মোহাম্মদ সোলায়মান- ১৩ জুন ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি: গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঠিক এক বছরের মাথায় মঙ্গলবার আবারো পাহাড় ধসে ১১ জনের প্রাণহানী হয়েছে। টানা বর্ষণে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া লংগদু উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে দুই জন। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক প্রাণহানীর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দূর্যোগ মোকবেলা ও সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধর্মচরন কার্বারি পাড়ায় একই পরিবারের চারজন, নানিয়ারচর ইউনিয়নের বড়পোল পাড়ায় একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হাতিমারায় তিনজন রয়েছেন। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড়ধসে এ প্রাণহানী ঘটে। এঘটনার পর থেকে জেলা জুড়েই ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধর্মচরণ কার্বারিপাড়ার ফুলদেবী চাকমা (৫৫), তার মেয়ে ইতি দেওয়ান (১৯), পুত্রবধূ স্মৃতি চাকমা (২৩), নাতি আয়ুব দেওয়ান (দেড় মাস); সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পোল পাড়ার সুরেন্দ্র লাল চাকমা (৫৫), তার স্ত্রী রাজ্য দেবী চাকমা (৫০), মেয়ে সোনালী চাকমা (১৩); একই এলাকার মহিলা মেম্বার রত্মা চাকমার ছেলে রোমেন চাকমা (১৪), ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মোনতলা এলাকার বৃষকেতু চাকমা (৫৫), হাতিমারা এলাকার রিপোল চাকমা (১৪) ও রিতা চাকমা (৮)।
এরইমধ্যে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সোমবার দুপুরে লংগদু উপজেলায় মাইনী নদীতে পাহাড়ি ঢলে আয়নাল হোসেন (২৮) ও মঙ্গলবার দুপুরে মুন্নি আক্তার (১৩) নামের দুজন পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জেলার বাঘাইছড়ি লংগদু, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, কাউখালী ও কাপ্তাইয়ের নিচু ভূমিতে পানির উচ্চতা বেড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সেখানকার ফসলি জমিসহ, বসত-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা। এছাড়া সড়ক ও পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের কয়েকটি জায়গায় মাটি ধ্বসে পড়ায় রাঙামাটির সাথে নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে লংগদু-দিঘীনালা সড়ক। রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকায় সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
শনিবার থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদি নতুন পাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, পাবলিক হেলথ, উন্নয়ন বোর্ড ও এসপি অফিস এলাকায় পাহাড় ও দেয়াল ধস হয়েছে। আতঙ্কিত এসব এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন রাঙামাটি শহরে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
রাঙামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা কেচিমং মারমা জানিয়েছেন, ১১ জুন (সোমবার) সকাল ৬টা থেকে ১২ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নানিয়ারচর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা জানিয়েছেন, ‘পাহাড় ধসে উপজেলার ইসলামপুরে ৪৫টি, বগাছড়িতে ৪২টি এবং বুড়িঘাটে একটি বসত ঘর মাটি চাপা পড়েছে। নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার জানান, পাহাড়ধসের পর থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশ, সেনা বাহিনী ও দমকল বাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালায়। রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, ১১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিমসহ উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা অংশ নিয়েছেন।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ মঙ্গলবার নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। এরইমধ্যে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের লোকজন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সরিয়ে নিচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণের মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে’।
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।