৬ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার- ঢাকা ব্যুরো অফিস, দৈনিক রাঙামাটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচীকে বেগবান করার লক্ষ্যে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ায় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি) (এধার, ঃযব ঠধপপরহব অষষরধহপব) কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংসদ সদস্যবৃন্দ। পাশাপাশি, সংসদ সদস্যবৃন্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ সফররত গ্যাভি মিশনের (এঅঠও, ঃযব ঠধপপরহব অষষরধহপব গরংংরড়হ) সদস্যদের সাথে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং (ইচঋঐড)’ এক মতবিনিময় সভায় এই বিষয়গুলো উঠে আসে।
ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিয়ম সভায় সংসদ সদস্যবৃন্দ দেশের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি, টিকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা, স্থানীয়ভাবে টিকা প্রস্তুতকরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোকবল সংকট নিরসন, তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি, এবং জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় অবিলম্বে তামাক আইন সংশোধনের বিষয়গুলো সভায় তুলে ধরেন।
সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, “তামাক দেশের জন্য একটি বড় হুমকি যা একসাথে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি দুইটারই ক্ষতি করে। তামাকপন্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় তামাকপন্যের ব্যবহার কমে আসবে বলে আশা করি। তবে তামাক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করলে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার পথ সুগম হবে। তাছাড়া, তিনি আরও বলেন, “টিকাদানে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তবে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানের পক্ষে দেশ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত তহবিল অব্যাহত রাখার জন্য আমি গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের শক্তি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ফোরামের উপদেষ্টা জনাব আ, স, ম, ফিরোজ এমপি বলেন, “আমি আশা করি আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শী। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। টিকাদানে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প রয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং গ্যাভির মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরঅ বলেন “বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং বছরে দেশের প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদেরকে অতি দ্রুত তামাক আইন সংশোধনী পাশ করতে হবে।”
সভায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি। এর মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের চিঠি, তামাক আইন সংশোধনের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট ১৫২ জন সংসদ সদস্যের চিঠি, সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকের উপর কর বৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর নিকট ৮৬ সংসদ সদস্যের চিঠি দেয়া, এবং বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচিতে গ্যাভির অর্থায়নের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ উল্লেখযোগ্য। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, “আমরা জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গ্যাভিকে অনুরোধ করেছিলাম এবং তারা আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আমরা গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাই। গাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং এদেশে টিকাদানের সাফল্য তাদেরও অর্জন। আমাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে। আমরা গ্যাভিকে সাথে রাখতে চাই এবং আমরা ভবিষ্যতের জন্য তাদের সমর্থন আশা করি। তিনি আর বলেন, “তামাকের উপর যুক্তিযুক্ত কর ও মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রায় ১০ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও বাড়তি ৯,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে যা বর্তমানে প্রাপ্ত রাজস্বের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
সংসদ সদস্য জনাব আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমপি বলেন, “গ্যাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তাদের সহায়তায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অতীতে অনেক উন্নতি করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের অবদান মনে রাখার মতো। আমরা যদি সময়মত পদক্ষেপ নিতে না পারি তাহলে আগামীতে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।
গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার, নিলগান আয়দোগান বলেন, “আমরা ২০০১ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছি। আমাদের সহায়তার মধ্যে রয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধি, কারিগরি সহায়তা, কোভিড-১৯ টিকা সহায়তা। বাংলাদেশে এ বছরই শুরু হতে যাচ্ছে এইচপিভি টিকা কার্যক্রম যা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখবে। বাংলাদেশে টিসিভি এবং জেই টিকাও চালু করা হবে। আমরা টিকাদান কর্মসূচি চলমান রাখতে সংসদ সদস্যদের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের সত্যিই প্রশংসা করি।”
এর আগে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম জোরদারকরণে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহন, বাংলাদেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আর্থিক ও কর্মসূচিগত স্থায়িত্ব, এবং বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে পৃথক পৃথক তিনটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ার ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার নিলগান আয়দোগান, এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ঊচও) পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন।
আলোচনা সভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ আ. ফ. ম. রুহুল হক এমপি, জনাব আ, স, ম, ফিরোজ এমপি, ডাঃ সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল এমপি, জনাব মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার এমপি, জনাব আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমপি, বেগম শিরীন আখতার এমপি, বেগম শিরীন আহমেদ এমপি, বেগম শবনম জাহান এমপি, বেগম হোসনে আরা এমপি, জনাব মনিরা সুলতানা এমপি, অ্যাড. সৈয়দা রুবিনা আক্তার এমপি, অ্যাড. জাকিয়া তাবাস্সুম এমপি, অ্যাড. আদিবা আনজুম মিতা এমপি, জনাব রতœা আহমেদ এমপি, এবং জনাব নার্গিস রহমান এমপি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি) (এধার, ঃযব ঠধপপরহব অষষরধহপব) বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণের অন্যতম প্রধান দাতাসংস্থা। সংস্থাটির সার্বিক সহায়তায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিএসও’দের সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা প্রাপ্তিতে অবদান রেখে থাকে। ২০০১ সাল থেকে গ্যাভি বাংলাদেশে শিশু টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে আসছে। বাংলাদেশের টিকাদান কার্যক্রমে গ্যাভির অর্থায়ন ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’এর অনুরোধে তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। জানুয়ারিতে ফোরামের কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে অর্থায়ন সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্যাভি। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আগামী ২০৪১ সাল জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গ্যাভিকে অনুরোধ করেন। অন্যদিকে, ১৪৮টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ধূমপায়ীর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। তাছাড়া, তামাকের কারনে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই হুমকি মোকাবেলা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরী।
বার্তা প্রেরক- সামছুল আলম,
কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিষ্ট, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
আপলোড ও সম্পাদনা- শামীমুল আহসান
ঢাকা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক রাঙামাটি