খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে বরকল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ৮ মার্চ হারিছ মোল্লার মেয়ে শাহনাজ বাদী হয়ে সৎ মা হেনারা বেগমসহ সাতজনকে আসামি করে বরকল থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-০১ তারিখ-০৪/০৩/২০১৬) করেন। মামলায় ৩ আসামি হেনারা বেগম, তার ভগ্নিপতি ছগির হোসেন ও ভাই মো. রবিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি চার আসামি ইসহাক, বিল্লাল, জাহাঙ্গীর ও আলমগীর এখনও অধরা।
এদিকে নিহত হারিছ মোল্লার শ্বাশুড়ি দ্বিতীয় স্ত্রী হেনারা বেগমের মা সালেহা বেগম ও স্বজনরা দাবি করে বলেছেন, হারিছ দ্বিতীয় স্ত্রী আমার মেয়ে হেনারা ও তার শিশু সন্তান আতিককে ৫০ শতক জায়গা দেয়ায় ঘটনার দিন হারিছের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে শিরিনা, জামাই মিজানুর, ছেলে রমজান ও আবুল কালাম মিলে হেনারাকে মারধর করে। এতে হারিছ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। পরে তাদের বাড়ি থেকে আমার মেয়ে হেনারাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যায়। এর পরপরই শিরিনা, তার স্বামী মিজানুর, ভাই আবুল কালাম ও রমজান মিলে লাঠিসোটার আঘাতে হারিছকে মেরে ফেলে। একদিন লুকিয়ে রাখার পর পাশের ওই তামাক ক্ষেতে লাশটি ফেলে রেখে আসে। আমার নাতি শিশু আতিক তার বাবা হারিছের সঙ্গে ছিল। সে ঘটনাটি নিজ চোখে দেখেছে। আমার মেয়ে হেনারা এবং অন্য আসামিরা নির্দোষ। তাদেরকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
ওই সময় হারিছের শিশু সন্তান আতিককে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, শিরিনা, মিজানুর, রমজান, আবুল কালাম তার বাবাকে লাঠি দিয়ে কপালে, গায়ে আঘাত করে। পরে রমজান ঘাড়ে ধরে তার বাবাকে টেনে হেঁচড়ে উঠানের বড়ই গাছের তলায় নিয়ে রাখে।
মামলার আটক আসামি ছগির হোসেনের বোন তাছলিমা বলেন, খুনিরা বাঁচার জন্য নির্দোষীদের ফাঁসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাদের ঘনিষ্টজন ইব্রাহীম প্ররোচিত করে খুনিদের সহায়তা করেছেন। সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমার ভাই ছগির ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। সে সহজ সরল মানুষ। সে নির্দোষ। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের দাবি করে বলেন, ইসহাক ও হেনারার পরকীয়ার কানাঘুষা শোনা গেছে। তবে ওই পরকীয়ার জেরে হারিছ মোল্লাকে খুন করা হয়নি। এর মূল কারণটি হল জমি নিয়ে বিরোধ।
এ ব্যাপারে বরকল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীলু কান্তি বড়–য়া বলেন, মামলা তদন্তাধীন। তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার স্বার্থে সব কিছু প্রকাশ করা যাবে না। মামলাটির বিস্তারিত থানায় লিপিবদ্ধ আছে।
পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান