॥ আলমগীর মানিক ॥
কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই পাহাড় উজাড় করে রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করা হয়েছে কোটি টাকার জ্বালানী কাঠ।
বন আইন অমান্য করে রাঙামাটির দূর্গম এলাকার পাহাড়গুলোকে ন্যাড়া করে পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় নেমেছে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়িদের একটি সিন্ডিকেট। আঞ্চলিক দলীয় এক নেতার আর্থিক সহযোগিতায় পাঁচজনের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে জ্বালানী কাঠ পাচারের এই অবৈধ রমরমা ব্যবসা।
এই চক্রটির মাধ্যমে প্রতিদিন পাচার হওয়া কাঠ ভর্তি তিন শতাধিক গাড়ি হতে চাঁদা হিসেবে আদায় করা হয় অন্তত পাঁচ লাখ টাকা। সূত্রমতে এসব চাঁদা বিভিন্ন সেক্টরের মাঠকর্মীদের ম্যানেজের জন্য ব্যয় করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মানিকছড়িস্থ পুরাতন ব্রীজের ওপারে মসজিদ ঘাট রুটস্থ কাপ্তাই হ্রদ ঘেষা বিশাল এলাকাজুড়ে প্রকাশ্যেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে এই বিপুল পরিমান জ্বালানী কাঠ। যার অধিকাংশই কর্তন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ চারা গাছের টুকরো। এসব কাঠের বাজার মূল্য কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সাধারণ ব্যবসায়িরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকছড়ির কয়েকজন অবৈধ ব্যবসায়ি ও রাণীর হাট এলাকার একটি চক্র মানিকছড়ি দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বা রাতের আঁধারে পাচার করছে লক্ষ লক্ষ টাকার জ্বালানী কাঠ। পাহাড় ধ্বংস করে অবৈধভাবে সংগ্রহ করে মজুদ করা এসব জ্বালানী কাঠ রাতের অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয় রাঙ্গুনিয়া-রানীরহাট ও রাউজানের ইটের ভাটাগুলোতে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পাঁচ জনের একটি সিন্ডিকেট চক্র (যাদের নামের শেষ অক্ষর হলো- জ, ছ, ন, প ও ম) মানিকছড়ি থেকে ইটভাটাগুলোতে কাঠ পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত। এই চক্রটির মাধ্যমেই প্রতিদিন রাত দুইটা থেকে চাঁদের গাড়ির মাধ্যমে কাঠ পাঁচার শুরু হয়। পরের দিন দুপুর তিনটা পর্যন্ত চলে এই প্রক্রিয়া।
দিনের বেলায় হাতে গোনা কয়েকটি কাঠভর্তি গাড়ির টিপি (বিশেষ অনুমোদনপত্র) প্রদর্শন করা হলেও রাত থেকে দুপুর অব্দি অন্তত তিনশো চাঁদের গাড়ির মাধ্যমেই অর্ধলক্ষ ফুট জ্বালানী কাঠ পাচার হয়। এসব কাঠ পাচারে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে ওই সিন্ডিকেট।
কাঠ ব্যবসায়িদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানায়, প্রতিটি গাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজের জন্য আদায় করা হয় ১৭শ’ টাকা। প্রতিদিন পাচারকৃত জ্বালানী কাঠ থেকে এই চক্রটি আদায় করছে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা। জানা গেছে, এই টাকা আদায় ছাড়াও আঞ্চলিক দলের জন্য কাঠ পাঁচারে ব্যবহৃত প্রতিটি চাঁদের গাড়ি ও প্রতিজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে নেওয়া হয় এককালীন সর্বমোট ১২ হাজার টাকা।
সাধারণ ব্যবসায়িদের অভিযোগ, ২০১৩/১৪ সালের টিপির বিপরীতে এসব কাঠ মজুদ করে রাখা হয়েছে বলে ফলাও করে প্রচার করা হলেও মূলতঃ এসব কাঠের প্রায় সবগুলোই অবৈধভাবে সংগৃহীত। সূত্রটি আরো দািব করে প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে ৮০ফুট জ্বালানী কাঠ নিয়ে যাওয়ার কথা টিপিতে উল্লেখ থাকলেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৭০ ফুট কাঠ। তার আবার অবৈধ পন্থায়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন, ভাই আমি দায়িত্ব নিয়েছি বেশিদিন হয়নি। এছাড়া দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি মাত্র কয়েকটি টিপি ছাড় করেছি। অবৈধভাবে কাঠ পাচারের ব্যাপারে সুষ্পষ্ট তথ্য নেই আমাদের কাছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন বনকর্মকর্তা জানিয়েছেন, সকাল থেকে রাত এগারো টা পর্যন্ত বনবিভাগের লোকজন ডিউটি পালন করে থাকে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তাহীনতার কারনে রাতের পুরো সময় দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা বনবিভাগের লোকজন।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র অবৈধ কাঠ পাচার করে আসছে। এই চক্রটির রয়েছে সুবিশাল বাহিনী। যাদের সদস্যরা রাতের বেলায় রাউজান থেকে মানিকছড়ি পর্যন্ত বিশেষ ডিউটি পালন করে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙিয়ে এই অপকর্ম করে যাচ্ছে একটি চক্র। অথচ উক্ত নেতা বিষয়টি হয়তো জানেনই না। “স’’ দিয়ে শুরু একজন আঞ্চলিক দলীয় নেতা উক্ত কাঠ মজুদে ব্যয় করেছেন অন্তত অর্ধকোটি টাকা। এই নেতার প্রত্যক্ষ মদদেই উক্ত পাঁচজনীয় সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে অবৈধ জ্বালানী কাঠের রমরমা ব্যবসা। এই চক্রটির মাধ্যমেই প্রতিদিন পাচার হওয়া তিন শতাধিক চাঁদের গাড়ি থেকে আদায় হচ্ছে অন্তত ৫ লক্ষাধিক টাকা।