বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচনে তিন মেয়র প্রার্থীর সম্পদের হিসাব

347

Bandarban Candited PiC

নুরুল কবির , ২২ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : বান্দরবান পৌরসভা নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার সঙ্গে মেয়র প্রার্থীদের সম্পদ এবং আচার-আচরণ নিয়ে চলছে যত আলাপ-আলোচনা। প্রার্থীদের মধ্যে কে বেয়াদব, কে পাগল এবং কে সাদামাটা মানুষ প্রার্থীদের যত দোষত্রুটি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ভোটারদের। বেয়াদবের চেয়ে পাগল ভালো, পাগলের চেয়েও সিগারেট ভালো এমন মুখোরোচক সব কথাবার্তা চলছে চায়ের দোকানের আড্ডায়। হলফনামায় প্রার্র্থীদের তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে সম্পদ কার বেশি, সৎ যোগ্য প্রার্থী-কে, তারা কাকে ভোট দেবেন এনিয়ে চলছে ভোটারদের মাতামাতি।

নির্বাচন অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, সদর পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা, নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো: ইসলাম বেবী, লাঙ্গল প্রতীকে মিজানুর রহমান বিপ্লব জাপা পার্থী। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে মোহাম্মদ জাবেদ রেজা এবং মিজানুর রহমান বিপ্লব দুজনেই পৌরসভাটির নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন একবার। আর মো: ইসলাম বেবী দুইবার কাউন্সিলর এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে এগিয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী। বিগত দুটি নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখাগেছে পাঁচ বছরে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা’র আয় বেড়েছে ৫ গুন। সম্পদও বেড়েছে কয়েকগুন।

হলফনামায় দেয়া মেয়র প্রার্থীদের তথ্য: বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা’র পেশা ব্যবসা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ২৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৮শ টাকা। আর প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। অন্যান্য আয় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ:  নগদ টাকা নিজনামে ৪ লক্ষ ৯ হাজার ১১০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকা। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদে শাহাজালাল ব্যাংকে ডি.পি.এস ১ লক্ষ ১৮১২ টাকা, স্বর্ণ ৩০ তোলা বিবিধ অলংকার, অন্যান্য সম্পদ দেখানো হয়েছে ৬৭ লক্ষ ৫০ হাজার ৮৯০ টাকা। আর ইসলামী ব্যাংক বান্দরবান শাখায় টিআর ঋণ দেখানো হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পদ নিজনামে জমির পরিমাণ অকৃষি ১.০৫ একর ও ৪২৩৫ বর্গফুট।

আর ২০১১ সালের হলফনামায় বিএনপি মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজার বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছিল ব্যাবসা থেকে বছরের আয় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৬’শ ৯০ টাকা, নগদ জমা ২০ হাজার টাকা, স্ত্রী নামে ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমার পরিমান ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, বান্দরবান পূবালী ব্যাংকে ডিপিএস ৯৮ হাজার ৬’শ ৯৩ টাকা, চট্টগ্রাম শাহাজালাল ব্যাংকে ডিপিএস ২০ হাজার ৩’শ ৫৪ টাকা, স্বর্ণ সাড়ে ৪ ভরি, জমির পরিমান অকৃষি ২ একর, নিজ আয় হতে প্রাপ্ত অর্থ ২ লক্ষ টাকা।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বিল্পবের পেশায় আইনজীবি।  আইন পেশা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। নগদ টাকা জমা নিজনামে ১৫ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। আর নিজনামে স্বর্ণ ৩০ তোলা বিবিধ অলংকার। আর সম্পদ দেখানো হয়েছে যৌথ মালিকাকানায় ০.৪ একর জমিতে ১টি দ্বিতল দালান এবং ০.১২ একর জমির কাঁচা বসতঘর। আর ২০১১ সালের হলফনামায় বাৎসরিক আয় পৌর মেয়র হিসেবে বছরে সম্মানী ভাতা ৬০ হাজার টাকা, নগদ ১১ হাজার ৫’শ টাকা, ব্যাংকে জমা নিজ নামে ১হাজার ৫’শ টাকা ও স্ত্রী নামে ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৫ভরি, টিভি ১টি, মোবাইল ২টি, বঙ্খাট ১টি, আত্মীয়-স্বজন থেকে দান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা, অন্য ব্যাক্তি হতে ধার ২০ হাজার।

আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো: ইসলাম বেবীর পেশা ব্যবসা। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র জমা ৩ লক্ষ টাকা। প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় ৭ লক্ষ টাকা। আর নগদ জমা ৩ লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পদ নিজনামে ১ ভরি এবং স্ত্রীর নামে ১২ভরি স্বর্ণলংকার রয়েছে। নিজনামে অকৃষি জমির পরিমাণ ৪ একর। স্থাবর সম্পদ চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামার ইত্যাদি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। আর ২০১০ সালের হলফনামায় ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছিল ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ নিজনামে নগদ জমা ১০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজনামে জমা ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র জমা ২ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। নিজনামে স্বর্ণ ২০ তোলা। স্থাবর সম্পদ: নিজনামে কৃষি জমি ২০ শতক এবং অকৃষি ৫ শতক জমি। যৌথ মালিকানায় অকৃষি জমি ১৭.৫ শতক জমি রয়েছে।

স্থানীয় ভোটার শহীদুল আলম ও শ্রাবন্তি চক্রবর্তী বলেন, প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ অনেকবেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। মেয়র প্রার্থীদের তিনজনের দুজন আগেও মেয়র ছিলেন। এবং একজন পেনেল মেয়র ও দুবারের কাউন্সিলর ছিলেন। প্রার্থীরা সকলেই ভোটারদের পরিচিত এবং তাদের দোষত্রুটিগুলোও ভোটারদের চোখে দৃশ্যমান। মন্দের ভালো চিন্তা করেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবে ভোটাররা। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা এবং সততা’কে গুরুত্ব দেয়া হবে।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান