মাহে রমজানের শিক্ষা বনাম ঈমান আক্কীদা ও নাস্তিক্য ধারণা

316

॥ আনোয়ার আল হক ॥

আজ মাহে রমজানের ২৪তম দিন। এ মাসে সিয়াম পালন মুসলমানদের জন্য অবশ্য ও অপরিহার্য কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ব্যবহৃত বাক্যাংশ ‘কুতিবা আলাইকুম’ অর্থাৎ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মুসলিম নর-নারীদের জন্য শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া রমজানের সিয়াম পালন এড়ানোর সুযোগ নেই। এই অপরিহার্যতা বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া সবার প্রথম কর্তব্য। এরই নাম আক্কিদা। কারো অসুবিধা থাকতে পারে, এমনকি আলসেমিও থাকতে পারে। কিন্তু শরিয়তের বিধান পালন যে অপরিহার্য, তা বিশ্বাস রাখতে হবে। কারণবশতঃ কর্তব্য ছাড়লে শাস্তি বা জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পাওয়া যেতেও পারে। উদাসীনতার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে। কিন্তু বিশ্বাসের দুর্বলতা ক্ষমার অযোগ্য।

ইসলামের পাঁচটি বিষয়কে বুনিয়াদি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ্ ও মুহাম্মদ (দঃ) কে রাসূল হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, সালাত আদায়, জাকাত আদায়, রমজানের সিয়াম ও হজ পালন এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত বলে আল্লাহর নবী সা: ইরশাদ করেছেন। জাকাত ফরজ হয় বিত্তবানদের ওপর। হজও তেমনি। রমজান আসে বছরে একবার। তবে সালাত প্রতিদিনের কর্তব্য। আর ঈমান সর্বক্ষণের জন্য। কিন্তু এ বিষয়গুলো যে শরিয়তের ভিত্তি তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করলে চলবে না। ইসলামের যে বিষয়গুলো অকাট্যভাবে প্রমাণিত, সেগুলোতে সন্দেহ পোষণ করলে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করা যাবে না। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ সিয়াম পালনে অবহেলা গুরুতর অপরাধ নি:সন্দেহে। তবুও অন্তরে যদি সিয়ামের আবশ্যিকতা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তাহলে ইসলামের গন্ডির মধ্যেই থাকা যাবে। কিন্তু নিছক পরিবেশের চাপ কিংবা অন্য কোনো কারণে পানাহার বর্জন করলেও আন্তরিক বিশ্বাসে ঘাটতির কারণে ঈমানদারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। প্রথমত, দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে, রমজান মাসের সিয়াম পালন ফরজ। ঐচ্ছিক মনে করা যাবে না। আল্লাহর রাসূল সা: যেভাবে পালন করেছেন, সেভাবেই তা পালনীয় বলে বিশ্বাস করতে হবে। আভিধানিক অর্থের দিকে খেয়াল করে যদি কেউ সংযমের নতুন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করে, তা যতই কষ্টকর হোক না কেন, সিয়াম বলে গণ্য হবে না। সিয়াম পালনের যে সময়সীমা নির্ধারিত আছে, তা-ও অপরিবর্তনীয়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত এ সময়সীমা যেমন সঙ্কুচিত করা যাবে না, তেমনি সম্প্রসারিতও করা যাবে না। তাই কেউ যদি সুবহে সাদিকের এক ঘন্টা আগে পানাহার বন্ধ করে। আর সূর্যাস্তের এক ঘন্টা আগে ইফতার করে, তাহলে শরিয়তে তা সিয়াম বলে গণ্য হবে না। আবার কেউ যদি সাধনার মাত্রা বাড়ানোর জন্য সূর্যাস্তের এক ঘন্টা পরে ইফতার করার নিয়ম প্রবর্তন করতে চায়, তাহলে তা-ও গ্রহণযোগ্য হবে না। কুরআন মজিদের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির জন্য যে বিধান দিয়েছেন, তার বাস্তব নমুনা পেশ করে গেছেন মহানবী সা:। শাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগের একটি নির্ভরযোগ্য দলের মাধ্যমে তা সংরক্ষিত থেকেছে। কেয়ামত পর্যন্ত সেটাই হবে উম্মতের জন্য পালনীয় ও অনুসরণীয়।

এই বিশ্বাস মনে পোষণ করার নাম আক্কিদা, বিশ্বাসের মধ্যে দোদুল্যমানতার নাম মোনাফেকি, আক্কিদা বিষয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার নাম নাস্তিকতা আর একে অস্বীকার করার নাম কুফরী। এই শব্দগুলো কাউকে আহত বা ভৎসনার জন্য নয়। শব্দগুলো শ্রেফ পরিভাষা (কার পরিচয় কোনটি তা নির্দিষ্ট করা)। কেউ ইসলামকে অস্বীকার করে অন্য কোনো ধর্ম বা আদর্শের অনুসারী হতেই পরেন। আল্লাহ প্রতিটি মানুষের জন্য সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু কেউ নিজেকে মুসলীম হিসেবে পরিচয় দেবেন; সামাজিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন মুসলীম হিসেবে। আর চিন্তা চেতনায় অন্য আদর্শকে প্রাধান্য দেবেন অথবা ইসলামের আক্কীদা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন এই ধরনের আচরণকেই নাস্তিক্যবাদী মানসিকতা বলা হয়, যা মানবতা পরিপন্থী।