॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥
ঈদ আবহমান বাংলার এক চিরায়ত আনন্দ। কি ধর্মীয়, কি সমাজিক, বা রাষ্ট্রীয় আঙ্গিকে ঈদ ঘিরে এ দেশের মানুষ যেমন শ্বাশ্বত ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়, তেমনি আনন্দে উদ্বেল হয় সমাজের সর্বব্যপী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ধর্ম-বর্ণ এবং সকল বয়সের মানুষ। একমাস সিয়ম সাধনা করার পর মুমিন মুসলমানদের জন্য ঈদ যেমন ¯্রষ্টার দেওয়া এক অনন্য উপহার, তেমনি ছেলে-মেয়েদের জন্য এ যেন ফিবছরের কাঙ্খীত পাওয়া। ঈদের প্রস্তুতিও চলে তাই মহা সমারোহে। ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ বাকী। এর মাঝে টানা বর্ষণে গত কয়েকদিন ব্যবসা মন্দা যাওয়ার পর বুধবার থেকে বেশ জমে উঠেছে রাঙামাটির ঈদের বাজার। তাই বিক্রেতাদের মুখে যেমন হাসি ফুটে উঠেছে তেমনি ক্রেতা সাধারণও তাদের পছন্দের জিনিসটি কিনে বাড়ি ফিরতে পারায় মহাখুশি। বিক্রেতারা আশা করছেন দুয়েকদিনের মধ্যে বিকিকিনি আরো বাড়বে এবং পুরোদমে ঈদের বাজার জমে উঠবে। শনিবার (৯জুন) শহরের বনরূপা এলাকার মার্কেটগুলো ঘুরে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।
রাঙামাটি শহরের বড় শপিংগুলোর মধ্যে বিএম মার্কেট অন্যতম। এখানে একই ছাদের নিচে সবই পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এ মার্কেটে আসে ঈদের কেনাকাটা করতে আসে সাশ্রয়ী দামের কারণে। ঈদের কেনাকাটা এবং ঈদ কালেকশন নিয়ে কথা হয় নিউ বধূয়া শাড়ি বিতানের স্বত্তাধিকারী দেবাশিষ মহাজনের সাথে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, দিনের অর্ধেক সময় ক্রেতা সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম বাড়ে।
এ বারের ঈদে কোন ধরণের পোশাক বেশি চলছে জানতে চাইলে এ দোকানি বলেন, এবারের ঈদে জামদানী, বি-প্লাস শাড়ি, গাউন এবং লাসা নামক পোশাক বেশি চলছে। এসব শোশাকের দাম সাধ্যর মধ্যে থাকায় ক্রেতা সংখ্যা বেশি বলে এ ব্যবসায়ী জানান। এছাড়া গরমের সিজন হওয়ায় সুতার প্রিন্ট ত্রিপিস বেশি চলছে।
পাশের দোকান নিউ বধূয়া শাড়ি বিতানের ম্যানেজার নাজিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, রমজানের শুরুতে ক্রেতা সমাগম না থাকলেও ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে তত ক্রেতা বাড়ছে। বিশেষ করে ইফতারের পর ত্রেতার চাপটা বেশি দেখা যাচ্ছে। কোন ধরণের পোশাক বেশি চলছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বছর কমদামি শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামি বা জর্জেট শাড়ির চাহিদা একেবারেই নাই। তবে আর কয়েকদিন পর ক্রেতার সংখ্যা আরও দ্বিগুণ হবে বলে জানান তিনি।
বিএম শপিং কমপ্লেক্সোর রাজু গার্মেন্টস এন্ড শাড়ী বিতানের স্বত্তাধিকারী নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, বেচাকেনা জমে উঠেছে। আর কয়েকদিন বেচাকেনা আরও ভাল বাড়বে। ছেলেদের কি ধরণের পোশাক বেশি চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেদের প্রিন্টের পাঞ্জাবী, প্রিন্টের শার্ট এবং জিন্সের প্যান্ট বেশি চলছে। আজ এবং গতকাল বৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতা সমাগম কম হলেও কয়েকদিনের মধ্যে বেড়ে যাবে বলে ব্যবসায়ী জানান।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাঙামাটি বিএম শপিং কমপ্লেক্সে চলে এসেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসার কাজে সময় পায়না। আবার ঈদের কয়েকদিন আগে আসলে ভিড় লেগে থাকবে। এজন্য বৃষ্টি উপক্ষো করে অগ্রিম চলে আসলাম।
বৃষ্টি উপক্ষো করে অনেকে ঈদের কেনাকাটা করতে চলে এসেছেন। তবে সকাল কিংবা বিকেলে শপিংমলগুলোতে ক্রেতা সমাগম কম থাকলেও ইফতারের পর থেকে মার্কেটগুলোতে ভিড় লেগে থাকে
শহরের তবলছড়ি এলাকা থেকে বনরূপার বিএম মার্কেটে শপিং করতে এসেছেন শেফালী বেগম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, পরিবারের সকলের জন্য ঈদের বাজার করার জন্য এসেছি। ছেলে, স্বামী এবং শ্বশুরের জন্য পাঞ্জাবী, শার্ট , মেয়ের জন্য ত্রিপিজ, নিজের এবং শ্বাশুরির জন্য শাড়ি কিনেছি। এখন বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বৃষ্টি আসায় দাড়িয়ে আছি। তবে শাড়ি- ত্রিপিজ এবং ছেলেদের পোশাকের দোকানগুলো জমজমাট বিকিকিনি করলেও কসমেটিক্সের দোকানগুলো বিকিকিনি এখনো জমে উঠেনি।
এদিকে মার্কেট এলাকাগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রাঙামাটি কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিম বোস। তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এসব এলাকার জনসাধারণ এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। সারাক্ষণ পুরো এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে যাবতীয় ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করেছে।