॥ শহিদুল ইসলাম হৃদয় ॥
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে সরকারের অঘোষিত লকডাউন এবং এর পরবর্তী সময়ে রাঙামাটির আপাময় জনগণের মাঝে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে করোনার সতর্কতামূলক নির্দেশনার কোনোটাই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না বলা চলে। তারই রাঙামাটি জেলা পুলিশের উদ্যোগে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সড়কে চলাচলরত জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে হেলমেট বিহীন মোটর সাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে শহরের রিজার্ভবাজার নতুন বাস স্টেশন, দোয়েল চত্বর ও বনরুপাতে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার ও মোটর সাইকেল আরোহীদের হেলমেট পরিধান শতভাগ নিশ্চিত করতে রাঙামাটি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
এতে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত খান নুরুল ইসলাম, ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ ইসমাইল, কোতয়ালী থানার এসআই ওসমান গণি, ট্রাফিক সার্জেন্ট পরবিল কুমার নাথ।
এসময় রিজার্ভ বাজার নতুন বাস স্টেশন এলাকায় ৯ জন, দোয়েল চত্বরে ১ জন ও বনরুপায় ২ জনসহ মোট ১২ জন হেলমেট বিহীন মোটর সাইকেল চালককে ৯২ এর ১ উপধারায় মামলা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ ইসমাইল।
অপরদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল আপামর জনসাধারণকে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক ও মানুষকে করোনা কালে মাস্কের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান দিতে বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করেছেন রাঙামাটি জেলার পুলিশ প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে শহরের মূল সড়কের কয়েকটি স্থানে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর পিপিএম-সেবার নির্দেশনায় ও রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেনের নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ ইসমাইল, রাঙামাটি কোতয়ালী থানার এসআই অরুপসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা।
এবিষয়ে, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেনের বলেন, আমরা করোনার শুরু থেকে জেলার মানুষ মাস্ক পড়ে যাতে ঘরের বাহির হয় তার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছি এবং মোটর সাইকেল আরোহীরা যাতে হেলমেট পরিধান করে মোটর সাইকেল চালাই তার জন্যও আমরা তৎপরতা চালিয়ে আসছি। তারই অংশ হিসাবে আমরা এই অভিযান পরিচালনা করেছি। রাঙামাটি জেলা যেহেতু পর্যটন বান্ধব এলাকা সেহেতু এখানে আগত পর্যটক ও স্থানীয় সকল মানুষ যাতে করে মাস্ক পড়ে চলাফেরা করে এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে আমাদের মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তারা আজ মাঠে থেকে এই অভিযান পরিচালনা করেছে।
তার পাশাপাশি রাঙামাটি যেহেতু পাহাড়ি এলাকা এখানে মোটর সাইকেল যোগে মানুষ ঘোরাফেরা করার সময় হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা না হওয়ার কথা চিন্তা করে সকল মোটর সাইকেল আরোহী যাতে হেলমেট পড়ে মোটর সাইকেল চালায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাদেরকে হেলমেট ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী করতে মোটর সাইকেল চালকদেরকে নামিয়ে গাড়ি আটকে রেখে বাসা থেকে হেলমেট নিয়ে এসে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে, রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বাহির হলেই হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক সম্পর্কে জানান দিয়ে করোনার সচেতনাতার পাশাপাশি এই কাজও আমরা করছি।
কোতয়ালী থানার এসআই ওসমান বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতই সকল প্রকারের যান চলাচল থাকলেও অনেকের মুখে মাস্ক না থাকায় কিংবা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা গুলো মানুষের মাঝে দেখতে না পাড়ার কারণে যারা মাস্ক বিহীন ঘোরাঘুরি করছে বা গণপরিবহনে যাতায়াত করছে তাদেরকে মাস্ক পড়ে চলাফেড়া করতে আমরা আগ্রহী করার পাশাপাশি যে সব পথচারী মাস্ক পকেটে রেখে অবাধে চলাচল করছে তাদেরকেও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি এবং এখানকার সিএনজি, বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল ইত্যাদি চালক ও যাত্রীদেরকেও এবিষয়ে অবগত করছি।
এদিকে রোববার (৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত রাঙামাটি জেলার মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় করোনা মহামারি থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ “নো মাস্ক নো সার্ভিস” মন্তব্য কর জেলা প্রশাসক সভাপতির বক্তব্যে আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছে, শীতের প্রকোপ দেখা দিলে আমাদের দেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। মরণঘাতী এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে হলে আমাদের নিজেদের প্রোটেকশন নিজেদেরকেই নিতে হবে। নিজেদেরকে সুরক্ষা করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে স্বাস্থবিধি মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বা হাত ধোঁয়া।
তিনি আরো বলেন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে “নো মাস্ক নো সার্ভিস” এর। তাই আমাদের রাঙামাটিতেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহ ব্যাংক, বাজার, দোকানে দায়িত্বরতরা একযোগে যদি জনগণের মাঝে একটি বিষয় ফুটিয়ে তুলতে পারি যে আমরা মুখে মাস্ক পড়া ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে সেবা বা সার্ভিস দিবোনা। তাহলে জনগণের মাস্ক পরিধান ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ থাকবে না। দেশের এই দুর্যোগময় সময়ে আমরা সকলে এক হয়ে কাজ করলে আমরা রাঙামাটি জেলাকে করোনা মুক্ত রাখাসহ দেশ থেকে করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে সক্ষম হবো।