রাঙামাটিতে শিশু ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড

96

॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥

রাঙামাটিতে শিশু ধর্ষণ মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুই লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল। আসামীর নাম রুবেল, তার বাড়ি জেলার লংগদু থানাধীন গাউছপুর মাস্টার পাড়া। বুধবার সকালে এই রায় ঘোষণা করেন রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল এর বিজ্ঞ বিচারক এ. ই. এম. ইসমাইল হোসেন। ২০১৬ সালে করা লংগদু থানার জিআর মামলা নং ৩২৩/১৬ এর যাবতীয় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

রায়ে বলা হয়, আসামীর জবানবন্দী, দালিলিক ও ফরেনসিক সাক্ষ্য এবং ১৬জন সাক্ষীর মৌখিক সাক্ষ্য থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হয়েছে যে, আসামী রুবেল মামলায় বর্ণিত তারিখে ৯ বছর বয়সী একজন শিশুকে ধর্ষণের মাধ্যমে রক্তাক্ত জখম করে। শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারা মোকাবেক দোষী সাব্যস্ত রুবেলকে তাই যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করা হলো।

একই সাথে ভিকটিমে ক্ষতিপুরণের জন্য দুই লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন বছরের কারাদন্ড অথবা ওই আইনের ১৬ ধারার বিধান অনুযায়ী সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ যুক্ত রয়েছে।

রায়ের সারাংশ থেকে জানা যায়, ভিকটিম ঘটনার সময় ৯ বছর বয়সের শিশু ছিল। সে তার খালুর সাথে মামাবাড়ী যাওয়ার জন্য বের হলে খালু ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল এর চালক আসামী রুবেলের বাইকে যাত্রী হিসেবে তুলে দিয়ে গাউছপুর মাস্টারপাড়া পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানায় এবং ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করে দেয়।

কিন্তু বাইক চালক রুবেল তাকে গন্তব্যে না নিয়ে মাঝপথে জঙ্গলে ঢুকিয়ে পাষবিক নির্যাতন চালায়। ধর্ষণের অত্যাচারে মেয়েটির প্রচন্ড রক্তক্ষরণ শুরু হলে রুবেল তাকে মহাজন পাড়ায় ফেলে পালিয়ে যায়। লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটির দাদী প্রথমে ঘটনা কাউকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেও এক পর্যায়ে আহত মেয়েটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়।

এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন মোটর সাইকেল চালক রুবেলকে সনাক্ত করে গণপিটুনী দেয়। তাকে চেপে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে দোষ স্বীকার করলে মামলার সূত্রপাত ঘটে।

এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী অবশ্য বলেন আমরা আদালতের এই রায়ে ক্ষুব্ধ, তিনি বলেন, মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষনের ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়, তারপরও আমরা বাদি-বিবাদী আদালতে আবেদন করেছিলাম, বিজ্ঞ আদালত আজ আমাদের সেই আবেদনটি অস্বীকার করেছেন। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো এবং আশা করছি সেখান থেকে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট দায়ের করা মামলার সাড়ে তিনমাসের মধ্যেই পুলিশ চার্জসিট প্রদান করতে সক্ষম হয়। প্রায় সাত বছরের দীর্ঘ শুনানীশেষে অবশেষে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হলো। এই রায় অপরাধীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করে সাধারণ মানুষ।