রাঙামাটিতে এবার ৪২ পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব

203

॥ আলমগীর মানিক ॥

কাশফোটা ও শিউলি শরতের শারদীয় দূর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে রাঙামাটির মন্দিরগুলোতে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি। দেবীকে স্বাগত জানাতে পাহাড়ের সর্বত্র এখন আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে এখন পাহাড়ে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। এ বছর জেলার ৪২টি মন্ডপে দেবী দুর্গাকে বরণের প্রস্তুতি চলছে।

রাঙামাটি সদরে ১৪টিসহ পুরো জেলায় ৪২টি মন্ডবে রং তুলির ছোঁয়ায় দেবী দূর্গাকে রাঙ্গিয়ে তুলতে ব্যস্ত এখন মৃৎশিল্পীরা। মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। ধর্মীয় উৎসব শেষ করতে সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে রাঙামাটির সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসন। এবারের পূজা যাতে নির্বিঘœভাবে পালন করতে পারে সেলক্ষ্যে অন্তত ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। জেলায় পুজোকালীন সময়ে সার্বক্ষনিক দায়িত্বপালন করবে প্রায় সাড়ে তিনশো পুলিশ সদস্য। পুলিশের নিজস্ব পোশাক পরিহিত একটি টিম, সাদা পোশাক, ট্রাফিক, মোবাইল টিম ও ষ্ট্রাইকিং ফোর্স এই পাচঁ ক্যাটাগরিতে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে বলে জানাগেছে।

রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহমুদা বেগম জানিয়েছেন, গতবছরের চেয়ে এবছর আরো নিরাপদ ও নির্বিঘœ পরিবেশে দূর্গোৎসব পালনে নিরাপত্তাজনিত যাবতীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। তিনি জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে ওয়ান টু ওয়ান কথা হচ্ছে। জেলা পুলিশের উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণসহ প্রত্যেকটি থানার উদ্বর্তন কর্মকর্তারা প্রতিটি পূজা মন্ডপ ভিজিট করে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এছাড়াও এক্সট্টা অনেক ফোর্সকে প্রস্তুত রাখা হবে যাতে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই এদেরকে কাজে লাগানো হবে।

এদিকে, দূর্গা পূজায় জেলা পুলিশের সাথে রাঙামাটির অতিগুরুত্বপূর্ণ পূজা মন্ডপগুলোর প্রতিটিতে ৮ জন, গুরুত্বপূর্ন মন্ডপের প্রতিটিতে ৬ জন এবং সাধারণ পূজো মন্ডপে ৪জন করে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য দায়িত্বপালন করবে বলে জানিয়েছেন, রাঙামাটি জেলা আনসার কমাড্যান্ট ফয়জুল বারী। তিনি জানান, আমরাদের পক্ষ থেকে মন্ডপগুলোর পাশাপাশি ট্রাফিক ও ষ্টাইকিং ফোর্সের দায়িত্বেও ব্যাটালিয়ন সদস্যরা দায়িত্বপালন করবে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে আগমন ঘটেছিল মর্ত্যলোকে। এরই ধারাহিকতায় দূর্গাপূজাকে স্বার্থক করতে হিন্দু সম্প্রদায়সহ পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন শারদীয় প্রহর গুনছে। সবমিলিয়ে রাঙামাটিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি পূজামন্ডপে।
এবছর দূর্গোৎসব পালনে রাঙামাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্তিতির সার্বিক বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাঙামাটি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনতোষ মল্লিক। তিনি জানান, আমরা উৎসবমূখর পরিবেশেই ধর্মীয় উৎসব পালন করি এ ক্ষেত্রে প্রশাসন আমাদের যথেষ্ট সহায়তা করে আসছে। তিনি বলেন, আমাদের পূজা পালনে এবছর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকেও যথাসময়ে মন্দিরগুলোতে বিশেষ বরাদ্ধ প্রদান করেছে। এছাড়াও এবছর রাঙামাটির কোথাও কোনো ধরনের হুমকি বা ঝূকিঁপূর্ণ পূজা মন্ডপ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উৎসবপ্রেমী সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো। দুর্গা পূজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। গজে চড়ে দেবী দূর্গার আগমন ধ্বনি বেজে গিয়েছে পাহােড়র আকাশে বাতাসে। উৎসবপ্রিয় পাহাড়ের মানুষের মাঝে শারদীয় দূর্গোৎসবের মাধ্যমে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, সম্মৃদ্ধি ও সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।