ভূমি কমিশনে আবেদনের সময় আরো বাড়লো

590

p-031
॥ আলমগীর মানিক ॥ পার্বত্য ভূমি কমিশনে অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়েছে কমিশন। এই সময়ে আপাতত কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

কমিশন থেকে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে আবেদন জানানোর সময়সীমা ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫ দিনের জন্য  বেঁধে দেওয়া হলেও, যেহেতু বোঝা যাচ্ছে আরো কেউ কেউ এখনও আবেদন জানাতে পারেনি; তাদের বিষয়টি কমিশন বিবেচনায় নিয়েছে।তাই এর পরেও অভিযোগ আসলে কমিশন আবেদনের গুরুত্ব বিবেচনা করে তা আমলে নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ভূমি বিরোধ জটিলতা নিরসনে গঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠকের পর কমিশন কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ারউল হক এই সিদ্ধান্ত জানান।

গতকাল রোববার রাঙামাটি সার্কিট হাউজে কমিশনের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জানানো হয়, ইতোমধ্যে কমিশনে ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত অন্তত ১৫ হাজার ৯৬৯টি আবেদনপত্র কমিশনের খাগড়াছড়ি কার্যালয়ে জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই বাচাই চলছে। নির্ধারিত ৪৫ দিনের মধ্যেও যারা ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত আবেদন কমিশনে জমা দিতে পারেননি বা ব্যর্থ হয়েছেন তারা চাইলে কমিশনে অভিযোগ দিতে পারবে।

এ সময় কমিশন চেয়ারম্যান আরো জানিয়েছেন, কমিশনের কাজের গতিশীলতা আনার জন্য দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রাপ্ত আবেদনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমা পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে রাঙামাটি এবং সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান পার্বত্য জেলা। রোববার সকাল পৌনে ১১ টায় সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের বৈঠক শুরু হয়।

এদিকে বৈঠক শেষে কমিশনের সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেছেন, কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আজকের বৈঠকে কমিশনে জমা পড়া আবেদনের উপর আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু জনবল না থাকায় এসব আবেদন যাচাই বাছাই করা সহজ নয়। তাই সরকারের কাছে কমিশন জনবল নিয়োগসহ বিধি প্রনয়ণে তাগিদ দিয়েছে।

চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ও জনবল নিয়োগ দেয়া এখন জরুরি জরুরী উল্লেখ করে বলেছেন, বিভিন্ন ধরণের আবেদনপত্র জমা পড়েছে। যেসব আবেদন বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো আগে নিষ্পত্তি করা হবে।

দেবাশীষ রায় আরো বলেন, কমিশনের কাজ আইন অনুযায়ী হবে। আইনের বাইরে কেউ যাবে না। এতে কারোর প্রতি বৈষম্য করা হবে না। বৈষম্যর কোন সম্ভাবনাও নেই। তিনি বলেন কমিশন মনে করে জনবল ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা নাহলে কমিশনের কাজ সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।

বৈঠকে পার্বত্য ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারউল হকের সভাপতিত্বে কমিশনের ৯ সদস্যের মধ্যে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, মং সার্কেল চীফ সাচিং প্রু চৌধুরী, বোমাং সার্কেল চীফ উচো প্রু চৌধুরী, রাঙমাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি মোমিনুর রশীদ আমিন উপস্থিত ছিলেন।

তবে রোববারের বৈঠকে কমিশন সদস্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী যোগ দেননি।

এদিকে এ বৈঠকের প্রতিবাদ, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬ বাতিলের দাবিতে পাহাড়ের পাঁচ বাঙালী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য গণপরিষদ, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য বাঙালী ছাত্র ঐক্য পরিষদের ডাকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক অবরোধ কমূর্সচি পালিত হয়েছে।

অবরোধের কারণে রাঙামাটি শহরে অভ্যন্তরে ও দূর পাল্লার যাত্রীবাহী কোন যানবাহন চলাচল করেনি। অবরোধ ও ভূমি কমিশনের বৈঠককে ঘিরে শহরের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টগুলোতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার ছিল।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যতম প্রধান সমস্যা ভূমি বিরোধ। ভূমি বিরোধের বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা চিহ্নিত করে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির আলোকে ২০০১ সালে গঠন হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন। আইনের কয়েকটি বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের আপত্তির মুখে জনসংহতি সমিতি জেএসএস’র সুপারিশে এই আইনের ১৩টি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

যা গত ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশ আকারে গেজেট প্রকাশ হয়। এটি গত ৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন আকারে পাস হয়। এই আইনে কিছু ধারা বিতর্কিত উল্লেখ করে এগুলো বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে পাহাড়ের বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।

চলমান আন্দোলনের মধ্যেই এ আইনটি পাস হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দেয় স্থানীয় বাঙালী জনগোষ্ঠির মধ্যে। বাঙ্গালি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য হলো বহুল বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনটি কার্যকর হলে তারা ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

এর প্রতিবাদে তারা হরতাল অবরোধের মতো আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে।