রাঙামাটির পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষে সফলতা লাভ : প্রয়োযন সরকারি উদ্যোগ

529

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

মো: শফিকুর রহমান, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : রাঙামাটির পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন বেশ কিছু উদ্যোমী চাষি। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বেশ আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা যায় লতানো ক্যাকটাসের মতো দেখতে ড্রাগন গাছগুলো ফলেফুলে সুশোভিত হয়ে আছে। উদ্যোক্তারা জানায় এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার; যা পেটের পীড়া বা লিভারের জন্য উত্তম। ফল পাকলে টকটকে লাল দেখায়। ফল খেতে খুব সুস্বাদু, জুস তৈরিতেও এটি অত্যন্ত উপযোগী।

ড্রাগন ফল চাষের উদ্যোক্তা পলাশ চাকমা জানান, রাঙামাটির সাপছড়ি ইউনিয়নে প্রথমে দশটি ড্রাগন গাছের চারা থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করে এনে শখের বসে চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে ছোট পরিসরে চাষ শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে বাগান বাড়াতে থাকেন তিনি। প্রথমদিকে ফলন কম হলেও বর্তমানে প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে বলে জানালেন তিনি। তার মতে কয়েক বছর যাবত ড্রাগন ফল চাষ করে করে বেশ সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি জানান, রাঙামাটি কৃষি বিভাগ থেকে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। ড্রাগন ফলের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। চাষ করে তিনি যেহেতু সফলতা পেয়েছেন সেহেতু রাঙামাটির মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী জানান এই চাষি।

রাঙামাটি সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা জানান, রাঙামাটির মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগল ফলের চারা রোপণ পদ্ধতি নিয়ে তিনি জানান, প্রতিটি মাদায় অবশ্যই একটি পিলার অথবা শক্ত গাছ পুঁতে দিতে হবে। প্রতিটি মাদা রোপনের আগে ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম এম.ও.পি, ৩০০ গ্রাম টি.এস.পি এবং ৩০ গ্রাম বোরন সার মাটির সাথে মিশিয়ে ১০/১২ দিন পর রোপন করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন লিটার পানি একবারে দিলে চলে। প্রতি বছর ফল কর্তনের পর অবশ্যই মাদা পরিস্কার করে একবার গোবর ও রাসায়নিক সার পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। উঁচু জমিতে যেখানে পানি জমে না সেখানে ড্রাগন ফলের চাষ ভালো হয়।

ড্রাগন ফল বাগানে পরিচর্যা ও দেখাশোনা করেন ইমন চাকমা তিনি বলেন, ড্রাগন ফলের গাছে পরিমিত পরিমাণে পানি দিতে হয়। ঠিকমতো গাছের পরিচর্যা করা লাগে। ড্রাগন ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ। ফলটি পাকলে টকটকে লাল হয়। ফল খেতে খুব সুস্বাদু। ড্রাগন গাছের প্রতিটি চারা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। অনেকে বাগান থেকে পাঁকা ড্রাগন ফল কিনে নেয়। এ সব ফল প্রায় ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। এখানকার ড্রাগন ফল দোকানেও ভালো বিক্রি হয়।

কৃষি তথ্য সার্ভিস এর তথ্য মতে, ড্রাগন ফল এর পুষ্টিগুণ রয়েছে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত। ফলে ফাইবার, ফ্যাট এ্যাস, ক্যারোটিন, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে। ফলটি পেটের পীড়া বা লিভারের জন্য উত্তম। একটি তাজা ফল খেয়ে মানব শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখা যায় বলে রেওয়াজ রয়েছে। ড্রাগন ফল ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীদের শরীরের রক্তের গ্লুুকোজকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জুস তৈরিতে এ ফলটি অত্যন্ত উপযোগী।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান