বেপরোয়া শিকারী : হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের বন মোরগ

274

p.......7

নুরুল কবির, বান্দরবান প্রতিনিধি- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : বন মোরগ, বনেই থাকার নিয়ম। বনেই তার জন্ম। বন মোরগ দেখতে হুবহু দেশিজাতের মোরগের মত হলেও আকার ও ওজনে অনেকটা কম। এটি এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে দ্রুতগতিতেই উড়ে বেড়ায়। একটি বন মোরগের ওজন সর্বোচ্চ ১ কেজি, আর মুরগীর ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম হয়। বন মোরগের মাংস খুবই সু-স্বাদু। এর রান্না করা হাড়গুলো কড়কড়ে; মড়মড়ে। বন মোরগের রং লাল ও কালো আর বন মুরগীর রং হালকা লাল। বন মুরগী ১০/১২টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে দেশীয় মুরগীর ডিমের চেয়ে একটু ছোট। বন মোরগ-মুরগী গহীন অরণ্যে থাকতে পছন্দ করে। এক সময় পাহাড়ে গেলেই দেখা যেত বন মোরগের ছুটাছুটি। কিন্তু এখন তা একেবারেই দুর্লভ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার গহীন অরণ্যে শিকারীদের উৎপাতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে  দুর্লভ বন মোরগ।

প্রতি শনি ও মঙ্গলবার লামা পৌর শহরের মাছ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এবং একইভাবে সাপ্তাহিক বাজারের দিন আলীকদম প্রধান বাজারে ১০-২০ জন শিকারী বিপুল সংখ্যক বন মোরগ এবং পোষ্য বন মোরগের প্রকাশ্যে বিক্রি করেন। প্রকাশ্যে বন মোরগ বিক্রি করলেও এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণি সংরক্ষণ আইন অকার্যকর এ দুই উপজেলায়। ফলে পাহাড় থেকে ক্রমেই বিলুপ্ত কিংবা হারিয়ে  যাচ্ছে এ বন মোরগ।

শুষ্ক মৌসুমে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়ী প্রবাসের ডুরি ও জাহাঙ্গীরের ডুরিসহ গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে কিছু কিছু সময় বন মোরগ-মুরগী দেখা যায়। গত সোমবার সকালে লামা বাজারে কথা হয় বন মোরগ শিকারী আমিনুল হক সঙ্গে। তিনি জানান, ঘরে পোষা বন মোরগকে বন মোরগের আবাস স্থলের কাছাকাছি নিয়ে; পায়ে চিকন রশি দ্বারা বেঁধে রাখেন। পোষা বন মোরগ তখন বাঁক দিতে থাকে। তখন বন মোরগগুলো এ মোরগটিকে মারতে আসে। মারামারির এক পর্যায়ে দূরে লুকিয়ে থাকা শিকারী দৌড়ে গিয়ে বন মোরগটিকে ধরে ফেলেন। কোন কোন শিকারী চিকন সুতার কল, ফাঁদ ও জাল দিয়ে একসাথে ৭/৮টি মোরগ-মুরগী শিকার করেন। আবার কোন কোন শিকারী ধানের সাথে বিষ মিশিয়ে আবাস স্থলে ছিটিয়ে দেয়। আর এ ধান খেয়ে ছোট-বড় অনেক মোরগ-মুরগী মারা যাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট আগে জবাই করে দেয়। অন্যাথায় এরা নিজের পায়ের ধারালো নখ দিয়ে গলার রগ ছিড়ে আত্বহত্যা করে বলেও শিকারীরা জানান।

সূত্র জানায়, শিকারীরা ১টি বন মোরগ বিক্রি করেন ৩০০/৪০০ টাকা দরে। আর বন মুরগী বিক্রি করে ১৫০/২০০ টাকায়। অনেকে অতিথি আপ্যায়ন অথবা সখ করে খাওয়ায় জন্য শিকারীদের আগাম টাকা দিয়ে থাকেন বন মোরগের জন্যে। একটি পোষা বন মোরগের দাম ৩/৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন হাটবাজারে বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় যে বন মোরগটি বেশী ভালো মনে হয় তার দাম তত বেশী। শিকারীরা বলছেন, শীত মৌসুম বন মোরগ শিকারের উপযুক্ত সময়। এ সময় একটি পোষা বন মোরগ থেকে মাসে ১৫/২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। লামা ও আলীকদম উপজেলায় শতাধিক বন মোরগ শিকারী এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বন মোরগ শিকারের বিষয়টি আমি অবগত নই, তবে কেউ বন্য প্রাণি শিকার করলে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে।

পোস্ট করেনন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান